আওয়ার ইসলাম: আমার একমাত্র মেয়ে নুসরাত। সেদিন সে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল, আর তার সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমার ভিতরে কি চলছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। মেয়ে হারানোর বেদনায় কলিজায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আমি এর ন্যায়বিচার চাই।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সামনে এভাবেই কথাগুলো বলেন দুর্বৃত্তের আগুনে দগ্ধ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির বাবা মাওলানা কে এম মুসা।
মাওলানা কে এম মুসা বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সকলেই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আপনাদের সবার কারণে আমার মেয়ের এই পরিণতির কথা সবাই জানতে পেরেছে।
তিনি আরও বলেন, সেই দিন আমার মেয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল, কিন্তু সেই দিনই আমার একমাত্র মেয়ের সাথে এ ঘটনা ঘটেছে। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, কি বলব জানি না। আমাদের ভিতরে যে কি চলছে তা আমি বুঝাতে পারছি না। আমার কলিজায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ইতমধ্যেই আমরা মেয়ের বিষয়ে সকল কিছুই প্রকাশিত হয়েছে। আমার দাবি দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার যেন হয় দায়ীদের।
এর আগে আজ সকাল ৯টায় নুসরাতের লাশ মর্গে নেয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। এছাড়া ইতোমধ্যে নুসরাতের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
এর আগে, বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা মারা যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে যৌন হয়রানি করেন। এ অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় তার এ করুণ পরিণতি বলে জানা যায়।
গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান।
সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে রাফির ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সোমবার রাতে এজাহারে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। অন্য আসামীরা হলেন পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।
ইতিমধ্যে ওই মামলার তিন আসামী সহ অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা সহ ৭ জনকে রিমান্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া তাকে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ থেকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্তব্য অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকেও প্রত্যাহার করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এমএম/