আওয়ার ইসলাম: গোলান মালভূমির নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ট্রাম্পকে প্রশ্ন রেখে বলেন, কার ভূমি তুমি কাকে দিচ্ছ, ট্রাম্প? জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী এই জমি তো সিরিয়ার।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে ইস্তানবুলে র্যালি শেষে গোলান মালভূমির ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের স্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে এসব কথা বলেন তিনি।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, গোলাম মালভূমি ইসরাইলের বলে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই স্বীকৃতি দেয়ার আগে শুক্রবার ওআইসির এক জরুরি সভায় যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেন এরদোগান।
তিনি বলেন, গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের দখলদারিত্ব তুরস্ক কোনো দিনই মেনে নেবে না। ৯ এপ্রিল ইসরায়েলের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গোলানকে ইসরাইলের স্বীকৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফের ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দেয়া হলো।
যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র রাষ্ট্র যে কিনা গোলানকে ইসরাইলের স্বীকৃতি দিল। গোটা বিশ্ব এটিকে দখলীকৃত ভূমি হিসেবেই জানে।
উল্লেখ্য, সোমবার ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে গোলান মালভূমি ইসরাইলের ভূখণ্ড এ ঘোষণাপত্রে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইল এ জায়গাটি সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন- যুক্তরাষ্ট্র জেনেছে গোলান ইসরাইলের সার্বভৌম।
আর এ কারণেই গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ৫২ বছর পর গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বে স্বীকৃতি দেয়ার সময় এটিই।
মালভূমিতে বর্তমানে ২০ হাজার অবৈধ দখলদার বসবাস করছেন। কাজেই এ দখলদারিত্ব কখনই বিশ্ব সম্প্রদায় স্বীকৃতি দিতে পারে না। এদিকে ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনা ও নিন্দা জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ব সম্প্রদায় ট্রাম্পের স্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর মধ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, ফ্রান্স, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ইরান, রাশিয়াসহ, বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে।
১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। সেই সময় ইহুদিবাদী বাহিনী ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকারও নিয়ন্ত্রণ নেয়।
পরে ১৯৮১ সালে গোলান মালভূমিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল কখনই ইসরাইলের এই দাবির স্বীকৃতি দেয়নি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গোলান মালভূমির মালিকানা সংক্রান্ত এক ভোটাভুটি হয়।
সেখানে উপস্থিত ১৫৩ দেশের মধ্যে ১৫১ দেশ এ ভূখণ্ডের মালিকানা সিরিয়ার বলে স্বীকৃতি দেয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রস্তাবটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
তা সত্ত্বেও গোলানবাসীর ওপর ৫২ বছর ধরে ইহুদিবাদী দখলদারিত্ব আর অত্যাচার একটুও কমেনি; বরং বেড়েই চলছে।
ট্রাম্পের এই স্বীকৃতির প্রশংসা করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, গোলানের এই স্বীকৃতি ঐতিহাসিক। সিরিয়া এতদিন এটিকে নিজের দাবি করলেও এটি ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। আমরা কখনই এটি ছাড়ব না।
‘ইসরায়েল আত্মরক্ষার এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গোলান জয় করেছে। এখানে রয়েছে ইহুদিদের হাজার বছরের শেকড়। কোনোভাবেই গোলান বেহাত হতে দেবেন না ইসরায়েল।’
এদিকে সিরিয়া এ ঘটনাকে দেশটির সার্বভৌমত্বের প্রতি ট্রাম্পের অবমাননা হিসেবে অভিহিত করেছে। সম্ভাব্য যে কোনো মূল্যেই গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটি।
আরএইচ/