সুফিয়ান ফারাবী
ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক
হাদিসচর্চায় নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে পৃথিবীর শীর্ষ বিদ্যালয়গুলোতে। হাজার হাজার ছাত্র প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পর এসব দরসে বসার সুযোগ লাভ করছে।
হাদিসের দরসগুলোতে সাধারণত বিশেষ পারদর্শিতাসমপন্ন অধ্যাপক বা শায়েখগণ ক্লাস নিয়ে থাকেন। শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাদিসের ক্লাস পাওয়া নেয়ামত স্বরূপ। দীর্ঘদিন তাদরিসের সাথে যুক্ত থাকার পরই কেবল সম্মানজনক এ পদে নিয়োগ পান মুহাদ্দিসগণ।
আর যে প্রতিষ্ঠানের শায়েখ যত বেশি প্রসিদ্ধ সে-প্রতিষ্ঠানের সুনামও দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত। হাদিসের জন্য আরব বিশ্ব বেশি প্রসিদ্ধ হলেও পিছিয়ে নেই ভারত উপমহাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোও। বিশ্বমানের হাদিসের দরস উপমহাদেশেও রয়েছে এবং এর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। উপমহাদেশের এরকম পাঁচটি প্রসিদ্ধ হাদিসের দরসের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
দারুল উলুম দেওবন্দ
ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভারতের উত্তর প্রদেশে সাহারানপুর জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব বিখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটি। বলা হয় উপমহাদেশের আল আজহার হলো এই দেওবন্দ।
এই জামেয়ায় দাখেলাপ্রাপ্ত তাকমিল শিক্ষার্থী প্রায় দেড় হাজার। এছাড়াও আরও দেড় হাজার ছাত্র দাখেলা ছাড়াও সেখানে পড়াশোনা করেন। আমেরিকা, সৌদি, নেপাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ছাত্ররাও স্থানীয় ছাত্রদের সাথে পড়াশোনা করেন।
সহীহ বুখারীর দরস প্রদান করেন শাইখুল হাদিস আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরী।
জামিয়া আহ লিয়া মঈনুল ইসলাম হাটাজারি
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রাচীন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৬ সালে । এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম শিক্ষার অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান।
দাওরা হাদিসে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী একসাথে দরস গ্রহণ করতে পারেন। কেউ কেউ এ প্রতিষ্ঠানকে উম্মুল মাদারিসিনও বলে থাকেন। বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বি আল্লামা আহমদ শফী বুখারীর দরস প্রদান করেন।
দারুল উলুম করাচী
দেওবন্দের নেসাব ও কারিকুলাম অনুসরণ করে পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার নাম দারুল উলুম করাচি। হাদিসের দরসের জন্য দেওবন্দ প্রসিদ্ধ হলেও সৌন্দর্যতা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দিক থেকে দারুল উলুম করাচি প্রসিদ্ধ। পাকিস্তানে এ ধারার শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
একসঙ্গে দেড় হাজার ছাত্র দরসে বসতে পারে। এছাড়াও দরুল উলুম করাচীর সু বিশাল মনোরম ক্যাম্পাস এ জামেয়াকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। কেউ বলে থাকেন, এটিই উপমহাদেশের সবচেয়ে বিশাল ক্যাম্পাস।
আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন মুফতি আজম আল্লামা শফি। যিনি মাআরিফুল কুরআন তাফসির গ্রন্থের প্রণেতা। বর্তমানে মাদরাসার মাদরসার প্রিন্সিপাল (মুহতামিম) মুফতি রাফে উসমানি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মুফতি তাকি উসমানি।
জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান যাত্রাবাড়ীতে এর অবস্থান। মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা মাহমুদুল হাসান এ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত দরস প্রদান করেন। ছাত্রদের পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় মাদরাসার পক্ষ থেকে।
এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিমাসেই নিয়মিত মজলিশে দাওয়াতুল হকের কার্যক্রম চলে আসছে বহু বছর ধরে। মাওলানা মাহমুদুল হাসানের সু প্রসিদ্ধির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্ররা এখানে আসেন। চলতি বছরে ১৯০০ ছাত্র তাকমিল পড়ছেন।
জামিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ
এটি বাংলাদেশে অবস্থিত। প্রতি বছর এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১১০০-১২০০ ছাত্র আলেম হয়ে বের হয়।নিয়মিত বুখারীর দরস প্রদান করেন আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস ও মাওলানা নুরুল আমিন। এছাড়াও আল হাইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা আহমদ শফি একমাস পরপর এসে ঘন্টা করিয়ে যান। তখন ঢাকা ও তার আশপাশের ছাত্র ও উস্তাদগণ ভিড় জমায় ফরিদাবাদে।
এতে কিছু সময়ের জন্য হলেও ভিন্ন অনুভূতি বিরাজ করে পুরো জামেয়া জুড়ে। ঢাকাস্থ দেশের শীর্ষ আলেমগণের মারকাজ বলা যায় এ প্রতিষ্ঠানকে।
এআর