কৌশিক পানাহি: ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের পুলওয়ামার যে জায়গায় সিআরপিএফের কনভয় লক্ষ্য করে হামলা হয়েছিল, তার থেকে ১৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত আঁচন নামক একটি গ্রাম। মুসলিম অধ্যুষিত এই গ্রামে একমাত্র হিন্দু হিসেবে রয়েছেন কাশ্মীরি পণ্ডিত ভূষণ লাল এবং তার পরিবার। এই পরিবারের সদস্যদের মতে, তাদের মুসলিম পড়শিরা নিকটাত্মীয়ের চেয়েও বেশি আপন।
সম্প্রতি এই গ্রামের বাসিন্দারা হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য ছবি তুলে ধরছেন। ৮০ বছরের পুরোনো ভগ্নপ্রায় একটি মন্দিরকে আবার নতুন রূপে সাজিয়ে তুলতে ভূষণের পরিবারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মুসলিমরাও।
বহু বছর ধরে ভগ্ন অবস্থায় ছিল এই মন্দির। কয়েক মাস হল মন্দিরটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার কাজে নেমেছেন গ্রামবাসীরা। তবে পুলওয়ামা হামলার পরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কাশ্মীরিদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার পরে মন্দিরের কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল। ফের শিবরাত্রির দিন থেকে তা শুরু হয়েছে।
শিবরাত্রি উপলক্ষে এই মন্দিরে যত দর্শনার্থী এসেছেন, তাদের সবাইকে কাশ্মীরি ‘কাওহা’ চা খাইয়েছেন মুসলিমরা। মুহাম্মদ ইউনুস নামক এক গ্রামবাসী বলেন, “আমাদের স্বপ্ন আবার তিরিশ বছর আগের ছবিটা গ্রামে ফিরে আসুক; যখন মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গেই বেজে উঠতো মসজিদের আজান।”
১৯৯০ সালে উপত্যকা থেকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিতাড়িত করা হলেও এখানেই থেকে গিয়েছিলেন ভূষণ লাল। মন্দিরের ভগ্ন দশা দেখে মসজিদ কমিটির কাছে আবেদন করেন তিনি। ভূষণের কথায়, “সবাই এই মন্দিরকে খুব শ্রদ্ধা করে, তাই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আমাদের প্রতিবেশীরা মন্দিরের কাজে হাত লাগিয়েছে।”
নিজের নিকটাত্মীয়ের থেকেও মুসলিম প্রতিবেশীরা তাদের অনেক বেশি আপন, কোনো রাখঢাক না রেখেই বলে দেন ভূষণের ভাই সঞ্জীব কুমার।
পুলওয়ামা মানে শুধুই ধ্বংস, রক্ত নয়। পুলওয়ামা মানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শনও।