রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতি হামলার পর জইশ-ই মুহাম্মদ সেই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। ভারতীয় সরকার ও সেনাবাহিনী বলছে, হামলাকারীরা এসেছে পাকিস্তান থেকে আর এখন সময় এসেছে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার। ওই সংগঠনকে গুঁড়িয়ে দিতে জঙ্গি আস্তানায় ভারতের পাল্টা হামলা করে। পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের ফের হামলা করে। এ সবকিছুর পরিণতিতে আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে উপমহাদেশের রাজনীতি।
বর্তমানে এই চিরবৈরী দুই দেশ পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে । এমন পরিস্থিতে বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন, তবে কি ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ আসন্ন। তবে তাদের মধ্যকার ভয়াবহ যুদ্ধ-ই কি বাস্তবতা! নাকি বাকযুদ্ধ থেকে ঘুরে যাবে এই বৈরি হাওয়ার মোড়?
অতীতে কি হয়েছিলো? আর যা অতীতে যা হয়েছে তা থেকে আসন্ন ভবিষ্যতের ব্যাপারে কি কোনো ফলাফল বের করা যাবে? নিশ্চিত করে তো তাৎক্ষণিক কিছু বলা যাচ্ছে না। অনুমান কিন্তু করা যাচ্ছে বেশ তলিয়ে।
কারগিল যুদ্ধ ছাড়া বিগত দু দশকে এমন পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছে যাতে পাক-ভারত উভয়ই যুদ্ধের প্রায় দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের পার্লামেন্ট এবং ২০১৮ সালে বাণিজ্যকেন্দ্র মুম্বাইতে। উভয় হামলাতেই ভারতে প্রতিশোধের দাবি উঠেছিলো বাঁধ ভাঙা জোয়ারে। পার্লামেন্ট হামলার সময় দেশে বিজেপি সরকার ছিলো ক্ষমতায় আর মুম্বাই হামলার সময় ছিলো কংগ্রেস।
পার্লামেন্ট হামলার পর জোড়ালো অপারেশনের জন্য প্রস্তুত ছিলো ভারত। পরন্তু দু বছর পর উভয় দেশ মিলে যুদ্ধের পরিবর্তে বন্ধুত্বের পরিবেশে একে অন্যের সাথে ক্রিকেট খেলছিলো এবং লাইন অফ কন্ট্রোল হওয়া সত্ত্বেও পূর্বের চুক্তি অনুসারে গোলাগুলি ও তোপকামান দাগানো বন্ধ রেখেছিলো।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক প্রবীন স্বামীর বক্তব্য মোতাবেক সে সময় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে লশকরে তাইয়্যেবার অবস্থানকে কেন্দ্র করে যুদ্ধবিমান ও মিযাইল হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোনমোহন সিং। কিন্তু যখন সেনা ও ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস বললো, তারা জয়ের গ্যারান্টি দিতে পারবে না- তখন তিনি তার এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন।
এবারে লশকরে তায়্যেইবার পরিবর্তে জইশ-ই মোহাম্মদকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরিস্থিতি সেই আগেকার সময়কে অতিক্রম করেনি। দু’দেশের বাকযুদ্ধ চলছে চরমে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো পাল্টাপাল্টি হামলা এবং হতাহতের ঘটনা বিশ্ব মিডিয়াকে নাড়া দিচ্ছে। মনে হচ্ছে, এই বুঝি যুদ্ধ আসন্ন!
কিন্তু ভারত আর পাকিস্তান – পারমাণবিক শক্তিধর এই দুটি দেশের মধ্যকার এ উত্তেজনা কতো দূর গড়াতে পারে ? বালাকোটে হামলার জের ধরে দুটো দেশের সামরিক বাহিনী কি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে?
বালাকোটে চালানো হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তান যেন পুরোপুরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তৎপর হয়েছে।
ভবিষ্যতে কী হবে তা সময়ই বলবে। কিন্তু অতীতে যখন পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়ার আওয়াজ উঠেছিলো তখন এই ধারণা দেওয়ার মানুষও কম ছিলো না যে, উভয়ের কাছে ভারি ও ভয়ানক অস্ত্র বিদ্যমান, পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে এবং সবকিছু উল্টে যেতে পারে ইত্যাদি।
সূত্র: বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ডেইলি পাকিস্তান।