সুফিয়ান ফারাবী
ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক
মানুষের স্থান সবার উপরে। সম্মান, মর্যাদা কোন দিক থেকেই মানুষের উপরে কেউ নেই। কবি বলেছেন, ‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই’।
কথাটি বেশ প্রসিদ্ধ হলেও কখনো কখনো এই মানুষের সাথেই অসম্মান ও লাঞ্ছানামূলক আচরণ ঘটছে। আর এই লাঞ্ছনা করছে অন্য কোনো মানুষই।
১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩১টি অপরিণত নবজাতক শিশুর মৃতদেহ ও ভ্রুণ উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো।
মেডিকেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এগুলো দিয়ে মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেয়া হয়। এজন্যই জারের ভেতর রাখা ছিল।
যদিও চিকিৎসা সেবার জন্য কেউ কেউ সাময়িকভাবে সংরক্ষণকে জায়েজ মনে করছেন, তবুও অপরিণত দেহগুলোকে ডাস্টবিনে ফেলা গুরুতর অন্যায় হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রয়োজনে কিছু সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়৷ কিন্তু একজন মানুষকে এভাবে বোতলজাত করা কোনভাবেই উচিত নয় বলে মনে করছেন বোদ্ধারা।
বিশিষ্ট আলেম ও খতিব, প্রাইভেট মাদরাসা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুফতি নেয়ামাতুল্লাহ আমীন বলেন, বিষয়টি দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। একজন মানুষকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন। অথচ মানুষ তাকে ডাস্টবিনে ফেলছে। বিষয়টি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আমার প্রশ্ন জাগে, যেই মানুষরূপী অমানুষ এ কাজ করেছে, সে কি কোনদিন মৃত্যু বরণ করবে না? সে কি মানুষ না? মানুষ হলে কিভাবে এতো নির্দয় হতে পারে?
তিনি বলেন, বরিশালের সেই হাসপাতালে কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। আমার মনে হয় সেই হাসপাতালের কর্মকর্তারা বাচ্চাগুলোকে চুরি করেছে। তাদের বাবা-মাকে বলেছে হারিয়ে গেছে। আসলে তারাই লুকিয়ে রেখেছিল। তা না হলে মৃত সন্তানদেরও মানুষ নিয়ে যায় এবং কবরস্থ করে।
‘মানুষ হাসপাতালে যায় সেবার জন্য। কিন্তু সেবার আড়ালে কী পাচ্ছে মানুষ! একবার ভেবে দেখা দরকার’ বলেও মন্তব্য করেন মুফতি নেয়ামাতুল্লাহ আমিন।
একই বিষয়ে কথা বললে, জাতীয় অন্ধ সংস্থা জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মাহমুদ বলেন, মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীর সবচে বেশি সম্মান দিয়েছেন। ফেরেশতাদের দিয়ে মানুষকে সেজদা করিয়েছেন। শুধুমাত্র মানুষের সম্মানের জন্য। সেই মানুষের মৃতদেহ ডাস্টবিনে পাওয়া খুবই দুঃখজনক। এটি উচিত হয় নি। কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
মৃত্যুর পর মানবদেহ এভাবে পরীক্ষার জন্য রেখে দেওয়া ইসলামি দৃষ্টিতে জায়েজ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি সুলতান বলেন, শুরুতেই বলেছি মানুষ পৃথিবীর সবচে বেশি সম্মানিত। তাই এটি জায়েজ হবে না। তবে, বিশেষ প্রয়োজনে, গবেষণার লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের জন্য বৈধ বলা যায়। কিন্তু এভাবে জারের ভেতর রেখে গবেষণার নামে তামাশা করা বৈধ নয়।
মানুষের নানা ধর্ম রয়েছে। নানা পন্থা রয়েছে এবং রয়েছে বহু আদর্শ। কিন্তু সকল ধর্ম-কর্মেই সমাধি করার বিশেষ প্রক্রিয়া থাকে। তাহলে গতকালের ঘটনার শিশুগুলোর কি কোন ধর্ম নেই? তারা কি মানুষ না? এমন প্রশ্নই আজ যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
আগামীতে কি মানুষ সচেতন হবে? নাকি মৃতদেহের সাথে চলমান থাকবে এ রকম তামাশা? উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কিছু দিন।
আরআর