কৌশিক পানাহি: পূর্ব লন্ডন থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ স্কুলছাত্রী সিরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিয়েছিল, সে এখন বাড়ি ফিরতে চায়।
আইটিভি ডটকমের খবর বলছে, বছর উনিশের শামিমা বেগম এখন উত্তর সিরিয়ার একটি শিবিরে নিরাপদে আছে। ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এই কিশোরী ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে।
শুধু শামিমাই নয়, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আরও কয়েক হাজার নারী-পুরুষ-শিশুকে ফেলে পালাচ্ছে জঙ্গিরা।
আমেরিকার সাহায্যে ইরাক সীমান্তের পূর্ব সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটিতে চূড়ান্ত লড়াই করছে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। প্রাণরক্ষার তাগিদে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা ছাড়ছে বহু মানুষ। শামিমারা তাদেরই একজন।
আইএসে যোগ দেওয়ার পর পরই এক জঙ্গিকে বিয়ে করে শামিমা। এরপর তার দুই সন্তানও হয়, যারা পরে মারা গেছে।
শামিমা বলছে, ‘আমি আর সেই বছর পনেরোর বোকাসোকা স্কুল-বালিকা নেই। আমার ভুল পথে পা বাড়ানোর বয়স চলে গেছে।’
শামিমা জানায়, ‘এখানে (আইএস) এতো নির্যাতন ও দুর্নীতি যে, আমি মনে করি না তারা জয়লাভের যোগ্য। যাইহোক, আমি জানি, আমার বাড়ির সবাই আমাকে নিয়ে এখনও ভাবে। যদি নাও ভাবে তবু আমার সন্তান জন্মদানের জন্য আমি বাড়িতে ফিরতে চাই।’
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শারমিনার প্ররোচনায় বেথনাল গ্রিন একাডেমি থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেয়। এর মধ্যে শামিমা ছাড়া বাকি দুই জন হলো খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসি। খাদিজা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত; আর আমিরা আবাসি ইথিওপীয়।
নিখোঁজ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর বাড়িতে ফোন করে শারমিনা জানায়, সে ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিয়েছে। আর কখনো বাড়ি ফিরবে না।
শামিমা জানায়, সিরিয়ায় আসার মাস কয়েকের মধ্যে সে বিয়ে করে এক আইএস সদস্যকে, যার বাড়ি হল্যান্ডে; যে পরে গ্রেফতার হয়।
২০১৫ সালের দিকে সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে ‘খিলাফত’ ঘোষণা করে আইএস। দলে দলে তাদের অনুগামীরা সেখানে জড়ো হতে থাকে।
বিয়ের পর প্রথমে আইএসের দখলে থাকা এলাকার অঘোষিত রাজধানী রাকায় থাকতো শামিমারা। প্রথমদিকে জীবন ছিল অনেক সহজ। কিন্তু এসডিএফ যত এগোতে লাগল, শুরু হল সমস্যা। প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে শহর হাতছাড়া হয়। আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সপরিবার বাসস্থান পালটাতে হয় শামিমারাদের। চাপ প্রচণ্ড বাড়ায় শেষ পর্যন্ত পরিবার ছেড়ে পিঠটান দেয় আইএস সদস্যরা।
শামিমা জানায়, তার এক বছর ৯ মাসের একটি কন্যাসন্তান ও তিন মাস বয়সী একটি পুত্রসন্তান ছিল, যারা সম্প্রতি অজ্ঞাত অসুখে মারা গেছে।
সূত্রের খবর বলছে, শামিমার সঙ্গে আইএস-এ যোগদানকারী খাজিদা বিমান হামলায় মারা গেছে। তবে আবাসি এখনও জীবিত। শুধু এই দুই জনই নয়; পূর্ব লন্ডন থেকে আইএস-এ যোগদানকারী বেশিরভাগ নারীই এখনও জীবিত। কুর্দ কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রয়েছে তারা। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে তাদের ফেরত নেওয়ার আবেদন করেও কোনও ফল হয়নি।
একটি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব, ডিসেম্বরের গোড়া থেকে আইএস কবলিত এলাকা থেকে অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ পালিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে ৩,২০০ জনকে জঙ্গি হিসাবে আটকও করা হয়েছে। শীঘ্রই ইরাক সীমান্তের ওপার থেকেও অনেক শিশু-মহিলা ডিটেনশন সেন্টারে এসে আশ্রয় নেবে। কারণ, জঙ্গিরা সেখানেও কোণঠাসা।
কেপি