পঞ্চগড়ে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের ইজতেমা বন্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন দেশের উলামায়ে কেরাম। স্থানীয়ভাবে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কর্মসূচির পর ঢাকায় প্রতিবাদ বিক্ষোভে নামছেন নেতারা।
ইসলামের নামে ইসলাম বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের জন্য মুসলিমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘ দিন ধরেই। বাংলাদেশেও এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চলছে।
পঞ্চগড়ে আকস্মিকভাবেই ইজতেমার ঘোষণা দিয়েছে এ সম্প্রদায়। আগামী ২২,২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি এ ইজতেমা করার কথা রয়েছে। তবে স্থানীয়রা এমন কর্মসূচিতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
স্থানীয়ভাবে এ ইজতেমা বন্ধে প্রতিবাদ করা হলেও প্রশাসন এখনো তাদের কাজে হস্তক্ষেপ না করায় জাতীয়ভাবে আন্দোলনের ঘোষণাও দিয়েছে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন।
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ইজতেমা নিয়ে হেফাজতের ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফী বলেন, দেশে হিন্দুরা হিন্দু নামে, খ্রিস্টানরা খ্রিস্টান নামে, বৌদ্ধরা বৌদ্ধ নামে বসবাস করছে। কিন্তু কাদিয়ানীরা অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আহমদীয়া মুসলিম জামাত নামে নিজেদের মুসলমান বলে পরিচয় দিয়ে মানুষ ঈমান ধ্বংস করছে।
তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে তারা ইজতেমা করার যে দুঃসাহস করেছে, তা অচিরেই বন্ধ করতে হবে।
কাদিয়ানিদের এ ইজতেমা বন্ধে জাতীয়ভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আজ সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ বাংলাদেশ এক বৈঠক করেছে ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসা।
বৈঠক থেকে পঞ্চগড়ের ঈমান বিধ্বংসী ‘কাদিয়ানী ইজতেমা’ বন্ধের দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার ঘোষণা দেয়া হয়।
খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি ইমাদুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়াত মুভমেন্টের আমীর মুফতি শোয়াইব ইব্রাহীম, মহাসচিব মুহাম্মদ নাজমুল হক, আমরা ঢাকাবাসীর সভাপতি হাজী শামছুল হক, খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল আলীম নেজামী।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মধুপুর পীর সাহেবের ছেলে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, ঢালকানগর মাদরাসার প্রধান মুফতি হাবিবুল্লাহ মিসবাহ, জামালুল কোরআন মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি মিজানুর রহমান, মক্কীনগর মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ, মাদরাসায়ে নূরে মদীনার প্রিন্সিপাল মাওলানা আরিফুল ইসলাম, রায়সাবাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিজুল হক শেখ সাদী প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, অমুসলিম কাদিয়ানী সম্প্রদায় দীর্ঘদিন যাবত এদশের ধর্মপ্রাণ নিরীহ মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করছে।কাদিয়ানীরা যেহেতু রাসুলুল্লাহ সা. কে শেষ নবী মানে না, তাই তারা মুসলমানরা অন্তর্ভূক্ত নয়। সুতরাং ইজতেমা নামে কোনো প্রোগ্রামও করতে পারে না।
এ বিষয়ে ঢালকানগর মাদরাসার ইফতা বিভাগের প্রধান মুফতি হাবিবুল্লাহ মিসবাহ আওয়ার ইসলামকে বলেন, কাদিয়ানী সম্প্রদায় অমুসলিম হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। সুতরাং ইসলামের নামে তাদের ইজতেমা করা মানুষের ঈমান ধ্বংসেরই কারণ। তাই ঢাকার উলামায়ে কেরাম কালকের প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছেন।
প্রশাসন এরপরও ইজতেমা বন্ধ না করলে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেবে খতমে নবুওয়ত নিয়ে কাজ করা সংসগঠনগুলো।
এর আগে বুধবার এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের ইজতেমা প্রতিহতের ঘোষণা দেয়।
প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সংগগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন,কাদিয়ানিদের ইজতেমা বন্ধ করুন, অন্যথায় জনতা প্রতিরোধ করতে বাধ্য হবে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীও দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের ইজতেমা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাদিয়ানিদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুলসলিম ঘোষণা করা হয়েছে ৷ ৯০% মুসলমানের দেশ বাংলাদেশেও কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
ইসলাম ধর্মমতে সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা.। এটি যারা অস্বীকার করে তারা মুসলমান থাকে না। কিন্তু ১৮৩৫ সালে ভারতে জন্ম নেয়া বিতর্কিত নেতা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি নিজেকে ইমাম মাহদি ও নবী বলে দাবি করেন। যে কারণে সারা বিশ্বেই মুসলিমরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে।
১৯৭৪ সালে পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তার অনুসারীদের কাফের বলেও ঘোষণা দেয়। এছাড়া হজের জন্য সৌদি আরব এ সম্প্রদায়কে ভিসা দেয় না।
কাদিয়ানি সম্প্রদায় সারা বিশ্বে চাপের মুখেও তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে লন্ডন থেকে। বর্তমানে গোলাম আহমদ কাদিয়ানির ৫ম খলিফা হিসেবে মির্যা মাসরুর আহমেদ এ কার্যক্রম লন্ডন থেকে পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র পরিসরে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তাদের দাবি অনুযায়ী ১০৩ টি স্থান থেকে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ৪২৫ স্থানে এ গোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।
আরআর