আওয়ার ইসলাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ শুনেছেন জানিয়ে একে ‘গিল্টি কনসেন্স থেকে দেওয়া বক্তব্য’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে, তিনি একটা গিল্টি কনসেন্স থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। কেন জানি তারও (শেখ হাসিনা) মনে হয়েছে, নির্বাচনটা ঠিক হয়নি, একটা ব্যাখা দেওয়া প্রয়োজন; সেই ব্যাখাটি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত আমরা দেখি, একটা নির্বাচনে বিজয়ীরা কেন ভালো করলো আর পরাজিতরা কেন তা করতে পারলো না –এ ধরনের কথা কেউ নির্বাচনের পরে বলে না। উনি বিএনপির ব্যাপারে অনেকগুলো কথা বলেছেন, তার চিন্তা-ভাবনা থেকে। প্রকৃত ঘটনাতে কেউ যেতে চাচ্ছে না। কারণ ভয়; মিডিয়াও না। সবাই বলতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, বিভিন্ন পলিটিক্যাল এরিয়া থেকে যে সমস্ত বক্তব্য এসেছে, যেসব রিপোর্ট এসেছে, তাতে প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই নির্বাচন কোনো নির্বাচনই নয়। এটা জাতীর সঙ্গে কঠিন তামাশা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ঐক্যের ডাক ও বিরোধী দলকে সংসদে যোগদানের আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে উনি যে ডাক দিয়েছেন তা মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনের আগে তিনি যখন আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন, তখন তিনি যে কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো কি রাখতে পেরেছেন? একটাও রাখতে পারেননি। অর্থাৎ রাখেননি। তিনি বলেছিলেন, কোনো গ্রেফতার হবে না। নতুন কোনো মামলা হবে না। এর একটাও তারা রাখেননি। নির্বাচনের একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কথা ছিল, তাও করেননি। একইভাবে আজকে যেকথাগুলো তিনি বলছেন, তাও কথার কথা। এগুলো তিনি সবসময় বলেন। আমরা তো নির্বাচনের ফলাফলই প্রত্যাখান করেছি। সেখানে নতুন করে শপথ নেওয়া বা সংসদে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না।’
তিনি দাবি করেন, ‘আমার মনে হয়, এই নির্বাচন দেশের একটি বড় রকমের ক্ষতি করেছে, দীর্ঘস্থায়ীভাবে। এই নির্বাচনের ফলে মানুষের নির্বাচনি প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে আস্থা চলে গেছে। নির্বাচন কমিশনের উপর থেকেও আস্থা চলে গেছে। এই নির্বাচনের ফলে রাষ্ট্রের উপর থেকেও আস্থা চলে যাচ্ছে; এ জন্য যে, রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন এজেন্সিগুলোকেও ব্যবহার করা হয়েছে। সামগ্রকিভাবে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব আরও যোগ করেন, ‘শুধু আমি নই, দেশের সব সচেতন মানুষ মনে করে, এই নির্বাচন কোনও নির্বাচনই নয়। যে কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও সবদল নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখান করেছে। আমরা পুনরায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন দাবি করেছি। সেই নির্বাচনে জনগণ যেন তাদের রায় দিয়ে পারে, তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।’
তার মন্তব্য, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) যে ফিরিস্তিগুলো দিয়েছেন, ওনার ইশতেহার এবং কাজের ফিরিস্তি দিয়েছেন, সেখানেও বিরাট রকমের গড়মিল রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন দুর্নীতি এমনভাবে বেড়েছে, যা নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্নও করতে পারে না। পুরোপুরি একদলীয় শাসন চলছে। সেটা করার জন্য এই ধরনের নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন– দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল প্রমুখ।
কেপি