মুজাহিদুল ইসলাম
যখন কাতারের ওপর তার চার প্রতিবেশী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অবরোধ আরোপ করে।তখন কাতার মৌলিকভাবে বড় দুটি সমস্যার সন্মুখীন হয়।
লন্ডনের র্যয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেলের মতে কাতারকে দুটি ফ্রন্টে লড়াই করতে হচ্ছে।
প্রথমত বিশ্বকে বুঝাতে হচ্ছে, তারা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করছে না। দ্বিতীয়ত এটা প্রমাণ করা, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য তাদের দেশ উন্মুক্ত।
কাতার সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে এ দাবি তুলে কাতারের ওপর তার শক্তিশালী প্রতিবেশী সৌদি আরব ছাড়াও বাহরাইন, মিসর ও আরব আমিরাত ২০১৭ সালে অবরোধ আরোপ করে।
কাতার অভিযোগ বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কোন কোন বিশ্লেষক দাবী করেন, তাদের অবরোধের পিছনে্ আঞ্চলিক ও ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে ।
মূলত কাতার ৫৫ বছর বৃটেনের উপনিবেশ ছিলো। স্বাধীনতা পাওয়ার আগে আরব আমিরাতের সাথে যুক্ত হতে অস্বীকার করে। অবরোধ এড়ানোর জন্য কাতারকে তের দফা দাবি মানতে হবে বলে জানায়।
এসবের মধ্যে আলজাজিরা টিভি চ্যানেল বন্ধ করা এবং ইরানের সাথে সকল প্রকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও রয়েছে।
কাতার দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে ১৯ মাস চলে যাওয়ার পরও কাতারের ওপর অবরোধ রয়েছে।
ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক খাশুকজি নিহত হওয়ার পর কাতার সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে কি করছে না তা আর আলোচনার মধ্যে নেই।
ওদিকে কাতার বিশ্বকে বুঝাবার চেষ্টা করছে, তার অর্থনৈতিক বিনিয়োগ সবার জন্য উন্মুক্ত।
অবরোধের আগে এসব দেশ হতেই কাতার তার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ৬০ ভাগ আমদানি করতো। অবরোধের পরে তাকে দ্রুত ইরান ও তুরস্ক হতে পণ্য আমদানি করতে হয়েছে।
পাশাপাশি দেশের ভেতরেই উৎপাদন বাড়ানো শুরু করে কাতার। চাহিদা মেটাতে বাইরে থেকে হাজার হাজার গরু আমদানি করা হয়।
কাতারের সাবেক অর্থনীতিবিদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাতার বেশ ভালোভাবেই তার অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পন্ন করছে। তবে ভালো হতো, যদি কাতার নিজস্ব সম্পদ পাশ্চত্যের খাদ্য কম্পানিতে বিনিয়োগ করে সেখান হতে তার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো।
কাতার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সিনিয়র ডাইরেক্টর আকবর আলী খান বলেন, ‘কাতার এ পরিস্থিতি ধারণার চেয়ে আরো ভালভাবে সম্পন্ন করেছে ।’
তিনি আরো বলেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড যা কাতার করেছে, অবরোধে কাতারের শহুরে জীবনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। মানুষ অবরোধ অনুভব করেছে, কিন্তু তাদের লেনদেনের উপযোগিতায় কোকো প্রভাব আসেনি।’
অবরোধের তিন মাসের মধ্যেই কাতার ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে হামাদ সরকারি বন্দর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।
কাতার এর আগে দুবাই এর এক্সপোর্ট-বন্দরের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতো। এখন গভীর সমুদ্রের বড় বড় জাহাজ হামাদ বন্দরে আসছে এবং পরে ছোট ছোট জাহাজে করে পণ্য অন্য জায়গায় পাঠাচ্ছে।
কাতার মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে বিশেষভাবে আমেরিকার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর বেশ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাছাড়াও জার্মানির সাথেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর কাজও করে যাচ্ছে।
আকবর আলী খান বলেন, ‘কাতারের নতুন পলিসি হলো, উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে এ সকল দেশে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো।
বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য কাতার শ্রমআইন সংশোধন, বেসরকারিকরণ ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
যদিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাতারের সাবেক এক উপদেষ্টা বলেন, ‘কাতারের আমলাতান্ত্রিক অবস্থা ভয়াবহ। কারণ, মার্কেট ছোট। প্রতিযোগিতা কম আবার মূল্য বেশি।’
পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তর গ্যাসের মজুদ রয়েছে কাতারের। খুব সহজেই অবরোধ থেকে বের হতে সে তার প্রয়োজন মেটাতে পারছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের সবচে বড় রফতানিকারক কাতার। ২০১৭ সালে বিশ্বের ২৮ ভাগ প্রাকৃতিক গ্যাস কাতার রফতানি করেছে।কাতার দৈনিক ছয় লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে।
কাতার গ্যাস ও তেলে এতটাই সমৃদ্ধ, যে অবরোধ সত্বেও ২০১৭ সালে তারা ১.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আইএমএফ এর মতে আশা করা যায় তারা ২০১৮ সালে ২.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। ২০১৯ সালে তা হবে ৩.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
লন্ডন ইকোনমিস্টের জেসন টাভি বলেন, কাতারের অর্থনীতিতে বৈচিত্র আনার খুব একটা প্রয়োজন নাই। তাদের নাগরিক মাত্র তিন লাখ। কাতার চাইলে খুব সহজেই তার অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করে সকল সমস্যা দূর করতে পারে।
বিবিসি উর্দু থেকে অনুবাদ
আরআর