তাওহীদ আদনান
ইন্ডিয়া থেকে
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা তিন তালাক বিল আবার পাশ হয়ে গেলো ভারতের লোকসভায়। গতকাল বৃহস্পতিবার লোকসভায় আবারো আলোচনায় উঠেছিল তিন তালাক বিলটি৷ এতে সমর্থন জানিয়েছেন ২৪৫ জন সাংসদ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১১ জন৷
প্রথম থেকেই তিন তালাকে বিলটির বিপক্ষে সরব ছিল ভারতের অন্যকম কয়েকটি রাজনৈতিক দল৷ তাদের মধ্য প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং এআইএডিএমকে উল্লেখযোগ্য৷ কিন্তু উক্ত দুই দলের সাংসদরা গতকাল ভোটাভুটির আগেই অধিবেশন ছেড়ে বেরিয়ে যান লোকসভা থেকে৷ ফলে তাদের অনুপস্থিতিতেই তিন তালাক বিল পাশ হয়ে যায় লোকসভায়৷
বৃহস্পতিবার লোকসভায় সংশোধিত বিলটি পেশ করা হয়। একাধিক সংশোধনের দাবি নিয়ে শুরু থেকেই বিলটির বিরোধিতা করছিল কংগ্রেস এবং এআইএডিএমকে। তিন তালাক প্রথাকে প্রাশসনিক অপরাধের আওতায় আনার বিপক্ষে ছিল তারা। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে সংসদের যৌথ কমিটির হাতে বিলটি তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল তারা।
গতকাল লোকসভায় আলোচনাকালীন নিজেদের দাবিতেই অনড় ছিল কংগ্রেস এবং এআইএডিএমকে। এমনকি বেঁকে বসে ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলও।
রামমন্দির নির্মাণে বিজেপির দাবিকে সমর্থন করলেও, তিন তালাক নিয়ে বিজেপির পাশে দাঁড়াতে দ্বিধাগ্রস্ত দেখা যায় শিবসেনাকেও। তিন তালাক বিল নিয়ে মূলত তিনটি বিষয়ে আপত্তি তোলেন বিরোধী শিবিরের সাংসদরা, যার মধ্যে অন্যতম হল সাজার মেয়াদ।
উক্ত বিলে তিন তালাক দিলে স্বামীর তিন বছর কারাদণ্ডের কথা রয়েছে। বিরোধীদের যুক্তি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া, স্ত্রীকে ত্যাগ করার উদাহরণ নতুন নয়। কিন্তু অন্য কোনো ধর্মে তা নিয়ে স্বামীর সাজার কথা বলা নেই। তা হলে শুধু ইসলামের ক্ষেত্রে এমন নিয়ম প্রয়োগ করা হচ্ছে কেন?
স্বামী জেলে গেলে স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব কে সামলাবে, সে কথাও স্পষ্ট করে বলা নেই উক্ত বিলে। তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসসহ অন্যরা। জোর করে এই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করলে পারিবারিক ঐক্য আদৌ টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা, তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে অনেককেই।
তবে বিরোধীদের আপত্তিকে গুরুত্ব দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। আইন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের যুক্তি ছিল, ‘‘তিন তালাক নিয়ে গতবছর যুগান্তকারী রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তিন তালাক প্রথাকে অসংবিধানিক এবং স্বৈরাচারের প্রতীক হিসেবে অখ্যা দেওয়া হয়। তাই এ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। বরং মানবিকতার খাতিরে তাতে সম্মতি জানানো উচিত সকলের।’’
রবিশঙ্করের উক্ত মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন কংগ্রেস অন্যতম সাংসদ সুস্মিতা দেব। তিনি বলেন, ‘‘রবিশঙ্কর বুঝতে ভুল করেছেন। তিন তালাককে প্রশাসনিক অপরাধের আওতায় ফেলার কথা একবারও বলেনি সুপ্রিম কোর্ট। পৃথিবীর কোনও ধর্মেই এই ধরনের সাজার কথা উল্লেখ নেই। তাই নতুন এই আইন এনে মুসলিম মহিলাদের অধিকার রক্ষা করছে না মোদি সরকার। বরং মুসলিম পুরুষদের শাস্তি দেওয়াই আসল লক্ষ্য তাদের।’’
উক্ত বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষ বাক বিতণ্ডা শুরু হলে কংগ্রেস এবং এআইএডিএমকে ওয়াক আউট করে লোকসভা থেকে৷ পরে তাদের অনুপস্থিতিতেই পাশ হয়ে যায় বিলটি। বিচ্ছেদের পর আগের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চাইলে মুসলিম মহিলাদের নিকাহে হালালার মধ্যে দিয়েই যেতে হয়৷ গতকাল সেই নিকাহে হালাল প্রথাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে লোকসভায়।
তিন তালাক বিলের অপব্যবহার রুখতে বেশ কিছু পরিবর্তনও ঘটানো হয়েছে বিলটিতে। যাতে বলা হয়েছে, স্বামী তাৎক্ষণিক তালাক দিলে একমাত্র স্ত্রী এবং তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ই থানায় অভিযোগ জানাতে পারবেন৷ বাইরের কারও তাতে নাক গলানোর অধিকার নেই।
বিলটিতে আরো বলা হয়, স্ত্রীকে আর তালাক দিতে পারবেন না মুসলিম পুরুষরা। মুখে তিনবার তালাক বললেও বিবাহ বিচ্ছেদ হবে না তাদের। কোনো স্ত্রীকে তিন তালাক কেউ দিয়ে বসলে স্বামীর তিন বছরের কারাদণ্ড ইত্যাদি৷
বিলের শেষের দিকে বলা হয়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিটমাট বা মীমাংসা হয়ে গেলে থানা থেকে অভিযোগ তুলে নেওয়া যাবে। অভিযুক্ত স্বামীকে জামিন দেওয়া হবে কি না, স্ত্রীর বয়ান শুনে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সংশ্লিষ্ট আদালত।
উল্লেখ্য, মুসলিম শরিয়া বিরোধী এ বিল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনে সরব দেশের নারীসহ মুসলিম নেতা কর্মীরা। কিন্তু এসব উপেক্ষা করেই লোকসভায় পাশ করা হলো বিলটি।
আরআর