আওয়ার ইসলাম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২০ দলীয় জোটের শরীক খেলাফত মজলিসের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
আজ ২২ ডিসেম্বর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ খেলাফত মজলিসের ৩১ দফা নির্বাচনী ইশতিহার ঘোষণা করেন আমীরে মজলিস অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক।
এ ইশতিহার ঘোষণার সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, শেখ গোলাম আসগর, সাংগঠনিক সম্পাদক- ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অফিস ও প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, মাওলানা আজীজুল হক, মোঃ আবুল হোসেন, হাজী হারুনূর রশীদ, কাজী আরিফুর রহমান প্রমুখ।
খেলাফত মজলিসের লিখিত ইশতেহারে আদর্শ বিবর্জিত নেতৃত্ব, প্রতিহিংসার রাজনীতি, দুর্নীতির সর্বপ্লাবী সয়লাব, প্রশাসনে পেশাদারিত্ব না থাকা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিপক্ষ দমনে ব্যবহার, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও লুটপাট, পেশী শক্তি ও কালো টাকার দাপট দেশের সমস্ত সম্ভাবনাগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে।
একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য দেশপ্রেম ও ঈমানের সমন্বয় দরকার। খেলাফত মজলিস যত্নের সাথে এ কাজটি করতে চায়।
এ জন্যে খেলাফত মজলিসের পক্ষে দেশবাসীর সমর্থন প্রত্যাশা করা হয়। আইনের শাসন ও জবাবদিহীতা, জননিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচার বিভাগ, অর্থনীতি ও আর্থিক সুশাসন, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, প্রশাসনিক ও আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, নারী ও শিশু অধিকার, মানবসম্পদ ও তরুণ সমাজ, প্রবাসী কল্যাণ, ভাষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, পররাষ্ট্রনীতি, কৃষি ও ভুমি ব্যবস্থাপনা, শিল্প ও বিনিয়োগ, গ্রাম উন্নয়ন, শ্রমিক অধিকার, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা, মাদকাসক্তি ও মাদকদ্রব্য নির্মুল, সামাজিক নিরাপত্তা, কর ব্যবস্থাপনা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, নিরাপদ সড়ক ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার, পরিবেশ ও জলবায়ু, পর্যটন শিল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাও নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে খেলাফত মজলিসের বিভিন্ন অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়।
খেলাফত মজলিস ঘোষিত ৩১ দফা নির্বাচনী ইশতিহারের অঙ্গীকারসমূহ নিম্নরূপ:
১. আইনের শাসন ও জবাবদিহীতা
আমরা সরকারের মূলে কার্যকর জবাবদিহীতা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই সরকার পরিচালনা করবে এবং সরকার তার সব কর্মকান্ড পরিচালনার ব্যাপারে জনগণের কাছে দায়ী থাকবে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাদিহিতা, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হবে। সংসদ সদস্যদের কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করে তা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। সরকারী দায়িত্বে নিয়োজিত যে কোন ব্যক্তির কাজে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সরাসরি আইনী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
সরকারী ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও ক্রয় পদ্ধতি ব্যাপক সংস্কার করা হবে। পাবলিক সার্ভিসসহ সকল নিয়োগে মেধা, সততা ও দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
২. জননিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
সকল মানুষই জন্মগতভাবে স্বাধীন ও সমান। আইনের কাছে সবাই সমান। কাউকে নির্যাতন, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা যাবে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, জাতীয়তা, জন্ম এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের সকল মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা হবে।
বৈষম্যমূলক, নিবর্তন ও নিপিড়ণমূলক আইনসমূহ বাতিল করা হবে। সবার জন্য নিরাপদ বাড়ি এ প্রতিপাদ্যে সকলের নিরাপত্তার প্রতি নজর দেয়া হবে।
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা, সাংবাদিকতার মানোন্নায়নে এবং সংবাদ মাধ্যমের অপব্যবহার রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। সরকারী সিদ্ধান্তের প্রকাশ্য সমালোচনা ও অযৌক্তিক কাজের প্রতিবাদ করা যাবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিবাচক চর্চা অবাধ করা ও নেতিবাচক চর্চার কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও সাইবার অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। তথাকথিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে আইনবিদদের মতামত নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ আইন প্রনয়ণ করা হবে।
৩. বিচার বিভাগ
সামাজিক ন্যায়বিচার ও সামগ্রীকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিচারব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত সুবিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হবে; যা একটি উন্নত বিচারব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। একটি কার্যকর, স্বাধীন, সুদক্ষ ও গতিশীল বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রীম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা হবে।
বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সততা, দক্ষতা, আমানতদারিতা, নৈতিকতার বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হবে।
৪. অর্থনীতি ও আর্থিক সুশাসন
আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশে এমন একটি অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যা জনগণের উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের সাথে সাথে সম্পদের সুষম বন্টনও নিশ্চিত করবে। সুদ ব্যবস্থার অবসান এবং যাকাত ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হবে, যাতে সমাজের কেউ অভুক্ত না থাকে এবং কোথাও কোনো অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে না উঠে।
সব ধরণের দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করা হবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১২% এ নিয়ে যাওয়া হবে। সকল অ লের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। আর্থিক খাতে সব ধরণের দ্বৈত কর্তৃত্বের অবসান ঘটানো হবে। দেশকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাংক ব্যবস্থার নৈরাজ্য ও অস্থিরতা বন্ধ করে স্থিতিশীল ও উন্নত পদ্ধতি চালু করা হবে।
৫. শিক্ষা
ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতি নৈতিকতার ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সংস্কার করা হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধুনিক তথ্য- প্রযুক্তি শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। শিক্ষার লক্ষ্য হবে একটি উন্নত নৈতিক মানসম্পন্ন, বিজ্ঞান মনস্ক, যোগ্য ও দক্ষ জাতি গড়ে তোলা।
বিনামূল্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নত মান সংরক্ষণ ও পর্যাপ্ত গবেষণার ব্যবস্থা করা হবে। আলিয়া ও কাওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে যথাযথ মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি প্রদানসহ এর মানকে আরো উন্নত করা হবে। মক্তব শিক্ষাকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ইমাম, মুয়াজ্জিন ও বিভিন্ন ধর্মীয় পুরোহিতদের সামাজিক শিক্ষা ও প্রেষণায় নিয়োগ করা হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে আরো কার্যকর ও গতিশীল করা হবে। বৃত্তিমূলক ও কর্মসংস্থানমূখী শিক্ষার উপর যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। উপযুক্ত শিক্ষক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শিক্ষা উপকরণ সহজলভ্য করা হবে। শিক্ষার অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাতীয় বাজেটের ৫% শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হবে।
৬. মুক্তিযুদ্ধ
‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করাণার্থে’ ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধের এই আদর্শ নিশ্চিতকরণ ও তৎসঙ্গে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ এবং যাবতীয় আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসী তৎপরতার মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হবে এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হবে।
৭. প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী দেশপ্রেমিক প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহকে সকল দিক থেকে আরও শক্তিশালী করে বিশে^র আধুনিক ও উন্নত বাহিনীর উপযোগি রূপে গড়ে তোলা হবে। উন্নত সমরাস্ত্র তৈরীতে মনযোগ দেয়া হবে।
গোটা জাতিকে প্রতিরক্ষা কাজে প্রস্তুত রাখার উদ্দেশ্যে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ সব সক্ষম নাগরিকদের দুই বছর মেয়াদী সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
৮. প্রশাসনিক ও আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা
একটি সৎ, দক্ষ ও গণমুখী প্রশাসন উন্নত জাতি গঠনের জন্যে অপরিহার্য। তাই দক্ষ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক এবং জনবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকল মিথ্যা ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হবে।
বিনা ওয়ারেন্টে/ সাদা পোষাকে গ্রেফতারের কোন বিধান থাকবেনা। বিচার বহির্ভূত যাবতীয় হত্যাকান্ড ও গুম বন্ধ করা হবে। পুলিশকে রাজনীতিমুক্ত, অধিক পেশাদার ও শক্তিশালী করা হবে। পুলিশের ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধিসহ সামগ্রীক জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হবে। সততা, দক্ষতা, নৈতিক ও মানবিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
৯. কর্মসংস্থান
জনগনের মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠিত করা হবে। বেকারত্ব সম্পূর্ণরুপে দূর করা হবে। এক কোটি চাকুরী ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। বাংলাদেশকে ব্যবসা বান্ধব করে গড়ে তোলা হবে। বিভিন্ন সেক্টরে নতুন নতুন উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরী করা হবে। হিজড়াদের চাঁদাবাজি বন্ধ করে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
“বড় নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের মতো বিভাগীয় শহরগুলোতেও নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি কর্মকমিশনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে জনবল বৃদ্ধি করে সরকারী সকল চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
প্রয়োজনে স্বায়াত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা বোর্ড গঠন করা হবে।” (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত)
১০. নারী ও শিশু অধিকার
দেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারী সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে। যৌতুক প্রথাসহ নারী নির্যাতনমূলক সকল প্রকার কার্যকলাপকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র নারীর সম্মান ও স্বাতন্ত্র নিশ্চিত করা হবে।
নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে। শিশু নির্যাতন, শিশু শ্রম বন্ধ করে শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা ও সহজাত বিকাশের মাধ্যমে আগামী দিনের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
১১. মানবসম্পদ ও তরুণ সমাজ
একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্যে দেশে নৈতিকগুনসম্পন্ন দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। তরুণ ও যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা বিস্তার এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
সাথে সাথে দেশ জুড়ে কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্প বিস্তারে উদ্যোগ গ্রহণ এবং ঋণ সহায়তা কর্মসূচি চালু করা হবে।
“প্রতি জেলা-উপজেলায় তরুণদের কর্মমুখী করার লক্ষ্যে কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। উদ্যোক্তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা ও স্বীকৃতি প্রদানের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বেকার তরুণদের উদ্যোক্তা করার প্রয়াসে বেসরকারি ঋণ প্রদান ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।” (তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮ থেকে সংযুক্ত।)
১২. প্রবাসী কল্যাণ
বিদেশে শ্রমবাজারকে শক্তিশালী করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ সংরক্ষণে একটি বিশেষ সেল সারা বছর মনিটরিং ও ফিডব্যাক দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকবে। প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। বিদেশ গমনেচ্ছুদের বিনা মূল্যে সেক্টর ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
২০ বছরের অধিক সময়ে প্রবাসে অবস্থানকারীগন আগ্রহী থাকলে দেশে কর্মঅভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাদের কাজের ক্ষেত্র তৈরী করা হবে। বিদেশে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করা হবে।
১৩. ভাষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষাই জ্ঞান অর্জন ও ভাব বিনিময়ের সর্বোত্তম বাহন। তাই বাংলা ভাষা এবং বাংলা সাহিত্যের উন্নয়নের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকারি কাজে বাংলাভাষা ব্যবহারের বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হবে। শিল্প, কলা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে সৃজনশীলতার মূল্য দেয়া হবে।
সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ, সুন্দর রুচিশীল বিনোদন ও খেলাধূলার প্রসার এবং উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হবে। নৈতিকতাবর্জিত অসুস্থ- অপসংস্কৃতি নির্মুলে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে রাজনীতিমুক্ত করে শক্তিশালী করা হবে।
১৪. সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
বাংলাদেশে বসবাসরত সকল ধর্মীয় স¤প্রদায়, পাহাড়ি ও সমতলের সকল নৃ-গোষ্ঠীসমূহের মৌলিক, মানবিক, ধর্মীয়, সামাজিক, নাগরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলোকে চিহ্নিত করে এগিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সমাজে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি সুনিশ্চিত করা হবে।
১৫. পররাষ্ট্রনীতি
পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকার, রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সমতা, শ্রদ্ধাবোধ ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন। “সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়” এ নীতি-নিষ্ঠার সাথে পালন করা হবে। ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশসমূহের সাথে বিশেষ সৌহার্দমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে ফলপ্রসু সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোন সাথে অমীমাংসিত ইস্যু গুলোর সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে। আধিপত্যবাদ ও স¤প্রসারণবাদের বিরোধিতা, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মজলুম জাতিসমূহের পক্ষাবলম্বন এবং তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
রোহিঙ্গাদের নিজ ভুমিতে সম্মানের সাথে প্রত্যাবর্তনের শক্তিশালী উদ্যোগ নেয়া হবে। আটকে পরা পাকিস্তানী ইস্যু সমাধান করা হবে।
১৬. কৃষি ও ভুমি ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণার উদ্যোগ নেয়া হবে। কৃষিজমি সংরক্ষণ ও ভূমির ঊর্বরতা অনুয়ায়ী কৃষি জমির শ্রেনিবিন্যাস করা হবে।
কৃষি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ দান, সার, বীজসহ কৃষি উপকরণে পর্যাপ্ত ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। দেশে সমৃদ্ধ বীজভান্ডার গড়ে তোলা হবে।
নতুন জেগে উঠা চর ও সরকারি খাস জমি ভ‚মিহীন ও ছিন্নমূল চাষীদের মধ্যে বণ্টন নিশ্চিত করা হবে। ক্ষেতমজুরদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে। কৃষক যাতে তার উৎপাদিত মূল্যেও ন্যায্য পাওনা পায় তার ব্যবস্থা করা হবে। ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিরাজমান দুর্নীতি ও জটিলতা দূর করা হবে এবং ভূমির মালিকানা সংশ্লিষ্ট আইনী প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হবে।
পোল্ট্রি ও গবাদি পশু পালনে ব্যাপক উৎসাহমূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে। গ্রাম পর্যায়ে ভ্যাটিরিনারি হাসপাতাল, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
১৭. শিল্প ও বিনিয়োগ
জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্যে প্রয়োজনবোধে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার ব্যবস্থা রেখে বেসরকারি সেক্টরকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য পরিবেশ-পরিস্থিতি ও পদ্ধতি অনুকুল করা হবে।
দেশের শিল্পায়ন ও শিল্প-কারখানা স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থানুকূল নীতি-পলিসি অনুসরণ করা হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে রপ্তানী কার্যক্রমকে সহজ করা হবে।
শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এক কথায় দ্রুত দেশকে একটি আধুনিক শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সহজে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে।
১৮. গ্রাম উন্নয়ন
গ্রামই বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের বাস গ্রামে। অবহেলিত গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে শহরমুখী জনস্রোত ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গ্রামের উন্নয়ন হলে বাংলাদেশের ৯০ ভাগ উন্নয়ন হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।
গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে উন্নত মানের কৃষি, মৎস্য ও গবাদিপশু খামার, কৃষি নির্ভর শিল্প, কুটির শিল্প প্রভৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্র্রামীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হবে।
গ্রামের পরিবেশ ও প্রকৃতির স্বকীয়তা অক্ষুন্ন রেখে প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ পানিসহ সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। গ্রামে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে সক্ষম নারী ও পুরুষ যাতে সম্মানজনক আয় করতে পারে সে প্রশিক্ষণ ঘরে ঘরে দেয়া হবে।
১৯. শ্রমিক অধিকার
সকল শ্রেণীর শ্রমিকদের সম্মানজনক জীবনধারণের উপযোগী ন্যূনতম বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তৎসঙ্গে তাদের বাসস্থান ও চিকিৎসা সুবিধা, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ ইত্যাদিরও ব্যবস্থা করা হবে। শিল্প-কারখানার মালিকানায় শ্রমিকদের অংশীদারিত্বের ব্যবস্থা থাকলে শিল্পক্ষেত্রে শুভ ফল বয়ে আনবে।
শ্রমিক-মালিক বিরোধে যাতে উৎপাদন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আবার শ্রমিকদের ন্যায়সংগত অধিকারও যাতে আদায় হয় তার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাবতীয় শ্রম শোষণ বন্ধ করা হবে এবং সুস্থ গঠনমূলক ট্রেড ইউনিয়নকে উৎসাহিত করা হবে।
২০. জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ
তেল গ্যাস, বিদ্যুৎসহ জ্বালানী খাতের উন্নয়ন করা হবে। বিদ্যুতে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনে, সরকারী/ বেসরকারী উদ্যোগে কয়লা ও গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস রোধ ও বিদ্যুৎ খাতের যাবতীয় দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর চাপ কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে বিপ্লব ঘটানো হবে।
দেশের সর্বপ্রকার খনিজ সম্পদের মালিক জনগণ। এই সম্পদকে বিদেশীদের লুটপাট থেকে রক্ষা ও দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। দেশের প্রতিটি খনিজ সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্যে জাতীয় খনিজ নীতি প্রণয়ন করা হবে। দেশে নতুন নতুন খনিজের অনুসন্ধান ও জরিপের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
২১. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা
সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো হবে এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। ওষুধ শিল্পের প্রকৃত মান নিশ্চিক করা হবে। স্বাস্থ্যখাতে সকল অনুদান ্প্রকৃত প্রাপকদেও হাতে যথাযথ ভাবে পৌঁছানো হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে পূর্ণাঙ্গ ১০০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রতিবন্ধি ও সিনিয়র সিটিজেনদের বিভাগ ভিত্তিক হাসপাতালে বিনামূল্যে পরিপূর্ণ চিকিৎসা দেয়া হবে।
২২. মাদকাসক্তি ও মাদকদ্রব্য নির্মুল
সামাজিক অবক্ষায় রোধে যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীদের মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উপরে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হবে। মাদকাসক্তদেও সামাজিক ও ধর্মীয় মোটিভেশনের ব্যবস্থা করা হবে।
ভয়াবহ ও মারাত্মকব্যাধি মাদকাশক্তি নির্মুলে সব ধরনের মাদকদ্রব উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
২৩. সামাজিক নিরাপত্তা
সমাজের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তার জাল বিস্তার করা হবে । যার অভিভাবক নেই রাষ্ট্রই তার অভিভাবক- এ নীতির ভিত্তিতে ইয়াতিম, বৃদ্ধ- বৃদ্ধা, বিধবা, শারিরীক প্রতিবন্ধী, মানসিক প্রতিবন্ধী( অটিস্টিক), পথশিশু ও নি:স্ব মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে।
পারিবারিক সহিংসতা রোধ করতে, বিবাহ সংক্রান্ত কলহ রোধসহ সামগ্রীকভাবে পারিবারিক জীবনকে শান্তিময় করতে বিশেষ হেল্পলাইন চালু করা হবে। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করে সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয় রোধ এবং ছোটদের স্নেহ, বড়দের সম্মান ও পিতা-মাতার অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
২৪. কর ব্যবস্থাপনা
রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে কর। কর ব্যবস্থাপনাকে স্বচ্ছ করা হবে। সব ধরনের করের আওতা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যৌক্তিক হারে কর নির্ধারণ করা হবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে কমানো হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে কোন ভ্যাট থাকবেনা। মানুষের করের ভীতি দূর করা হবে।
২৫. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বর্তমান বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়নের অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে স্বীকৃত। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তনশীল। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, বাণিজ্য, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে গতিশীলতা বৃদ্ধি, উন্নয়ন ও স্বচ্ছতার জন্যে আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
একটি জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির নেতৃত্ব দানে সক্ষম বড় একটি জনগোষ্ঠি তৈরী করা হবে।
২৬. নিরাপদ সড়ক ও যোগাযোগ
সারাদেশের সড়ক, নৌ, বিমান ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক, বিস্তৃত ও নিরাপদ করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। মহাসড়ক ও মহানগরগুলোকে ট্রাফিক জ্যামমুক্ত করা হবে।
২০১৮ সালের শিশু কিশোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ৯ দফার আলোকে আইন সংস্কার করা হবে। কম খরছে অধিক টেকসই রাস্তা নির্মান করা হবে। রেলপথ ও নৌপথকে ব্যাপক বিস্তৃত করা হবে। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আধুনিক, নিরাপদ ও সুলভ করা হবে।
২৭. স্থানীয় সরকার
দেশের সব অ লের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। জাতীয় বাজেটের ১০% স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয় করা হবে। জেলা পরিষদে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোট হবে।
নির্বাচিত ও কার্যকর ক্ষমতার অধিকারী সকল পর্যায়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অ লের জনগনের ক্ষমতায়ন করা হবে।
২৮. পরিবেশ ও জলবায়ু
বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর সামগ্রিক উষ্ণতা বেড়েই চলছে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ভবিষ্যৎ পৃথিবী ও মানব জাতির জন্যে এক মারাত্মক হুমকী।
এ অবস্থা মোকাবেলায় কার্বণ নির্গমনের হার কমানো, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং এ উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক ফোরামে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণা ও কর্মসূচী একসাথে চলমান রাখা হবে।
বনায়নের কর্মসূচী শক্তিশালী করা হবে। শহর অ লের জলাবদ্ধতা দূর করা হবে। হারিয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করে আধুনিক করা হবে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।
২৯. পর্যটন শিল্প
প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব চারণভুমি, পৃথিবীর অন্যতম সেরা আকর্ষণ একই স্থান থেকে সূর্য উদয় ও সূর্য অস্ত পর্যবেক্ষনের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনা ল সুন্দরবন আমাদের দেশের দুটি প্রান্তকে দীপ্তিময় করে রেখেছে।
দেশের পর্যটন শিল্পকে উন্নত করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যম বাড়ানো হবে। দেশের সম্ভাব্য পর্যটন স্পট গুলোকে নিরাপদ, আধুনিক ও আকর্ষণীয় করে তোলা হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পর্যটন স্থানগুলোর বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হবে।
৩০. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসে আধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হবে। দুর্যোগকালীন সময়ে স্বল্প সময়ে উদ্ধার ও পুনর্বাসন প্রকিয়া দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করার উপযোগী পদ্ধতি চালু করা হবে।
বন্যা, জলোচ্ছাস, নদী ভাঙ্গন এসব সমস্যা হতে উপক’লীয় এলাকাগুলোকে রক্ষা করার কার্যকর ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
৩১. নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচনকালীন সরকার
প্রতি ৫ বছর পরপর দেশে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে অস্থিরতা ও সংকট তৈরী হয়। সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা আজ দেশবাসীর মূল আকুতি। আমরা নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সকলের সাথে আলাচনার ভিত্তিতে জনগণের নিকট গ্রহনযোগ্য একটি কার্যকর সরকার পদ্ধতি প্রবর্তণ করবো।
নির্বাচন কমিশনকে প্রকৃতপক্ষে নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
আরআর