রোকন হারুন ।। আওয়ার ইসলাম
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর। সে লক্ষ্যে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে প্রচারণা। প্রার্থীরা ব্যস্ত আছেন নিজেদের প্রতীক নিয়ে ভোটারের দ্বারে দ্বারে।
তবে নির্বাচনের পরিবেশ এখনো পুরোপুরি ফিরেছে কিনা এ নিয়ে এখনো দ্বিধাবিভক্ত বার্তা দেখা যাচ্ছে। প্রচারের প্রথম ২ দিনে হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ২ জন। সিইসি আশঙ্কা করেছেন আবারও ৫ জানুয়ারির মতো পরিস্থিতি হয় কিনা।
নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ কেমন? প্রচারণা কেমন? ভোটারদের উৎসাহ কেমন? এসব বিষয় প্রার্থীদের কাছে জানতে কথা বলেছিলাম দেশের দুই ইসলামি রাজনীতিকের কাছে। তারা ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জয়ী হতে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীদের অবস্থা, প্রচারণার বিষয়ে জানতে কথা হয় দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনীর আহব্বায়ক মাওলানা ইমতিয়াজ আলমের সঙ্গে।
তিনি বলেন, নির্বাচনি পরিবেশ কেমন সে বিষয় কারও অজানা নয়। তারপরও যেহেতু আপনি জিজ্ঞেস করছেন তাই বলতে হয়, আমরা ঠিক সবখানে প্রচারণা চালাতে পারছি না। অনেক জায়গায় প্রচারণা চালাতে কোনো সমস্যার সম্মুখিন হইনি। আবার অনেক জায়গা বাধার সম্মুখিন হচ্ছি। কোনো প্রচারণা চালাতে পারছি না।
ইমতিয়াজ আলম বলেন, গতকাল খুলনা ৫ আসনে প্রচারণা চালানোর সময় ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা আমাদের কর্মীরা হামলার শিকার হয়। তাদের একাধিক বার হুমকি দেয়া হয়েছে, নিষেধ করা হয়েছে প্রচারণা চালাতে।
মাঠে নামতেও বারণ করা হয়েছে। ‘এখানে শুধু নৌকার প্রচারণা চলবে’ এমন কথাও বলেছেন তারা। এ সময় আমাদের সাধারণ অনেক কর্মী অহত হয়েছে। বিশেষ করে মাওলানা মুজাম্মেল হক গুরুতর আহত হন। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি জানান, সিরাজগঞ্জ ১ আসনে আমাদের দলকে মাঠেই নামতে দেয়া হচ্ছে না। প্রচারণা চালানোর কারণে আমাদের এক কর্মী মুফতি আল আমীনকে লাঞ্চিত করা হয়। তাকে মারধর করে উঠিয়েও নিয়ে যায। পরে পুলিশ ও জনগণের সহয়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, নরসিংদী ও নোয়াখালীতে আমাদের অফিসে তালা ঝুলুয়ে দিয়েছে। কোনো প্ররচাণা করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রচারণা চালানোর কারণে আরিফ হোসেন নামের এক অটো চালকের অটো ভেঙ্গে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আরিফ হোসেনের অটো ভাঙ্গার বিষয়টি খুবই হৃদয়বিদারক। একজন দারিদ্র ব্যক্তির ওপর প্রতিপক্ষের এমন অত্যাচার কোনোভাবেই মেনে নেয়ার যায় না।
ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ কেমন দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোটাররা আসলে আতঙ্কিত! বিশ্বাস করতে পারছে না যে, তাদের ভোট সঠিক ব্যক্তি পাবে কি না। দেশের বর্তমান নির্বাচনি পরিস্থিতি ঠিক হওয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসাশন তাদের সহযোগিতা করছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ঘোলাটে বিষয়। প্রসাশন পক্ষপাতিত্ব করছে। ক্ষমতাসীন দল আইন লঙ্ঘন করলে তারা কিছু বলছে না। অপরদিকে অন্যদের বিনা কারণে হায়রানি করা হচ্ছে।
তবে প্রসাশন আমাদের সহযোগিতা একবারেই যে করে না তা না। যেখানে তারা না করলে সমস্যর সম্মুখিন হবে সেখানে করেন।
নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় ২০ দলীয় জোটের শরীক খেলাফাত মজলিসের প্রার্থী ড. আহমদ আব্দুল কাদেরের সঙ্গে।
তিনি হবিগঞ্জ ৪ আসন ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তার এলাকার পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা মোটামটিভাবে নির্বাচনি প্রচারণা করতে পারছি। অনেক স্থানে খুব গোপনে প্রচার চালাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গতকাল নির্বাচনি প্রচারণার সময় আমাদের মাধবপুর থেকে ০৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে মাধবপুর প্রেসক্লাবে সহসভাপতি আবুল খায়ের ও ইউপি সদস্য মোলাই মিয়াও আছেন।
তিনি জানান, আমরা শান্তিমতো আমাদের প্রচারণার কাজ চালাতে পারছি না। প্রতিপক্ষ বাধা দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠমতো হবে বলে আমি মনে করছি না।
তিনি আরও বলেন, মাধবপুরেই প্রচারণা চলাকালীন একাধিকবার আমরা হামলার শিকার হয়েছি। সেখানে আমাদের প্রচারণা চালাতে দেয়া হচ্ছে না। নৌকা ছাড়া অন্য কোন প্রতীকের প্রচারণা চালাতে দেয়া হবে না বলেও ধমকি দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
জনগণের মাঝে ভোট প্রদানের উৎসাহ উদ্দীপনা কেমন দেখতে পাচ্ছেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, তারা ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ চায়। শান্তিতে ভোট দিতে চায়। সত্যিই যদি ভোটররা ভোট দিতে পারে তাহলে আমরা আশাবাদী। হবিগঞ্জ ৪ আসনে আমরা জয়ী হব।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বার-বার হবিগঞ্জ ৪ আসনে জয়ী হয়েছে। কিন্তু চোখে পড়ার মতো উন্নয়নমূলক কাজ করেনি। সাধরণজনগণ তাদের সাশন ও কর্মকাণ্ডে নারাজ। তারা এবার অন্য প্রতীক ও প্রার্থী চায়।
প্রসাশন নির্বাচনের মাঠ সবার জন্য সমান রাখতে কী ভূমিকা রাখছে জানতে চাইলে বলেন, প্রসাশন আমাদের কমবেশি সহযোগিতা করছেন। আমাদের প্রোগ্রামগুলির দিকে নজর রাখছেন। যাতে কোন ধরনের নাশকতার ঘটনা কেউ না ঘটাতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আটক আছে তাদের বের করার জন্য আমরা প্রসাশনে সাহায্য নিচ্ছি। তবে যে রকর নিরপেক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস ইসি দিয়েছে তেমনটি এখনো দেখতে পাচ্ছি না।
লুনার মনোনয়ন স্থগিত; ভাগ্য খুলছে কি মুনতাসির আলীর?
আরআর