সুফিয়ান ফারাবী ।।
কুলা মিয়া সহজ সরল একজন মানুষ। চলমান তাবলিগের বিরোধ সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। ‘ওয়াজাহাত আর এতাআত’ এ দুটি শব্দের সাথে খুব বেশি পরিচিত নয় কুলা মিয়া। তবে এটুকু জানতেন তাবলিগে টুকটাক ঝামেলা চলছে। আগের মতো ঐক্যবদ্ধ নয় তাবলিগ জামাত।
তিনি বিশ্বাস করেন, বিশ্ব ইজতিমায় শ্রম দেওয়া সাওয়াবের কাজ। তাই শুধু সাওয়াবের আশায় কোন পক্ষ অবলম্বন না করে এসেছিলেন টঙ্গী ময়দানে। মাদারাসার ছাত্রদের সাথে মিলেমিশে কয়েকদিন কাজও করেছেন। ভেবেছিলেন আরও কয়েকটি দিন দীনের পথে শ্রম দিয়ে পরপারে শান্তি খুঁজবেন। কিন্তু তা আর হলো কই!
আজ সকাল আনুমানিক এগারোটার দিকে টঙ্গী ময়দানে হামলা চালায় মাওলানা সাদপন্থীরা। তখন তিনি দৌড়ে পালাতে গেলে হঠাৎ তার মাথায় এসে পড়ে প্রকাণ্ড এক পাটকেল। সাময়িকভাবে তার দৃষ্টি শক্তি চলে যায়। এখন তিনি টঙ্গী ময়দানের পাশের মেডিকেল আহসানিয়া মিশনে চিকিৎসারত।
তিনি কখনো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন কিনা স্পষ্ট করে বলছেন না ডাক্তাররা। তবে তিনি আশা রেখেছেন প্রভুর কাছে। আর যদি নাও পান, তবুও তিনি প্রভুর দরবারে অভিযোগ করবেন না। তিনি এর প্রতিফল চান খোদার দরবারে।
আচ্ছা, কুলা মিয়া তো শুরু শেষ কিছুই জানেন না। কী হচ্ছে কিছুই বোঝেন না। তিনি তো কোনো পক্ষের লোক নন। তবুও কেন তার গায়ে আঘাত!
‘একসঙ্গে রক্তাক্ত জখমের এত রোগী টঙ্গী হাসপাতালে কখনো আসেনি’
ইজতিমা ময়দানে ঢুকতে না দেওয়ায় এসেছিলাম আহসানিয়া মেডিকেলে। ধারণা ছিলো এখানে রোগী থাকবে না। কারণ এ হাসপাতালে দরিদ্ররা খুব বেশি সুবিধা পান না। অর্থ প্রচুর খরচ হয়। তারপরও ঢুকলাম দায়িত্ব পালনার্থে। ঢুকে দেখি, প্রায় ত্রিশজন অাহত হয়ে শুয়ে আছে। কারো মাথা ফাটা, কারো পা ভাঙা কারো শরীর রক্তাক্ত।
রোগিদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম দীর্ঘক্ষণ। কেউই কাঁদছেন না। যদিও চরমভাবে আহত সবাই। তাদের মুখপানে চেয়ে একটা ‘চাওয়া চাওয়াভাব’ দেখলাম। তারা কিছু চান। অনেক বড় কিছু। তবে তাদের এ চাওয়া নিকটভবিষ্যতে পূর্ণ হবে কিনা জানি না।
তারা চান, তাবলিগ জামাত আবারো এক সামিয়ানায় একত্রিত হোক। ঐক্য গড়ুক। আগের মতো সম্পর্ক তৈরি হোক পরস্পর।
সরেজমিনে ঘুরে তাদের এ আকুতির কথাই শুনলাম বারবার। কেউ মনের এ ভাব প্রকাশ করছেন চিৎকার আর হাহাকারে। আর কেউ কান্নায় বুক ভাসিয়ে ফেলছেন। তবে এটা সত্য, সবাই ঐক্য চান, ঐক্য চান, ঐক্য চান।
টঙ্গী ময়দানে অশ্রুর বদলে রক্ত কেন? পুলিশ কেন নীরব?
আরআর