আবদুল্লাহ তামিম
আওয়ার ইসলাম
ভারতের সর্বপশ্চিমে অবস্থিত রাজ্য গুজরাট। রাজস্থান মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি ও উপমন্ত্রী নিতিন প্যাটেল সম্প্রতি বলেছেন, সরকার ভারতের বৃহত্তম শহর আহমদাবাদের নাম পরবর্তনের কথা ভাবছে।
তাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে তারা সব ইসলামি নাম আস্তে আস্তে পরিবর্তনের কথা চিন্তা করছে। এর থেকেই বুঝা যায় ভারত সরকার কতটা ইসলাম বিরোধী মনভাব পোষণ করছেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৪১১ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম শাসক আহমদ শাহ এ শহরটি নির্মাণ করেছিলেন। তার নামই নাম করণ করা হয়েছিলো এ এলাকার।
তবুও বর্তমান সরকারের জন্য এ নামের প্রতি ঐতিহাসিক কোনো গুরুত্ব নেই। তারা মুসলিম নাম মুছে হিন্দু নাম দিচ্ছে কারণ গুজরাট থেকে ইসলামের নাম নিশানা মিটিয়ে দিতে চায়।
এটি শুধু গুজরাটের ইতিহাসে মুসলমানদের প্রভাব ও গুরুত্ব হ্রাস করার প্রচেষ্টা নয়, বরং এর সাথে গুজরাটের মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, বৈষম্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পার্থক্যই ফুটিয়ে তুলতে চাচ্ছে।
হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রধান কারণ এখন তারা ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে ফেলছে। ইসলামি ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গে তার নামও মুছে দিতে চাচ্ছে তারা।
আহমদাবাদ থেকে ৩৫ কিলো দূরে মুবারক সাইয়েদের কবর যা এখন ধ্বংসের পথে
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৬৯সালে গুজরাটের দাঙ্গার তদন্তের পর বিচারপতি জগন মোহন রেড্ডি বলেছিলেন, এ দাঙ্গায় মুসলমানদের মসজিদ, কবরস্থান, দরগাহসহ প্রায় ১০০টি ইসলামি ঐতিহ্য ধ্বংস করা হয়েছিলো।
১৯৮০ ও ১৯৯২ সালের দাঙ্গার সময়ও এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। ২০০২ সালের দাঙ্গার সময়ও সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তারা মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করেছে। তখন মুসলমানদের প্রায় ৫০০টিরও বেশি ধর্মীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে।
২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট গুজরাট হাই কোর্টের আদেশ বাতিল করে দেয়, যার অধীনে গুজরাটের সরকার মাত্র ৫০ হাজার রুপির বিনিময়ে মুসলমানদের সম্পত্তি দখলের দাবি করে।
সে দাঙ্গায় ওয়ালি মুহাম্মদ ওয়ালির কবর ধ্বংসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে, দাঙ্গায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর মেরামতের পরিবর্তে আহমদাবাদ পৌর কর্পোরেশন রাতারাতি শক্তিশালী রাস্তা তৈরি করেছিলো।
সে স্থাপনাটি আহমদাবাদের রাজকীয় বাগান এলাকায় অবস্থিত। পুলিশ কমিশনারের অফিস থেকেও বেশি দূরে ছিল না। সে জায়গাটিকেও তারা রাতারাতি পরিবর্তন করে রাস্তা তৈরি করেছিলো।
এটিই ছিলো অনেক বড় বুযুর্গ ও কবি ওয়ালি মুহাম্মদ ওয়ালি মুহাম্মদের মাকবারা।
১৫ শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী মুসলিম স্থাপনা নিজেই ধ্বংসের গল্প বর্ণনা করছে
মোদির বক্তব্য এখানে কবরের কোনো প্রমাণ নেই
ওয়ালি মুহাম্মদ ওয়ালি, তিনি ওয়ালিয়ে গুজরাট নামেও পরিচিত ছিলো। তিনি শুধুমাত্র উর্দুর মহান কবি ছিলেন না, তিনি একজন দার্শনিকও ছিলেন।
অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া’র সাম্প্রতিক নির্বাহী পরিচালক, প্যাটেল যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এ কবরটি পুনর্গঠনের বিষয়ে কথা বলেন, মোদি প্যাটেলকে বলেছিলেন সেখানে কোনো কবির কবর ছিলো এর কোনো প্রমাণ নেই।
এভাবে দিন দিন ইসলাম ও মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলে আসছে। যদিও এ ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে ফেলার পেছনে কোনো দলিল বা প্রমাণ নেই।
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বিজেপির নীতি
নাম পরিবর্তনের রাজনীতি নিয়ে বিজেপির অবস্থান পাকাপোক্ত মনে হচ্ছে। এদিকে মুসলমানদের এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার মত অবস্থায় নেই। অন্য দিকে এ বিষয়ে বিজেপি ক্রমাগত মুসলমানদের উপেক্ষা করছে।
প্রকৃতপক্ষে, ভারতে ৮০ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে হিন্দু্ত্ববাদ জাগিয়ে দিয়ে বিজেপি আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবারও ক্ষমতায় আসার পরিকল্পনা আঁটছে বলে মনে করছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বিবিসি উর্দু