আবদুল্লাহ তামিম
আওয়ার ইসলাম
মহানবি মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সা. কে নিয়ে অপমানমূলক কথা বলার অপরাধে পাকিস্তানের মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তা খ্রিস্টান নারী আছিয়া বিবি আদালত বেকসুর খালাস করে দিয়েছে।
পাকিস্তানের একটি আদালত ২০১০ সালে প্রতিবেশীর সঙ্গে মহানবীকে নিয়ে অপমানমূলক কথা বলার দায়ে মৃত্যুদণ্ড রায় শুনান তাকে। খবর বিবিসির।
পাকিস্তানের মত একটি মুসলিম রাষ্ট্রে যার সঙ্গে ইসলাম জড়িয়ে রয়েছে, সেদেশের এক খ্রিস্টান নাগরিক এক প্রতিবেশীর কাছে শ্রেষ্ঠ নবি মুহাম্মদ সা. কে নিয়ে কটূক্তি করে পুরো জাতিকে সমবর্তিত করেছিল।
আছিয়া বিবির পূর্ণ নাম আছিয়া বিবি নরিন, ২০০৯ সালের জুনে ধর্মীয় নিন্দা মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন তিনি। তার প্রতিবেশি মুসলিমদের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায় রাসুল সা. কে নিয়ে কটূক্তি করে।
মুসলমান প্রতিবেশিরা তার নামে মামলা করলে রায় আদালত পর্যন্ত গড়াতে সময় লাগে বহু বছর। প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছিলেন, তিনি নবি মুহাম্মাদ সা. কে নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনটি আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন ।
আছিয়া বিবিকে ইসলামে রূপান্তর করা উচিত বলে অভিযোগকারীরা দাবি করেছিলেন। পরে তাকে তার বাড়ীতে মারধোর করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা দিলে নিন্দার কথা স্বীকার করেন তিনি। তদন্ত শেষে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
পাকিস্তানের মতো একটা রাষ্ট্রে তার মন্তব্যের ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ৮ বছর ধরে তাকে নির্জন কারাবাস দেয়া হয়। কিন্তু তার লিন্ক অনেক উপর পর্যন্ত থাকায় তাকে ফাঁসির আদেশ দিলেও ফাঁসি দিতে পারেনি আদালত।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ডন’ এর বরাত দিয়ে ‘বিবিসি নিউজ’ জানায়, করাচী, লাহোর ও পেশোয়ারে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে জনগণ বিক্ষোভের জন্য জড়ো হয়েছে এবং রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদে শত শত লোক সড়ক অবরোধ করে রেখেছে।
প্রধান বিচারপতি শাকিব নিসারম, যিনি এই রায়টি পড়েন, তিনি বলেন, অন্য কোনো মামলায় জড়িত না থাকলে অবিলম্বে লাহোরের নিকট শিকুপুরা জেল থেকে আছিয়া বিবি মুক্ত হতে পারেন।
আছিয়া বিবি তার বেকসুর খালাসের রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত না থাকলেও রায় নিয়ে তিনি প্রতিক্রিয়া জানান।
বার্তা সংস্থা ‘এএফপি’ এর নিকটে মুঠোফোনে তিনি জানান, ‘আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা আমি কি শুনছি, আমি এখন চলে যেতে পারব? সত্যি?,তারা আমায় বেরিয়ে যেতে দিবে?’
আছিয়া বিবির আইনজীবী, যিনি পুলিশি নিরাপত্তায় আছেন, তিনি ‘বিবিসি নিউজের’ পাকিস্তান প্রতিবেদক সিকান্দার কারমানির নিকট বলে তিনি রায় নিয়ে ‘খুশি’এবং একইসাথে কিন্তু তার এবং তার ক্লায়েন্টের নিরাপত্তার নিয়ে ভয়ে আছেন তিনি।
আছিয়া বিবি এখন কি হবে, তিনি আদালতের থেকে মুক্ত হলেও পাকিস্তানে তিনি কতটুকু নিরাপদ? বুধবারে তার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদের সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিশাল জনতা জড়ো হয়েছিল। তারা আছিয়া বিবির ফাঁসির রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকরের দাবি করেছিলেন।
তাকে বেশ কয়েকটি দেশ আশ্রয় দেওয়ার আমন্ত্রণ করেছে। এদিকে তাকে মুক্তি দেয়ার পিছনের ইতিহাস খুলে জানা যায় তার ব্যাপারে মামলা দায়ের করার পর থেকে বিশ্বের বড় বড় নেতারা তার সঙ্গ দিয়েছে।
নেতারা তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন, তারা দ্রুত পাকিস্তান ত্যাগ করার কথা বলেছেন।
আছিয়া বিবির জন্ম ১৯৭১ সালে, তার ৪ সন্তান রয়েছে, তিনিই পাকিস্তানের প্রথম নারী যাকে ব্লাসফেমি আইনে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছিল।
যারা এই আইনের অধীনে এযাবৎকালে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তাদের অধিকাংশই মুসলিম বা আহমাদী সম্প্রদায়ের সদস্য, কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকে অনেক খ্রিস্টানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
তারা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ। কাউকে কখনও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি, তবে অপরাধে অভিযুক্ত কিছু লোককে হত্যা করা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত আছিয়া বিবিকেও মুক্তি দেয়া হলো। এদিকে তার মুক্তিতে বিক্ষোভ করছে পাকিস্তানের মুসলমানরা।
সূত্র: বিবিসি, এএফপি, ডন
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসবেন ঐক্যফ্রন্টের ১৬ নেতা
-এটি