সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘আমরা ক্ষমতায় গেলে কেবল মানুষ নয়, পশু পাখি সবাই অধিকার পাবে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী। একজন খ্যাতিমান আলেমে দীন। মাদরাসা, মাহফিল ও খানকা পরিচালনার পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয়। সবকিছুই চালিয়ে নিচ্ছেন সমান তালে। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষাবোর্ডের মহাসচিব।

ঝালকাঠি ১ আসন থেকে জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। এর আগেও তিনি এখান থেকে নির্বাচন করেছেন। পেয়েছেন সম্মানজনক অবস্থান। এবার নির্বাচনে কী হবে? কেমন করবেন তিনি। ঝালকাঠি ১ নিয়ে তার কী পরিকল্পনা। এসব জানতে এক দুপুরে তার মুখোমুখি হয়েছিলেন আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ান

আওয়ার ইসলাম: আপতি তো ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, তো প্রস্তুতি কেমন চলছে?

আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী: আলহামদুলিল্লাহ নির্বাচনের প্রস্তুতি খুবই ভালো। এর আগেও ঝালকাঠি থেকে আমি নির্বাচন করেছি, এ জন্য মাঠ অনেকটাই প্রস্তুত।

রাজারপুর, কাঠালিয়া থেকে ৯৬ এ আমি নির্বাচন করেছিলাম। সেদিক দিয়ে এলাকায় আমার প্রসিদ্ধি রয়েছে। আমরা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুনিয়াতে দীনদার এবং উচ্চ পরিবারে পাঠিয়েছেন। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও দ্বীনদার ছিলেন। হজরত থানবী রহ এর সিলসিলা। বর্তমানে মরহুম পীর সাহেব হযরত ইসহাক রহ. এর দিক থেকেও আমাদের অনেক পরিচিতি আছে।

সাংগঠনিক দিক থেকেও আমরা যথেষ্ঠ মজবুত। ইসলামী আন্দোলন ও সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা-ওয়ার্ড পর্যায়েও কমিটি রয়েছে। আশা করি মানুষ যদি এবার নিজের ভোট দিতে পারে তাহলে তারা ইসলামী আন্দোলনকে এখানে জয়ী করবে।

আওয়ার ইসলাম: এমপি নির্বাচনে একজন প্রার্থীকে জয় লাভ করতে বিপুল পরিমাণ ভোটের দরকার হয়, সেটা তিন থেকে চার লাখের বেশি হয় অনেক সময়। তো এ পরিমাণ ভোট কী আপনার এলাকায় আপনি পাবেন?

নুরুল হুদা ফয়েজী: আমার এলাকায় ভোটের সংখ্যা কম। দুই লাখের মতো। এবার অবশ্য কিছু বাড়তে পারে। তাই এখানে একজন প্রার্থী পৌনে এক লাখ ভোট পেলেও জায়ী হয়ে যায়। কেননা প্রার্থী থাকে অনেক।

আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা এখানে মজবুত। আর এখানকার বেশির ভাগ মানুষ ধার্মিক। তারা সৎ যোগ্য প্রার্থী পছন্দ করে যদি নিজেদের ভোট দিতে পারে।

আওয়ার ইসলাম: আপনার আসনে আপনার দলের কী পরিমাণ ভোটার রয়েছে?

নূরুল হুদা ফয়েজী: আমাদের নির্দিষ্ট ভোট প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি। এরপর সাধারণ মুসলমানদের যদি আমরা ভোটের আমানতটা বুঝাতে পারি এবং যারা দেশে শান্তি চায় তাদের বুঝাতে পারি পরিমাণটা বেড়ে যাবে।

আমাদের আরেকটা প্লাস পয়েন্ট হলো, বহু অমুসলিমও ভোট দেয়। কারণ তারা জানে ইসলাম ক্ষমতায় এলে তারা কতটা নিরাপদ থাকবে।

রোকন রইহান: ইতোপূর্বেও আপনি এখান থেকে নির্বাচন করেছেন তো এলাকায় আপনি কী ধরনের কল্যাণ বা উন্নতি করেছেন যেটা দেখে জনগণ আপনাকে ভোট দেবে?

নূরুল হুদা ফয়েজী: এলাকার উন্নয়ণমূলক কাজ যেমন রাস্তাঘাট বা এধরনের যা কিছু আছে সেগুলো সাধারণ সরকারি অর্থায়নেই হয়। ব্যক্তিগতভাবে কাজ যা হয় তা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।

আমরা ক্ষমতায় গেলে এসব উন্নয়ন তো বেশি হবে। কারণ অর্থ মেরে খাওয়ার মতো কাজ হবে না।

আমরা যেটা করছি তা হলো মানুষের নীতি বা আদর্শগত উন্নতি। মানুষের নৈতিক চরিত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তালিম তরবিয়াত, ওয়াজ মাহফিল এবং নিরেট দরিদ্র পরিবার যারা তাদের কিছু কিছু আর্থিক সহায়তা হচ্ছে আমাদের থেকে।

আমরা এখন সাধারণ মানুষেরই কাতারে। আমরা এমন ধনিক শ্রেণি নই যে অবৈধ পয়সায় শিল্প কল কারখানা করে ফেলেছি। তবে একটা সত্য বিষয় হলো, আমাদের সঙ্গে জনসাধারণে আত্মিক সম্পর্ক বেশি। ধনিক শ্রেণির সঙ্গে সেই সম্পর্কটা থাকে কম। তারা থাকেন বিলাশী জীবনে।

রোকন রাইহান. কিন্তু এখন তো দেখা যায় মানুষ অনেক স্বার্থপর। তারা ভোট দেয়ার আগে দেখে আমি কী পেলাম। তো এ ক্ষেত্রে আপনারা কি একটু পিছিয়ে না?

নূরুল হুদা ফয়েজী: না! মানুষ এখন শুধু অর্থলোভে ভোট দেয় না। মানুষরা যখন ভোটের অধিকার পেয়ে যায় তখন তারা নিজেদের মনের মানুষকেই ভোট দেয়। অর্থ কড়ি অনেকে ছড়ায় কিন্তু সবাই তার পেছনে ছোটে না।

হয়ত যাদের জ্ঞান বিবেক কম তারা অর্থের লোভে পড়ে ভোট দেয়। কিন্তু প্রকৃত ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ হয়েই নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়। হয়তো অনেকের অর্থ নেয় কিন্তু ভোট দেয় সৎ যোগ্য ব্যক্তিকে।

আওয়ার ইসলাম: ভোট যে একটি আমানত এর গুরুত্ব আপনারা দেখেছি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন গত নির্বাচনগুলোতে, এটাকি দ্রুত মানুষকে বোঝানো সম্ভব?

নূরুল হুদা ফয়েজী: অবশ্যই সম্ভব। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আমাদের কঠোর বক্তব্য বিবৃতির কারণে মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছে। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। সেটা হলে মানুষ তো ভোট দিতে পারছে না। চলমান ভোটব্যবস্থায় দেখা যাচ্ছে একজনের ভোট অন্যজনে দিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য মানুষ ভোটের প্রতি অনেক সময় নিরাশ হয়ে যাচ্ছে।

আমরা চেষ্টা করছি জাতীয় নির্বাচনে যেন এমনটা না হয়। দেশে এসব নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। তর্ক বিতর্ক হচ্ছে। যদি ভোটের সুষ্টু পরিবেশ শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়ে যায় এবং মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে তাহলে বলতে পারি ইসলামী আন্দোলন এবার অনেক আসন লাভ করবে।

আওয়ার ইসলাম: কী পরিমাণ আসন পেতে পারে, তার কি কোনো ধারণা পেয়েছেন?

নূরুল হুদা ফয়েজী: সেটা এখনই বলা যাবে না। তবে দক্ষিণ অঞ্চলের অধিকাংশ জায়গায় ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে বিপুল জনমত তৈরি হয়েছে। গত ইউপি নির্বাচনে অনেক ইউনিয়নে আমাদের প্রার্থী শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছেছেন।

বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান নির্বাচিতও হয়েছেন। তৃণমূলে দলের ভীত মজবুত হলে তো জাতীয় নির্বাচনে ভালো প্রভাব থাকে।

আওয়ার ইসলাম: জাতীয় নির্বাচনে ভোট সুষ্টু হবে তার তো কোনো গ্যারান্টি এখনো নেই।

নূরুল হুদা ফয়েজী: সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণগুলো লক্ষ করুন, তিনি বলছেন জনগণ যদি আমাকে ভোট দেয় তবেই আমি ক্ষমতায় যাবো। এটা ইতিবাচক দিক। এমনটা যদি সত্য হয় তাহলে ভোট সুষ্ঠু হতে পারে।

আওয়ার ইসলাম: সুষ্ঠু না হলে ভোট কেন্দ্র পাহাড়া দেয়ার জন্য আপনাদের নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে কিনা?

নূরুল হুদা ফয়েজী: হ্যাঁ আমাদের সেন্টার কমিটি আছে। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী আছে যারা নির্বাচনের সময় কাজ করে থাকে।

তবে ভোট পাহাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা ততটুকুই করতে পারি যতটুকু নিরাপদ। আমরা অবশ্যই কোনো স্বশস্ত্র বাহিনী যদি থাকে তার মোকাবিলা করতে পারবো না। কারণ আমরা অস্ত্রের রাজনীতি করি না। সংঘর্ষ চাই না।

আওয়ার ইসলাম: আপনার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে চাই, কিভাবে রাজনীতির মাঠে এলেন?

নূরুল হুদা ফয়েজী: ছাত্র জীবন থেকেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মী ও এলাকার দায়িত্বশীল হিসেবে যুক্ত ছিলাম। তবে ১৯৯৬ তে আমি ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবের দায়িত্ব পাই। ২০১৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করি।

আমি আগে থেকেই চরমোনাইয় কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষাবোর্ডের মহাসচিব ছিলাম। সারাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়েই আমার আগ্রহ বেশি ছিল। এ জন্য পীর সাহেব চরমোনাই সিদ্ধান্ত নিলেন আমি যেন বোর্ডের মহাসচিবেরই দায়িত্ব পালন করি। দলের মহাসচিব অন্যজনকে করা হোক যেন তিনি নির্বিঘ্নে কাজ করে যেতে পারেন।

আওয়ার ইসলাম: রাজনীতিবিদদের তো একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে আসতে হয়, আপনি প্রথম চাঞ্চেই মহাসচিব হয়ে গেলেন?

নূরুল হুদাস ফয়েজী: আমি ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে ছিলাম। তবে কেন্দ্রীয় বড় কোনো পদে ছিলাম না। হয়তো দৃষ্টিভঙ্গিগতভাবে একটু আলাদা ছিলাম। অবশ্য বরিশাল জেলার দায়িত্বে ছিলাম।

তবে আমার মুরব্বি অভিভাবকগণ এক সময় মনে করলেন আমাকে দলের মহাসচিব করলে ফায়দা হবে। সে কারণে সরাসরি মহাসচিব করা হয়। আমি তার যথেষ্ট প্রমাণও রেখেছি।

আওয়ার ইসলাম: সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী আন্দোলনের একটা গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি। দ্রুত অগ্রগতির পেছনে কী কারণ?

নূরুল হুদা ফয়েজী: বর্তমান সময়ে বা বলতে পারি চলমান গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় মানুষ তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত। সরকার তাদের অধিকার দিতে ব্যর্থ এমনকি গোটা দেশ ভয়াবহ দুর্নীতিতে আক্রান্ত। এখন দেশে উন্নয়ন নেই আছে মুখে মুখে বক্তব্য।

এ কারণে সাধারণ মানুষের মন তারা জয় করতে পারেনি। মানুষ এখন বিকল্প কিছু চায় যারা তাদের অধিকার দেবে।

এদেশে ৯০ ভাগ মুসলমান। তাদের জানে ইসলাম ক্ষমতায় থাকাকালিন মানুষ কেমন ছিল। এসব আলোচনা যখন গণমানুষের সামনে গেছে তারা একটা আস্থা পেয়েছে।

আপনার মাদরাসা হিসাব রাখতে এসে গেল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

আসলে মুসলিমরা তো সব সময় ইসলামের পক্ষে রয়েছে। কিন্তু প্রচলিত দলগুলো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি মিথ্যা আস্ফালনে তাদের ভুলিয়ে রাখে, যে কারণে মানুষ সঠিক রায় দিতে পারে না।

হাফেজ্জি হুজুরকে দেখুন, হঠাৎ করে নির্বাচনে এসে তিনি প্রায় রাষ্ট্রপতি হয়ে যাচ্ছিলেন। মাত্র অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। অনেকেই মনে করে হারিয়ে দেয়া হয়। তো মানুষ কিন্তু ইসলামকে মনোনীত করতে প্রস্তুত ছিল। এখনও আছে। কিন্তু তারা সুযোগটা পাচ্ছে না।

আওয়ার ইসলাম: ইসলামি কোনো দল ক্ষমতার কাছাকাছি গেলে তাদের বিপরীত শক্তিও দাঁড়িয়ে যায়। এটা মোকাবেলায় আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

নূরুল হুদা ফয়েজী: হ্যাঁ বিষয়টি সত্য। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনটা দেখতে পাচ্ছি। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অন্য অনেক দেশের চেয়ে একটু ভিন্ন। মিশরে আমরা এমনটা দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় আছে তারা আবার ইসলাম মানেন এবং ইসলামি মনোভাোপন্ন হিসেবে প্রকাশ করেন নিজেদের।

নির্বাচনি ইশতেহারেও তারা বলছে, ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো আইন করবে না। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা আলেমদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাই বাংলাদেশের হিসাবটা অন্যরকম।

যারা ক্ষমতায় ইতোপূর্বে থেকেছেন তারা ইসলামের কথা বলেই থেকেছেন। সুতরাং নির্ভেজাল খাঁটি ইসলামি কোনো দল ক্ষমতায় এলেও বেশি সমস্যা হবে বলে মনে করি না।

এটার প্রমাণও রয়েছে, ইতোপূর্বে আমাদের কিছু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন যারা দায়িত্ব পালন করছেন নির্বিঘ্নে। এর মধ্যে কমলনগর থানা থেকে মাওলানা সাইফুল্লাহ হাতপাখা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এলাকায় এমনভাবে সেবামূলক কাজ করছেন যাতে সবাই অত্যন্ত খুশি।

চরমোনাই ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আবুল খায়ের সাহেব চেয়ারম্যান আছেন। তিনিও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এখানে হিন্দুরাও আমাদের ভোট দিয়েছেন।

এ কারণে বলতে পারি ইসলাম ক্ষমতায় এলে তার সুফল পেয়ে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য জনগণই জান মাল দিয়ে লড়বেন।

আওয়ার ইসলাম: কিন্তু আপনাদের আন্তর্জাতিক লবিংটা কেমন?
নূরুল হুদা ফয়েজী: এগুলো ধীরে ধীরে বিল্ডাপ হচ্ছে। আর সরকারকে বাইপাস করে আন্তর্জাতিক লবিং সব ক্ষেত্রে সুখকর হয় না। তাই আমরা মনে করি ক্ষমতায় কেউ এলে আন্তর্জাতিক লবিং তৈরি হয়ে যাবে।

আওয়ার ইসলাম: বরিশাল ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান কোন কোন বিভাগে মজবুত?

নূরুল হুদা ফয়েজী: উত্তরবঙ্গে আমাদের মজবুত অবস্থান রয়েছে। কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট এসব জেলায়। লালমনিরহাটে আমাদের একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

তাছাড়া খুলনা বিভাগে আমাদের কার্যক্রম বেশ শক্তিশালী। বরিশালে তো মাশাল্লাহ অনেক মজবুত। ঢাকা বিভাগেও উল্লেখ করার মতো অবস্থান। ধীরে ধীরে অন্যান্য জেলা ও বিভাগগুলোতেও শাক্তিশালী হচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম: দলে আপনার সময় এবং এখনকার সময়ের মধ্যে বড় কোনো পার্থক্য দেখেন?

নূরুল হুদা ফয়েজী: কিছু পার্থক্য তো অবশ্যই দেখি। একটা সময় আমাদের অনেক কষ্টে কাজ করতে হতো। আর্থিক অবস্থার খুবই সঙ্কট ছিল। এখন তো আলহামদুল্লিাহ আল্লাহ পাক একটু স্বচ্ছলতা দিয়েছেন দলে। অফিস হয়েছে। যারা দায়িত্ব পালন করছেন ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন।

আওয়ার ইসলাম: আপনার এলাকার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। সেখানে নির্বাচনের জন্য কতটুকু সময় দিচ্ছেন, সাড়া কেমন পাচ্ছেন?

নূরুল হুদা ফয়েজী: আমি আগেই বলেছি, এলাকায় আমাদের সর্বদা কাজ রয়েছে। তারপরও আমি মাসের প্রায় অর্ধেক সময় সেখানেই ব্যয় করছি।

আর সাড়া কেমন পাচ্ছি সেটা বলতে গেলে কয়েকদিন আগের একটা ঘটনা বলতে হয়। একটি বড় দলে ৪০ বছরের মতো যুক্ত থাকা এক কর্মী সেদিন আমাদের দলে যোগ দিয়ে বললেন, আমি যেন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করলাম।

এভাবে নানা বয়সী, নানা শ্রেণির পেশার মানুষের সমর্থন আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি।

আওয়ার ইসলাম: এইযে চতুর্মখী ব্যস্ততা এতে পরিবারকে কতটুকু সময় দিতে পারেন?

নূরুল হুদা ফয়েজী: এখন তো খুব একটা সময় দিতে পারি না। সব সময় সফরের মধ্যেই থাকতে হয়। তবে একটা সময় তো পরিবার সঙ্গেই ছিল। সে হিসেবে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।

আওয়ার ইসলাম: তারা সন্তুষ্ট কিনা?

নূরুল হুদা ফয়েজী: সন্তুষ্ট তো অবশ্যই। আমরা তো সবসময় তাদের ভালো থাকার ফিকির করি। অল্পে তুষ্ট থাকার পরামর্শ দেই। হয়তো আর্থিকভাবে এতটা স্বচ্ছলতা আমরা সন্তানদের দিতে পারিনি। কিন্তু এতে তাদের আফসোস নেই।

আমার বাবা মা মারা যায় সেই ছোট্ট বেলায়। যখন ৫ম শ্রেণি পড়ি। তবু আল্লাহ আমাকে এতদূর এনেছেন। আমাদের ছেলে মেয়েদের বাবা মা তো এখনো বেঁচে আছে। তাদের অসন্তুষ্ট থাকার কোনো কারণ নেই আলহামদুলিল্লাহ।

আওয়ার ইসলাম: এইযে ব্যস্ততার জীবন চলছে, কেমন লাগে?

নূরুল হুদা ফয়েজী: খুবই ভালো লাগে আলহামদুলিল্লাহ। দীনের কাজ করে যাচ্ছি, আল্লাহ করাচ্ছেন, এ ব্যস্ততায় ক্লান্তি নেই। যতদিন সুস্থ আছি এ কাজ করে যেতে চাই।

আওয়ার ইসলাম: দেশের জন্য এমন কোনো স্বপ্ন দেখেন যেটা বাস্তবায়ন করে যেতে চান।

নূরুল হুদা ফয়েজী: সবার আগে দেশটাতে শান্তি দেখতে চাই। সেটার শুরু করতে চেয়েছি আমার এলাকা থেকে। এলাকাটিকে এমন মডেল এলাকা বানাতে চাই যাতে সারা দেশের জন্য উদাহরণ হয়।

আমার পুরো এলাকাটার সংক্ষেপ একটা নাম দিয়েছি- কারিমপুর। কাঠালিয়া/কানুদাসকাঠির কা, ভান্ডারিয়ার রি, মঠবাড়িয়ার ম, আর আমার থানা রাজাপুরের পুর মিলিয়ে কারিমপুর।

চতুর্দিকে নদীবেষ্টিত জায়গা। আমি এই ছোট্ট এলাকাটাতে মানুষের সুখে দুঃখে সাথী হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা যেন একটা অনন্য আদর্শ এলাকা হিসেবে তৈরি হয়। যেন একটা ব্যতিক্রম এলাকা হয় এবং আমার জীবনীতে ইতিহাস হয়ে থাকে।

আওয়ার ইসলাম: এমন আদর্শ এলাকা বাস্তবায়নের জন্য আপনি কী কী করছেন?

নূরুল হুদা ফয়েজী: অনেক কিছুই করছি যেগুলো এলাকার মানুষ জানে। একটা সুন্দর শিক্ষা পদ্ধতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এলাকায় দরিদ্র শ্রেণির জন্য সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা চালু করা হয়েছে। রিকশা, ভ্যান, সেলাইমেশিন ইত্যাদি দিয় দরিদ্রদের সাবলম্বী করা হচ্ছে যাতে সবাই স্বচ্ছলভাবে চলতে পারেন।

সর্বপরি পুরো এলাকাকে হালালভাবে পরিচালনার একটা রূপরেখা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।

আওয়ার ইসলাম: শেষ করার আগে আমাদের পাঠকদের উদ্দেশে বা আপনার এলাকার উদ্দেশে বিশেষ কোনো ম্যাসেজ দিতে চান?

নূরুল হুদা ফয়েজী: দেশবাসীকে একটা কথা বলতে চাই, দেশকে মনে প্রাণে ভালোবাসতে হবে। দেশ ও দেশের মানুষের ভালোবাসা অন্তরে না থাকলে সে প্রকৃত মানুষ হতে পারে না।

আরেকটি কথা বলবো, অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে, ইসলাম যদি বিজয়ী হয় তাহলে কিছু মানুষ সুবিধা পাবে। সাধারণ মানুষ সবার সুযোগ সুবিধা নাই। বিশেষ করে যারা বিধর্মী তারা সমস্যায় পড়বে এমন প্রচার রয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র।

আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে মুসলিম অমুসলিম সবাই তাদের অধিকার ফিরে পাবে। কেবল মানুষ নয় মানব দানব পশু পাখি সবার জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে ইসলামি রাষ্ট্রে। একটু ঘাটাঘাটি করলেই বিষয়টি ক্লিয়ার হবে।

ইসলাম যদি বিজয়ী হয় শুধু রাস্তা ঘাটের উন্নতি নয় মানুষের চরিত্রেরও উন্নতি হবে। মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্ব তৈরি হবে। দেশ সার্বিকভাবে সমৃদ্ধ ও উন্নত হবে। মালিক শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য দূর হবে। সব শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হবে।

আরেকটা বড় কাজ হলো, বিলাশী জীবন আমরা পরিতেজ্য করবো। ক্ষমতায় যারা যাবে তারা খাদেম হিসেবে থাকবে জনগণের। দেশ দীন দরদি হিসেবে তারা কাজ করবে। এ জন্য সবার প্রতি আহ্বান থাকবে ইসলামকে বিজয়ী করে দেখুন একবার।

আওয়ার ইসলাম: আমাদের সময় দেয়ার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।

নূরুল হুদা ফয়েজী: আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ, আমার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য, আমার কথাগুলো তুলে ধরার জন্য। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন।

‘শাপলার ঘটনার সঙ্গে কওমি স্বীকৃতির সম্পর্ক নেই; এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন’

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ