আব্দুল্লাহ আফফান: প্রাচীনকাল থেকে মানুষ নিজের শক্তি দেখিয়ে শত্রু কে ভয় দেখিয়ে আসছে। তেমনিভাবে বিভিন্ন দেশ তাদের সামরিক শক্তি জানান দিচ্ছে অন্যান দেশগুলোকে।
সামরিক ব্যয়ের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কিছু যানবাহনের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে বিমানবাহী রণতরী, সাবমেরিন ও ব্যয়বহুল বিমান। এ তালিকায় তুলে ধরা হলো তেমনি ১০টি ব্যয়বহুল সামরিক যানের কথা।
১. জেরাল্ড ফোর্ড: মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার। এর দৈর্ঘ্য ১,১০৬ ফুট। এটি রাডারে ধরা পড়ে না। দুটি রানওয়ে রয়েছে এর ওপরে।
জাহাজটিতে পাঁচ হাজার মানুষ কাজ করেন, তাদের মধ্যে চার হাজার মেরিন সেনা ও নাবিক। এর ওজন এক লাখ টন। ৮০টি বিমান ধারণক্ষমতা রয়েছে এটির।
২. কুইন এলিজাবেথ: যুক্তরাজ্যের বিমানবাহী রণতরী এইচএমএস কুইন এলিজাবেথ। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯.৩ বিলিয়ন ডলার। এর দৈর্ঘ্য ৯১৮ ফুট। ৬৫ হাজার টন ওজনের এ বিমানবাহী রণতরীটি ১০ হাজার মাইল চলতে পারে কোনো জ্বালানি না নিয়েই।
জাহাজটির চারটি শক্তিশালী জেনারেটর রয়েছে। এগুলো একসাথে চালু করা হলে এটি দ্রুত গতিতে চলতে এবং পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম।
৩. ডিডিজি ১০০০ জুমওয়াল্ট-ক্লাস ডেস্ট্রয়ার: মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ডিডিজি ১০০০ জুমওয়াল্ট-ক্লাস ডেস্ট্রয়ার। প্রাথমিকভাবে এর নির্মান ব্যায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার ধরা হলেও পরবর্তীতে এতে বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত করতে নির্মাণব্যয় দাঁড়িয়েছে সাত বিলিয়ন ডলার।
এতে যোগ করা হয়েছে বিশ্বখ্যাত রেইলগানও। এছাড়া এটি শত্রুর রাডারেও সহজে ধরা পড়বে না।
৪. এইচএমএস অ্যাসটিউট: ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের এ সাবমেরিনটি একটি নিমিজ ক্লাস সাবমেরিন। এটি ৩০ নট বেগে চলতে পারে। এর টর্পেডো ৩০ মাইল দূর থেকেও শত্রুপক্ষের জাহাজ ডুবিয়ে দিতে সক্ষম।
এর মিসাইলের পাল্লা এক হাজার মাইল। এছাড়া নানা আধুনিক যন্ত্রপাতিও রয়েছে এতে।
৫. চার্লস ডি গাউলি: চার বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ফ্রান্সের এ বিমানবাহী রণতরিটি। এটি বাস্তবে ১৯৮৬ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হয়। তবে নানা কারণে এটি কাজ শুরু করতে পারেনি।
এরপর নানা সমস্যা কাটিয়ে সম্প্রতি পারমাণবিক শক্তিচালিত এ জাহাজটি কাজ শুরু করেছে।
৬. ইউএসএস আমেরিকা: ৩.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ বিমানবাহী রণতরীটি নির্মিত হয়েছে। এটি গ্যাস টারবাইন জেনারেটরের সাহায্যে পরিচালিত হয়।
এর অপারেশনাল রেঞ্জ ১১ হাজার নটিক্যাল মাইল। এতে ৩৪টি বিমান অবস্থান করতে পারে।
৭. ভার্জিনিয়া ক্লাস সাবমেরিন: আড়াই বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের এ সাবমেরিনটি তৈরি করতে। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের অ্যাটাক সাবমেরিন এটি।
এটি রাডার ফাঁকি দিয়ে চলতে সক্ষম। এতে একটি পারমাণবিক রিঅ্যাকটরও রয়েছে, যা দিয়ে এটি দীর্ঘদিন জ্বালানি না নিয়েই চলতে পারে।
৮. লিয়াওনিং: এ বিমানবাহী রণতরীটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২.৪ বিলিয়ন ডলার। ভ্যারিয়াগ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নাম দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের এ বিমানবাহী রণতরীটি যখন তৈরি হচ্ছে, সে সময়েই ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় এবং ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এরপর এটি চীন কিনে নেয়। এরপর তার কাজ সম্পন্ন করে লিয়াওনিং নাম দেওয়া হয়। ৯৯৯ ফুট দৈর্ঘ্যের এ জাহাজটির ওজন প্রায় ৬৫ হাজার টন।
৯. বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোম্বার: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ বোমারু বিমান প্রতিটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ২.৪ বিলিয়ন ডলার। এটি রাডারে ধরা পড়ে না। এছাড়া পারমাণবিক হামলার রেডিয়েশনেও এটি নিরাপদে থাকতে পারে।
৫০ হাজার পাউন্ড ওজনের অস্ত্র বহন করতে পারে বিমানটি। একবার সম্পূর্ণ জ্বালানি নিয়ে ছয় হাজার মাইল চলতে সক্ষম বিমানটি।
১০. আইএনএস বিক্রমাদিত্য: ভারতের এ বিমানবাহী রণতরীটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২.৩৫ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া থেকে কেনার পর এতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে।
৪৪ হাজার টন ওজনের এ জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৯৩২ ফুট। একনাগাড়ে সাত হাজার নটিক্যাল মাইল চলতে সক্ষম জাহাজটি। এতে ৩০টিরও বেশি বিমান ও হেলিকপ্টার বহন করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: দ্য রিচেস্ট