যুবাইর ইসহাক
আওয়ার ইসলাম
প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত সিলেট। পাহাড়, ঝর্ণা, নদী আর চা বাগান দিয়ে বেড়ানো সিলেটের মনোমুগ্ধকর রূপ। নান্দনিক মনকাড়া দৃশ্য চোখে পড়ে সিলেটের ভাঁজে ভাঁজে। যেন কেউ হাত বাড়িয়ে ডাকে কোনো এক কল্পরাজ্যে।
অপার মায়াবী প্রকৃতির ডাকে ছুটেও যান ভ্রমণপিপাসুরা। জাফলং-এর স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটেন। পাহাড় বেয়ে চা বাগান ঘুরে বেড়ান। বিছনাকান্দির পাথরের শীতল বিছানায় এলিয়ে দেন নিজেকে।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের দিকে তাকিয়ে থাকেন মুগ্ধ চোখে। দাঁড়ান হযরত শাহজালাল রহ.-এর মাজার জিয়ারতে।
সাধারণত সিলেট সবসময়ই পর্যটদের পছন্দের প্রধান লিস্টে। তাই বছরের সকল দিনগুলোতেই সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষণীয়। সুযোগ পেলে ভ্রমণপিপাসুরা ওদিকে পা বাড়ান।
সিলেটের সেরা যে পাঁচ পর্যটনকেন্দ্র পর্যটদের আকর্ষণস্থল। পুরো বছরেই যে স্থানগুলো থাকে লোকে লোকারণ্য।
দরগাহে হযরত শাহজালাল রহ.
৩৬০ আউলিয়া নিয়ে ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালাল রহ. ইসলাম প্রচারের জন্য সিলেটে আসেন। রাজ্য জয় করে ইসলাম প্রচারের কাজে অবশেষে থেকে যান এখানেই।
১৩৪৬ সালে তাঁর পরলোক গমনের পর সিলেটেই তাকে দাফন করা হয়। বর্তমানে সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র- দরগায় হযরত শাহজালাল ইয়ামনী রহ. মাজার।
নান্দনিক মসজিদ, উড়াউড়ি করা রঙবেরঙের শতশত কবুতর, ঝরণা, মাজার জিয়ারত ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ছুটাছুটিতে দিনরাত ব্যস্ত থাকে এ দরগা শরীফ।
তাঁর মাজারের পাশেই কাসিমুল উলুম হযরত শাহজালাল রহ. দরগা মাদরাসা। প্রতিদিনই শতশত পর্যটক ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছুটে আসেন সিলেটের এই দরগায়। মাজার জিয়ারত ও ঐতিহ্যবাহী দরগা দেখে মুগ্ধ হয় পর্যটকচোখ।
জাফলং
সিলেট নগরীর ৬০ কিলোমিটার অদূরে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে- রূপ মেলে ধরে চেয়ে আছে জাফলং। জাফলং-কে বলা হয় প্রকৃতিকন্যা।
তার বাস্তবচিত্র ফুটে উঠে জাফলং-এর দিকে তাকালে। ভারতের পাহাড় ভেদ করে আসা পিয়াইন নদী ও তার তলদেশে সারি সারি করে সাজানো সাদা নুড়ি পাথর চোখ জুুড়িয়ে দেয়।
ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হিম করা স্ফটিক স্বচ্ছ পানি। যা ক্লান্ত প্রাণকে সজিব করে তোলে মুহূর্তেই। পর্যটকরা জাফলং পৌঁছে আর অপেক্ষা করেন না, ঝোপ করে ঝাপ দেন মিহিজলে।
সীমান্তের ওপারে ডাউকি নদীর বুকে দুই পাহাড়ের উপর ভর করে দাঁড়ানো ঝুলন্ত ব্রিজ। এই ঝুলন্ত ব্রিজটা বাড়িয়ে দিয়েছে জাফলং-এর সৌন্দর্য।
জাফলংকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন এলাকা হিসেবেও ধরা হয়। তাই তো ভারত-বাংলাদেশের দুই সীমান্তেই দুই দেশের পর্যটকদের প্রচুর ভীড় লক্ষ্য করা যায়।
বিছনাকান্দি
শ্যামল সিলেটের আরেকটি অপার সৌন্দের্যের নাম বিছনাকন্দি। নগরীর প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে বাঙলাদেশ-ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে এটির অবস্থান। দূর থেকে মনে হবে সামনে কোথাও আকাশের মেঘ জমিনে নেমে এসেছে।
কাছে গেলে- এটিই বিছনাকান্দি। এটিই মেঘালয়। ছোট-বড়ো অগণিত সাদা-কালো পাথরের বিছানো জল-পাথরের বিছানা। দীর্ঘ পথ পারিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন একজন পর্যটক বিছনাকান্দিতে পৌঁছেন; নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেন না।
গা এলিয়ে দেন প্রকৃতির মোহিত বিছানায়। নিজেকে পানিতে ডুবিয়ে চোখ বুজে আনন্দে মজে উঠেন। নিমজ্জিত হন জলমগ্নে।
রাতারগুল
স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটি গাছ ‘রাতা গাছ’ নামে পরিচিত। সেই রাতা গাছের নামানুসারে জলাবনের নাম রাতারগুল। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টও বলা হয়।
বাংলাদের একমাত্র ও বিশ্বের অন্যতম একটি জলাবন এটি। সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এই জলাবনের অবস্থান। চিরসবুজ এই বন শুয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত এবং চেঙ্গির খালের সাথে সংযুক্ত।
নৌকায় করে এই নিঝুম জলাবনটাকে দেখার আনন্দটাই আলাদা। নিম্নাংশটা পানিতে ডুবিয়ে বিশাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ গাছগুলো। গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে নৌকা করে ঘুরে বেড়ানো গা’কে কেমন ছমছম করে তোলে। বর্ষায় এই বনটা হয়ে ওঠে আরো জীবন্ত।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
পাথারিয়া পাহাড়ের উপর দিয়ে বহমান গঙ্গামারা ছড়া। এ ছড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হয়ে মিশেছে মাধবছড়ায়। আর মাধবছড়া প্রবাহিত হয়ে হারিয়ে যায় পশ্চিমের হাকালুকি হাওরে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। পাথারিয়া পাহাড় থেকে প্রায় ১৬২ ফুট নিচে গড়িয়ে পড়ে এর নির্মল জলধারা। সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলিতে অবস্থান ইকোপার্কের।
আর ইকোপার্কের মূল আকর্ষণই এই জলপ্রপাত। প্রপাতের ঝনঝন শব্দে হৃদয়মন চমকে উঠে। পার্কে ঢুকে একটু হেঁটে যেতে হয় এই জলপ্রপাতের নিকট।
কিন্তু ঢুকার পর থেকে কানে আসতে থাকে জলের ঝরঝর ধ্বনি। হৃদয়কে খুব সহজে টেনে নেই এই প্রপাতের কাছে। চোখগুলো কেবল তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে এই নির্মল সৌন্দর্যের দিকে।
আরও পড়ুন
আমার জীবনের প্রথম প্রাইভেটকার ভ্রমণ
মাত্র দেড় হাজার টাকায় বিমান ভ্রমণ
-আরআর