মুজাহিদুল ইসলাম: ইয়ামেন যুদ্ধের খবর শুনে শুনে আশাহত হচ্ছিলাম, বুঝলাম দিগন্তে আমার ভবিষ্যত নির্মাণের মতো কিছু নেই।
দেড় বছর আগে সিরিয়ান ও ইরাকি কিছু বন্ধুর কাছ হতে ঋণ নিয়ে দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলাম। তারপর ইস্তাম্বুলে ভার্সিটির পড়ালেখা বন্ধ রেখেই সাগর পথে পালিয়ে গ্রীস অতপর সুইডেন পৌঁছাই।
এভাবেই ছাব্বিশ বছর বয়সী ইয়ামেনি যুবক আয়মান খালেদি তার জীবনকথা বর্ণনা করেন।
ইউরোপগামী আয়মানের পথ মোটেও সহজ বা ফুলশয্যা ছিল না। আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাতকারে সে জানায়, ইউরোপে পৌঁছার চার মাস পর তার মাথায় ক্যান্সারের জার্ম পাওয়া যায়, যদিও সে পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে ওঠে।
বনের ভেতর শরণার্থীদের জন্য নির্ধারিত শিবিরে বরফ, ঠাণ্ডা আর চরম একাকিত্ব তাকে শারিরিক ও মানসিকভাবে পর্যদস্তু করে ফেলে।
ইয়ামেনি যুবকদের কেউ বা গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতায় দেশ ছাড়ছে আবার সৌদি আরবে অবস্থানরত কোনো কোনো ইয়ামেনি যুবক সৌদিসরকারে দমনপীড়নমূলক ব্যবস্থার কারণে ইউরোপের পথে পা বাড়ায়।
কিন্তু ভাগ্য যার অনুকূলে, সেই পারে স্বপ্নের ইউরোপে পৌঁছতে আবার কেউ একাধিক বার ব্যর্থ হয় অনেকে তো স্বপ্নকে ছুঁতে চেষ্টা করে চলছে।
এডভেঞ্চার ও দুঃখ-দুর্দশা
জীবনবাজি রেখে ইউরোপে পাড়ি দেয়ার চেষ্টাকারী তিন যুবক তুরস্ক থেকে সমুদ্রপথে পালিয়ে গ্রীসের নদী সীমায় আটক হয়।
তারপর তাদের তুরস্কের ইজমিরে ফিরিয়ে এনে আরব ও সিরিয়ান যুবকদের সাথে সিরিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। দুর্ভাগা এই ইয়ামেনি যুবকদের একজন হলো আহমদ মুহরিম।
অজানা ভবিষ্যত
ইয়ামেনের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী আলাবি বাফাকিহ এ বিষয়ে আল জাজিরাকে জানান, সম্প্রতি ইউরোপে যাওয়া যুবকদের ব্যাপারে তাদের কাছে সুনিশ্চিত তথ্য নাই।
বিশ্বজুড়ে ইয়ামেনি সম্প্রদায়ের সুপ্রীম কাউন্সিলের মহাসচিব মাকবুল রেফায়ি আল জাজিরাকে জানান, ইউরোপের সুইজারল্যান্ড, গ্রীস, ফ্রান্স, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া, হল্যান্ড,সুইডেন ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ছয় হাজার যুবক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
তবে আগের থেকে আরো প্রায় পঞ্চাশ হাজার ইয়েমেনি এ সকল দেশগুলোতে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রাতহবিলের নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী ইয়ামেনের ভেতর ইয়ামেনি যুবকরা দরিদ্র, বেকারত্ত্ব ও অর্থনৈতিক ধসের কারণে চরম অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবেলা করছে, যার কারণে ইয়ামেনের আশি শতাংশ মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে।
তারা যে শুধু অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার তা নয়, দেশের পাসপোর্টি ইস্যুর করার মতো অনেক সেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, যুদ্ধের কারণে সকল বিদেশি দূতাবাস ইয়েমেন ত্যাগ করেছে, অধিকাংশ বিমানবন্দর বন্ধ আবার যে কয়টি এয়ারলাইন্সের বিমানের টিকিট পাওয়া যায়, তাও খুবই উচ্চহার। এসবকিছু যুবকদের বিপদসংকুল সফরে উদ্বুদ্ধ করেছে।
স্যাম অর্গানাইজেশন ফর রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমসের প্রধান তাফিক আল হামিমি বলেন, ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী যুবকদের জন্য ইয়েমেনের দূতাবাস কোনো ধরনের দায়িত্ব পালন করছে না।
অন্যদিকে যারা ইতোমধ্যে ইউরোপে অবস্থান করছে তারা ইউরোপের সমাজের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তারা স্বপ্নের দেশেও হতাশায় ভূগছে।
অন্যদিকে সবসময় অবস্থানের আবেদন প্রত্যাখ্যানের আশঙ্কা তো হচ্ছেই।
সূত্র: আলজাজিরা
ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধে প্রতিবন্ধি কিশোরীর করুন আকুতি
-আরআর