আওয়ার ইসলাম: তাবলিগের চলমান সংকট নিরসনে গত ১০,০৯,২০১৮ সোমবার কুমিল্লার দাউদকান্দি মারকাজ মসজিদে ওয়াজাহাতি জোড় অনুষ্ঠিত হয়। জোড়ে বয়ান পেশ করেন তাবলিগ জামাতের মুরব্বি ও শুরা সদস্য হাফেজ মাওলানা যুবায়ের আহমদ। বয়ানটি আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য প্রকাশ হলো। লিখেছেন মামুন ইউশা।
প্রিয় মুহতারাম দোস্ত বুজুর্গ, আমি আপনাদের সমীপে কুরআনে পাক থেকে এক আয়াত তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন- فسئلوااهل الزكران كنتم لاتعلمون
যদি তোমাদের জানা না থাকে তাহলে উলামাদের কাছে জিজ্ঞেস করো। উলামায়ে কেরাম হলেন নবীদের ওয়ারিশ। আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন, এই দ্বীন কিয়ামত পর্যন্ত ছড়িয়ে দিবেন।
নবীগণ কোন টাকা পয়সা রেখে যাননি। নবীগণ ইলমে ওহী রেখে গেছেন। এ ইলমে ওহী যারা সিনা বা সিনায় অর্জন করেছেন উনারাই নবীদের ওয়ারিশ। নবীদের উত্তরাধিকারী। উনারা যা করেন সেটা শুনতে হবে, মানতে হবে।
যে দুশমনকে দুশমন বুঝে না, যে আপনকে আপন বুঝে না, যে পরকে পর জানে না, সে তো গুমরাহীর মধ্যে থাকল। আর যদি কেউ আপনকে পর মনে করে তাহলে সে তো আরো গুমরাহীর মধ্যে রইল।
উলামায়ে কেরাম হলেন আমাদের আপন, উলামায়ে কেরাম হলেন আপনাদের আপন। উনারা আমাদের সহীহ রাস্তা দেখাচ্ছেন। উনারা আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে আমাদেরকে পুরস্কারের যথাযথ সহীহ রাস্তা বাতলে দিচ্ছেন।
আমাকে একজন বলল, উলামায়ে কেরাম হেফাজতে ইসলাম, আমি তাকে বললাম আপনি কি মুসলমান?
সে বলল, হ্যাঁ আমি মুসলমান। আমি বললাম তাহলে আপনি কি ইসলামকে হেফাজত করবেন, না নষ্ট করবেন?
সে বলল হেফাজত করব। আমি বললাম তাহলে আপনিও হেফাজতে ইসলাম।
উলামায়ে কেরাম সর্বযুগে যখনই দ্বীনের মধ্যে কোন গলত প্রবেশ করেছে এটাকে সংশোধনের জন্য সর্বাত্মক মুজাহাদা করেছেন। হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর বহু ফেৎনা দ্বীনের লাইনে কায়েম হয়ছে। এ সমস্ত ফিৎনার মুকাবেলা উলামায়ে কেরামই করেছেন। দ্বীনকে সহীহভাবে আমাদের পর্যন্ত পৌছেছেন।
হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে অনেকেই জাল হাদীস বানিয়েছে, এরা মুসলমান নয়, মুসলমান সেজে জাল হাদীস বানিয়েছে যাতে মুসলমান বিভ্রান্ত হয়, পথভ্রষ্ট হয়।
আল্লাহ তায়ালা উলামাদের দারাজাত বুলন্দ করুন। মুহাদ্দিসীনদের দারাজাত বুলন্দ করুন।
পুরা উম্মতের মাঝে সর্বযুগে এই সমস্ত উলামাদের এত ইহসান যে, নবীদের পরে সাহাবায়ে কেরামদের পরে এত বড় ইহসান আর কারো নেই, আর কারো নেই।
উনারা জাল হাদীস আর সহীহ হাদীসের মাঝে পার্থক্য করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। ইমাম বুখারী রহ. এক হাদীস লেখার আগে গোসল করছেন, ইস্তেখারা করছেন, তারপর সহীহ হাদীস বুখারী শরীফে লিখেছেন।
এভাবে উলামায়ে কেরামগণ জাল হাদীস, সহীস হাদীসের মাঝে পার্থক্য করে গেছেন। উনারা অনেক কিতাব লিখেছেন। মুহাদ্দিসীনদের যুগে উনারা কোনটা জাল হাদীস, কোনটা সহীহ হাদীস কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করে দিয়ে গেছেন। এখনো উলামায়ে কেরাম চেষ্টা করছেন।কিতাব লেখছেন।
মেরে মুহতারাম দোস্ত বুজুর্গ, উলামাদের ইহসান আমরা মাথা থেকে নামাতে পারব না। অস্বীকার করতে পারব না মওত পর্যন্ত।
তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আজ উলামায়ে কেরাম তাবলিগের মধ্যে দুশমনি করতেছেন না, তারা তো আমাদের মঙ্গল কামনা করতেছেন।
তারা চাচ্ছেন আমরা ওই তাবলিগ করি যে তাবলিগ করলে আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে মুক্তি ও সাওয়াব পাওয়া যায়।
মিথ্যা কথা বললে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় না, ধোকাবাজি করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি আসে না।
মেরে মুহতারাম দোস্ত বুজুর্গ, সর্বস্তরের মানুষের হেদায়েত কামনা করে তাবলিগের এ কাজ শুরু করেছেন মাওলানা ইলিয়াস রহ.।
একজন বলল চল তোমাকে একজন বড় বুজুর্গ ব্যক্তির সাথে মুলাকাত করাব। এ কথা যখন মাওলানা ইলিয়াস রহ. শুনলেন, তখন তার প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন। তুমি কেন আমার কথা বলে আনলে! আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কথা বলে আনলে না কেন! কেন আমার দিকে ডাকলে! আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে ডাকলে না কেন!
এসে গেল যাদুকরী মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার
মেরে মুহতারাম দোস্ত বুজুর্গ, আমি শুধু আপনাদের এতটুকু বলতে চাই, তাবলিগের এ কাজ আমরা উলামাদের মাতাহাত হয়ে করতে চাই। তাহলে আমরা এ কাজ সহীহ তরিকায় করতে পারব। শরীয়তকে জিন্দা করার জন্য তাবলিগ। শরীয়তকে নষ্ট করার জন্য কোন দিন তাবলিগ নয়।
কাজেই শরীয়তকে জিন্দা করার জন্য উলামায়ে কেরামই পারেন যাদের কাছে শরীয়তের ইলম পরিপূর্ণ আছে। যদি আমি উলামায়ে কেরামকে আমার শত্রু মনে করি, আর জাহেল লোকদের আমি আমার দোস্ত আহবাব মনে করি তাহলে মারাত্মক ভুল করব।
উলামায়ে কেরাম আমাদের শত্রু নন। উনারা আমাদের মিম্বার চায় না। আমাদের বয়ান চায় না। আমাদের গত ইজতেমায় সমস্ত বড় বড় উলায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন, তারা কেউ এ কথা বলেননি, একটা বয়ান উলামায়ে কেরামের হওয়া উচিত।
সব আমাদের তাবলিগের সাথীরাই করেছে। তারা এটাও বলেনি, শেষ মুনাজাতটা অন্ততপক্ষে বড় একজন আলেমকে দিয়ে করান।
আমি চিটাগং এজতেমায় দেখেছি আল্লামা আহমদ শফী হাফিহাহুল্লাহকে। উনি আমারও উস্তাদ। উনি তিনদিন ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। উনি একটি বারের মতও বলেননি, একটি বয়ান আমাকে দাও। সব আমরাই করেছি।
উনি এ কথাও বলেননি, শেষ মুনাজাতটা অন্ততপক্ষে আমিই করি। তিনদিন পর্যন্ত এই বুড়ো মানুষটি ময়দানেই পড়েছিলেন। এ সমস্ত উলামাদের সম্পর্কে কি এই ধারণা করা যায় যে, তারা তাবলিগ বিরোধী?
কত বড় ধোকার কথা। এটা ভুল বুঝানো হচ্ছে, উলামায়ে কেরাম তাবলিগের বিরুদ্ধে লেগেছে। উনারা তাবলিগের বিরুদ্ধে লাগেনি, বরং তাবলিগের পক্ষে লেগেছে। উনারা তাবলিগ বিরোধী নয়, বরং তাবলিগে উলামাগণ জন্ম থেকেই আছেন।
মেরে মুহতারাম দোস্ত বুজুর্গ, জীবনে যে কোনো কাজ চাই কামায় রোজগার হোক, চাই সংসার হোক, সব কাজে দ্বীন প্রয়োজন। আর দ্বীনের ইলম কার কাছে আছে? উলামাদের কাছেই আছে। কাজে আমার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত উলামাদের কাছে ঠ্যাকা, ঠ্যাকা। উলামাদের কাছেই মুহতাজ।
কোন কাজ যদি এই ইলমের বাইরে হয় তাহলে সে কাজের কোন দাম আল্লাহর কাছে নেই।
আমরা অযুর সাথে নামাজ পড়ি, অযু ছাড়া নামাজ হয় না। এই ইলম হাদীসের মধ্যে আছে। আর হাদীসের এই ইলম উলামাদের কাছেই আছে।
মেরে মুহতারাম দোস্ত বুজুর্গ! এজন্য উলামাদের অনুসৃত হয়ে আমরা তাবলিগের এই মেহেনত করব ইনশাআল্লাহ। এটা অসম্ভব দেশের সমস্ত উলামায়ে কেরাম গুমরাহ হয়ে যাবেন, তবে এটা হতে পারে এক দু'জন গুমরাহ হয়ে যাবে।
কিন্তু সমস্ত উলামায়ে কেরাম গুমরাহ হয়ে গেছেন এই কথা বলার দুঃসাহস আমারও হওয়া চাই না, আপনাদেরও না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে উলামায়ে হকের অনুসৃত হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
-আরআর
ব্যবসা এখন আপনার হাতের মুঠোয়। – বিস্তারিত জানুন