মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির। বরিশাল ৫ ও ঝালকাঠি ২ আসনে সংসদ সদস্যপ্রার্থী।
চারপাশে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরাও সে আমেজে শরীক। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। মিছিল মিটিং আর বিক্ষোভ সমাবেশে কাটছে সময়।
তবে নির্বাচন ও দাওয়াতি কর্মসূচি দলের নায়েবে আমিরের বেশি কিছু বক্তব্য সমালোচিত হয়েছে। আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রতি হজ থেকে ফেরার পর বরিশাল বিমানবন্দরে বিশাল আকারের শোডাউন নিয়েও।
ইসলামী আন্দোলন গত সিটি নির্বাচনগুলোতে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে এসেছে। এ নিয়ে মিডিয়ায় ভিন্ন রকম বিশ্লেষণে উঠে এসেছে দলটি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেমন করবে ইসলামী আন্দোলন।
এসব বিষয়ে বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ান।
আওয়ার ইসলাম: আপনি দুটি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে, প্রস্তুতি কেমন নিচ্ছেন?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে দুটি আসনে নির্বাচনের জন্য আমার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা সব সময় দলীয় সিদ্ধান্তের ওপরই কাজ করি। সে অনুযায়ী দল যখন যেভাবে যা ভালো মনে করে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
আলহামদুলিল্লাহ, প্রস্তুতি বেশ ভালো চলছে। দলীয় লোকজন, কর্মী বাহিনী মাঠে আছেন তারা সব রকম কাজে আছেন। আমার এলাকায় আমি সর্বদা জনগণের পাশে থাকি এখনো আছি।
আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি হজ থেকে ফেরার পর ব্যাপক শোডাউন করেছে আপনাদের কর্মীরা, যা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সর্বত্র? বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: ফেসবুক বা অনলাইনের বিষয়গুলো আমি তেমন একটা জানতে পারি না। এগুলোর বাইরেই আমাকে থাকতে হয়। তবে শোডাউন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে শুনলাম। কিন্তু এ নিয়ে তো আলোচনার কিছু দেখি না।
বিদেশ থেকে কেউ আসার পর সাধারণত সব মানুষকেই কেউ না কেউ রিসিভ করে থাকে। সেটা একজন ব্যক্তির মাধ্যমে হলেও। এটা তো দোষের কিছু নয়।
আমি দীর্ঘ দিন দেশের বাইরে ছিলাম। আমাকেও সে একজন ব্যক্তির জায়গায় একাধিক বা আরও বেশি মানুষ রিসিভ করেছে। স্বাগত জানিয়েছে, বিষয়টি তো সেই একই ইল্লত। একজন ব্যক্তি রিসিভ করায় যদি আপত্তি না থাকে একাধিক ব্যক্তির রিসিভ করার নতিজা তো একই হবে।
তাছাড়া এখন নির্বাচনী মৌসুম চলছে। দলের নেতা কর্মীরা নির্বাচনীমুখী। সেখানে যে কোনো ছোট ইস্যুকে তারা বড় করে আয়োজন করবে এটাই তো তাদের দায়িত্ব। সেখানে হজ থেকে আসলো নাকি লন্ডন থেকে সেটা তো দেখার বিষয় না। কর্মীরা সবসময় ইস্যু খোঁজ করেন, কোন ইস্যুতে তারা নির্বাচনী শক্তি বাড়াতে পারেন।
বাকি সেখানে যদি সংখ্যায় আধিক্য থাকার কারণে কারো আপত্তি আসে, সেটা ভিন্ন বিষয়। দল কাউকে বলেনি তাকে রিসিভ করতে তুমি আসো, তুমি আসো বা কাউকে প্রেসার ক্রিয়েট করা হয়নি। এমনকি কাউকে পয়সাও দেয়া হয়নি। সবাই এসেছে নিজ তাগিদে এবং ভালোবাসার টানে। এটা নিয়ে সমালোচনার কিছু আছে বলে আমি অন্তত মনে করি না।
তবু কেউ যদি সমালোচনা করে, আমি মনে করি তার মতদ্বন্দ্বতা, দুর্দর্ষিতার অভাব এবং সে রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি নয়।
আওয়ার ইসলাম: অতীতে কি এরকম হয়েছে কখনো, হজ থেকে কেউ আসছেন আর এমন নির্বাচনী শোডাউন করা হয়েছে।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: অতীতে হজের সময় বা কাছাকাছি কোনো নির্বাচনের ডেট ছিল কিনা বা কোনো প্রার্থী এরকম ছিল না আমার জানা নেই।
তবে এর আগেও আমি যখন সৌদিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছি তখনও হাজার হাজার লোক রিসিভ করেছে, শুভেচ্ছা জানিয়েছে তখন তো কেউ সমালোচনা করছেন বলে মনে পড়ছে না।
বিসফটি – বিস্তারিত জানুন
আওয়ার ইসলাম: অন্য কোনো আলেমের ক্ষেত্রে এমন সংবর্ধনা বা শোডাউন হয়েছে বলে তো আমরা দেখি না?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: হয়েছে। সবার ক্ষেত্রেই এটা হয়। আমি আগেই বলেছি এক দুজন হলেও থাকে যাকে রিসিভ করা হয়।
এখন হয়তো তাদের ক্ষেত্রে লোক কম ছিল বলে সেগুলো আলোচনায় আসেনি। আমার ক্ষেত্রে হয়তো একটু বেশি লোক দেখা গেছে। (হেসে) এটা তো ভিন্ন প্রসঙ্গ।
ইন্ডিয়ার আলেমরা দেশে আসলে তো আমরা রিসিভ করতে যাই। দেওবন্দের কেউ এলেই আলেমরা দলে দলে যেতেন। এগুলোকে বেশ গর্ব করেও দেখা হতো। এখন ব্যতিক্রম কেন?
আওয়ার ইসলাম: আমরা জানি অতীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী জোট করেছিল, এখন...
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: সে জোট হয়েছিল ইসলামী স্বার্থে নাম ছিল ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট। আগে ইসলামী পড়ে জাতীয়। আর তার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন আমাদের শায়খ রহ.।
জাতীয় পার্টি ৮ দফা মেনেই আমাদের সঙ্গে এসেছিল এবং নিয়ন্ত্রণ ছিল শায়খ ফজলুল করীম রহ. এর হাতে।
আর ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নাম দেয়ার অর্থ আমরা ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্য করছি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়।
আওয়ার ইসলাম: আসলে আমি জানতে চাচ্ছি, অতীতে যেহেতু নির্বাচনী ঐক্য হয়েছে, এখন যেসব ইসলামি দল নির্বাচন করে তারা সবাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক হতে পারে কিনা, এতে তো ভালো সাফল্য পাওয়া সম্ভব?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: আমরা একশ বার রাজি আছি যদি ইসলাম ও দেশের কল্যাণে কোনো ঐক্য হয় সেখানে থাকার। আমাদের কোনো দ্বিমত নেই এ ব্যাপারে।
ইসলাম, দেশ ও জাতি এ তিন বিষয়কে সামনে রেখে যখন যে কোনো বিষয় ঐক্যমত হয় তাতে আমরা সাড়া দেব এমং সমর্থন দিয়ে পাশে থাকবো এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আওয়ার ইসলাম: এখন তো ইসলামী আন্দোলন সবচে বড় দল। ঐক্যের জন্য তো এ দলটির ভূমিকা রাখা দরকার, কিন্তু আপনারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা বা ভবিষ্যতে নিতে পারবেন কিনা?
আওয়ার ইসলাম: আমরা অনেক নিরিক্ষণ করে দেখেছি নির্বাচনের সময়ে অনেকের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে কেবল ক্ষমতা লাভ। ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তাটা তখন কম।
কিন্তু আমাদের মূল চেতনা হলো, ক্ষমতায় যাই বা না যাই ইসলাম স্টাবলিস্ট কিভাবে হবে তার ফিকির। এই দুই চিন্তার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য থাকার কারণে ঐক্য কঠিন। আমরা আহ্বান করলেও তাদের সাড়া দেয়া কঠিন।
আওয়ার ইসলাম: আমরা তো দেখি তারাও ইসলামের কথাই আগে বলেন এবং ইসলামকে স্টাবলিস্ট করতে চান?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: কিন্তু তাদের কথার সাথে কাজের মিল থাকতে হবে না? একটা হলো বলা আরেকটা হলো বাস্তবতা। অনেকেই মদিনা সদনে দেশ চালানোর কথাও বলে। তাই বলে সেটা কি কাজে দেখা গেছে কখনো?
আওয়ার ইসলাম: অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচনের কথা ভাবছেন, বেশ কিছু জোটও হয়েছে...
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: সেটা কোনো ব্যক্তির মতামত হতে পারে। আমি কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপে যাবো না। কোনো আলেম যদি আওয়ামী লীগ করেন, তার ইলম সেটা সাপোর্ট করে কিনা সেটা নিয়ে আপনারা গবেষণা করবেন।
তবে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে যে কেউ যে কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে। তার অধিকার আছে।
আওয়ার ইসলাম: বরিশাল সিটি নির্বাচনে আমরা দেখলাম, আপনি সার্বক্ষণিক মাঠে থেকেও সেরকম সাফল্য পাননি বা নির্বাচন বর্জন করতে হয়েছে... জাতীয় নির্বাচনেও এমনটা হবে হবে কিনা?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: সাফল্য পাইনি সেটা বলা যাবে না। সাফল্যের দুটি দিক। এক তো হলো ভোটারটা আমাকে ভোট দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রস্তুতিও নিয়েছে কিন্তু দিতে পারেনি। দিতে দেয়া হয়নি।
কিন্তু আমি/আমরা যে ভোটারদের ভোট দেয়া পর্যন্ত প্রস্তুত করতে পেরেছি, উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি, সেটাই আমাদের সাফল্য।
আওয়ার ইসলাম: তো এখন জাতীয় নির্বাচনেও এরকমটা হবে কিনা, সেখানে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করে সফলতা আনা সম্ভব কিনা?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: সিটি নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচনের হিসাব এক হবে না। অনেক আলাদা কিছু থাকবে এখানে। সুতরাং সেই হিসাব আগেই করা যায় না।
আওয়ার ইসলাম: তাহলে জাতীয় নির্বাচন পুরো সুষ্ঠু হবে একরমটা বলছেন?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: সেটা আমি বলছি না। কিন্তু বরিশালের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন হবে। এখানে জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে প্রেসার ক্রিয়েট করা কারো পক্ষে অসম্ভব হবে।
এখানে ভোটাররা একটা বড় দুর্নীতি প্রতিবন্ধক ফেক্ট হয়ে দাঁড়াবে। সেভাবে তারা প্রস্তুত হচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম: সিটি নির্বাচনী ভাষণে আপনি হাতপাখায় ভোট দেয়াকে নবীকে ভোট দেয়ার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: এটা হয়েছে না জানা বা বক্তব্যের উদ্দেশ্য ধরতে না পারার কারণে। আপনি যখন আদর্শিক দিক থেকে বিষয়টা গুণতে যাবেন বা আদর্শিক সংজ্ঞায় যাবেন তখন আপত্তিটা থাকবে না।
আদর্শিক সংজ্ঞাটা কী? স্যোশালিজম, কমিউনিজম, সেক্যুলারিজম এগুলো তাদের আদর্শ। যারা কমিউনিজমে বিশ্বাসী তারা যে ভোট দেবে তার সমর্থন যাবে মাউ সে তুংদের দিকে। তেমনি মার্কসবাদীদের ভোট যাবে কাল মার্কসের দিকে।
ভোটটা আসলে কী? ভোটের মিনিং কী? সমর্থন। তাদের ভোট বা সমর্থন যদি মার্কস, মাউরা পায়। কাস্তে, মশাল, কুড়ালে ভোট দিলে যদি সমর্থন তাদের দিকে যায় তাহলে আমার ভোট বা সমর্থন কেন আমার নবীজির দিকে যাবে না?
আমরা জানি ভোটের অর্থ হলো, সহায়তা করা, সমর্থন করা ও সাক্ষী দেয়া। সুতরাং ইসলামের ভোট ইসলামকে সমর্থন ও নবীজিকে সমর্থন করার অর্থই তো দাঁড় করছে।
ভিজিট ও সাবস্ক্রাইব করুন আওয়ার ইসলাম টিভি
আওয়ার ইসলাম: আসলে সাধারণ জনতা তো এরকম মিনিং সহজে বুঝবে না, তাই এগুলো এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন কিনা?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: আমাদের কাজ তো সেটাই, জনগণ যেটা বুঝতেছে না সেটা তাদের বুঝাতে হবে। মূলত বাংলাদেশে জনগণ ভোট সম্পর্কে ওয়াকেবহাল না। ভোট কতবড় মারাত্মক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা যদি জানতো তাহলে তো ভোটকে তারা আমানত মনে করতো। জালিয়াতি করতো না।
এ জন্য হজরত শামসুল হক ফরিদপুরী রহ., আল্লামা তাকি উসমানি দামাত বারকাতুহম ভোটের যে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন এগুলো আমাদের মানুষকে জানানো প্রয়োজন।
এখন আমি যদি নবীর আদর্শ সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার কাছে ভোট চাই, আপনাকে ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে বলি তাহলে সেই সমর্থন নবী ও ইসলাম পেলো কিনা?
এখন অনেক কাঁচা ব্যক্তিও মন্তব্য করছে, তারা যে বিষয়টা জানে না সেটা তো আগে বুঝতে হবে। তাই মন্তব্য করার আগে ভালো করে দেখতে হবে, জানতে এবং এবং বিশ্লেষণ করে তারপর মতামত ব্যক্ত করতে হবে। কথার মাফহুম না বুঝলে এরকম সমস্যা তৈরি হবেই।
আওয়ার ইসলাম: বড় বড় রাজনীতিকদের দেখা যায় ফুল টাইম রাজনীতিই করেন, আপনারা তো অন্যান্য কাজ করে পার্টটাইমে রাজনীতি করছেন, এতে করে ফুলটাইম রাজনীতির সাফল্য সম্ভব কি?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রতিদিন, সপ্তাহ, মাসে তাদের কর্মসূচি আছে। তারা পুরোটা সময়ই কর্মসূচির মধ্যে পার করেন। কেউ পার্টটাইম রাজনীতির চিন্তা করে কাজ করেন না।
আমরা যারা কেন্দ্রীয় লিডার তাদের দেখুন, সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন কর্মসূচি নিয়ে। দাওয়াতি কাজ নিয়ে সফর করছেন। কমিটি করছেন, মিছিল মিটিং হচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম: কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই অরাজনৈতিক কর্মসূচি?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: আমরা কেবল শুধুই রাজনীতি করি না। আমাদের আত্মশুদ্ধির কর্মসূচি আছে। যেগুলো জরুরি। আবার এগুলোকেও একরকম রাজনৈতিক বিষয়ে আনা যায়।
মূলত ইসলামের রাজনীতিটা ভিন্ন। প্রচলিত রাজনীতির সঙ্গে ইসলামি রাজনীতির একটা ফারাক আছে। আমাদের রাজনীতি নবীজির আদর্শ বাস্তবায়ন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আমাদের রাজনীতি।
আওয়ার ইসলাম: সামনে তো নির্বাচনের প্রস্তুতিতে মাঠে নামবেন। জনগণের সামনে প্রতিশ্রুতি দেয়ার ব্যাপারে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবেন, শুধু ধর্মীয় বিষয় নাকি মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রধান্য পাবে?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার। মানুষ আজকাল ধর্মকে দৈনন্দিন জীবন থেকে আলাদা করে ফেলেছে। আমরা তো মনে করি ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষের মানবিক সব চাহিদা সহজে পূর্ণ হয়ে যাবে। ধর্ম স্টাবলিস্ট হলেই মানবতা স্টাবলিস্ট হবে।
আসলে ধর্মকে বিভিন্ন পার্ট করে আলাদা নাম দেয়ার কারণে এসব ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো কে করছে? ডেমেক্রেসি আর স্যোশালিজম ও কিমিউনিজমের অনুসারীরা।
এগুলো আসছে কবে? কেন আসছে? আসছে ধর্মকে জীবন থেকে আলাদা করতে। তারা সে উদ্দেশ্যেই এখনো কাজ করছে। মানুষও আজকাল তাদের সবক নিয়ে ধর্মকে আলাদা করছে জীবন থেকে।
নবী করিম সা. দুনিয়াতে আসছেন ধর্ম এবং রাষ্ট্রকে এক করার জন্য। ধর্ম যদি প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজে মানবতা ফিরে আসবে। রাস্তাঘাট ঠিক হয়ে যাবে। ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। হানাহানি মারামারি থাকবে না। বেকাররা চাকরি পাবে, দরিদ্র ও বিধবা অধিকার পাবে।
আওয়ার ইসলাম: আগামী নির্বাচনে ইভিএম প্রচলনের জোর আলোচনা চলছে, বিষয়টিতে আপনাদের সমর্থন রয়েছে কিনা?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: ইভিএম মানে হলো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করণ। আমরা বিশ্বাস করি আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয় করে ইভিএম মেশিন কিনে অপচয় করাকে জনগণ মেনে নেবে না।
ভোটচুরি, ডাকাতি, জনগণের অধিকার হরণ বাংলাদেশে অতীতে হয়ে আসছে যাতে মানুষ অতিষ্ট। এখন জনগণের অধিকার আদায়ের সময়। তারা এখন জেগে উঠেছে।
তাছাড়া ইভিএম বিশ্বের কোনো দেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, যেখানে চালু হয়েছিল সেখানে আবার বাতিল করা হয়েছে।
আওয়ার ইসলাম: কিন্তু সরকার বলছে, অ্যানালগে ভোট গণনায় দীর্ঘ সময় লেগে যায়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেশিনে গণনার কারণে খুব কম সময়ে রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: কম সময়ে ভোট গণনা নয় আসলে কম সময়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করণ হবে এই ইভিএমে।
আওয়ার ইসলাম: আগামী সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই হচ্ছে, এমনটাই এখন দেখা যাচ্ছে, আপনারা তো তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, এখন কি দলীয় সরকার মানছেন?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: আমরা সব সময় বলে আসছি সুষ্ঠু, সুন্দর, জালিয়াতিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য ভোট চাই। এখনো আমরা মনে করি এ দাবিটাই গুরুত্বপূর্ণ।
অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচন আমরা দেখেছে, সেখানেও ভোট জালিয়াতির নজির ছিল। সুতরাং কার অধীনে নির্বাচন হলো সেটার চেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি ও সেটি নিশ্চিত করা বেশি জরুরি।
আওয়ার ইসলাম: আগামী নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন কোনো আসন পাবে কিনা? এ ব্যাপারে আপনারা কতটুকু আশাবাদী?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: অবশ্যই আমরা কয়েকটি আসন পাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা আশা করছি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কয়েকটি আসন আমরা পাবো।
আওয়ার ইসলাম: কতটা আসন পেতে পারেন সে ব্যাপারে কোনো ধারণা দেয়া যায়?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: এখনই আমি এ ধারণা দিচ্ছি না। তবে সামনে এ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
আওয়ার ইসলাম: আপনার আসনটিও মানুষ নিশ্চিত আশা করে?
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম: হ্যাঁ সেটা তো যৌক্তিক এবং উচিতও...
-লম্বা সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
-আপনাকেউ ধন্যবাদ।
সম্প্রতি নেয়া আরও দুটি সাক্ষাৎকার পড়ুন
‘নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোর ঐক্য হলে বড় কিছু ঘটবে’
‘আমরা সব সময় চেয়েছি শেখ হাসিনাকে ইসলামের কাজে লাগাতে’