জুনায়েদ হাবীব
আওয়ার ইসলাম
রাহিদ। নবিণনগর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে।বয়স সবে ১২। রাহিদের বাবা পেশায় একজন ছোট খাটো ব্যাবসায়ী।
রাহিদের বাবার স্বপ্ন যেন তার ছেলে বড় হয়ে অনেক বড় মানের চাকরী করতে পারে।তবে তার জন্য প্রয়োজন পড়ালেখার ভাল ফলাফল। রাহিদের বাবা প্রচণ্ড রাগী একজন ব্যাক্তি এবং পরিশ্রমী ও বটে।
আর রাহিদের ছিল পড়ালেখা'র প্রতি অতিরিক্ত অমনুযোগী। যার কারনে রাহীদকে পড়ার জন্য প্রতিনিয়তই তার বাবা'র হাতে মার খেতে হতো রাহীদের পরিবারে শুধু রাহীদ তার বাবা ও মা নিয়ে ছোট্ট এই পরিবার।
রাহিদ পরিবারের একমাত্র সন্তান। রাহিদের বাবা সকাল ৭.০০ বাজে দোকানে গিয়ে রাতে ৮.০০ বাজে ফেরার পরও রাহীদ কে পড়াতো দীর্ঘ সময়। সেদিন হঠাৎ রাহীদের এর ফলাফল দিল।
কিন্তু ভালো ফলাফলরে কারণে সেদিন আর রাহিদ বাসায় ফিরতে পারেনি! স্কুল ছুটির পর রাহিদ বাসায় না ফেরার কারণে।
শুরু হয় বাসা'র সবার খুজাখুজী।পুরো একদিন হয়ে যাওয়ার পরও রাহিদকে খুজে পায়নি কেউ! সেদিন রাহিদের মায়ের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিল পুরো আকাশ।
স্কুল থেকে চলে যাওয়ার ৩ দিনের মাথায় রাহিদ বাসায় ফিরে এলো।রাহিদকে পেয়ে তো খুশীতে দিশোহারা তার মা!
জানতে পারলো রাহিদের অসন্তোষজনক রেজাল্টে করার কারণে তার বাবা'র মার এর ভয়ে সে আর বাসায় ফেরেনি। দীর্ঘ ৬ মাস পর রাহিদের আরেকটি পরিক্ষার ফলাফল পায় আর সেই পরিক্ষায় সে মোটামোটি ভাল ফলাফলও করে।
কিন্তু বাসায় মা এবং স্কুলের টিচারদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারলেও তার বাবাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।যার কারণে রাহিদ কে তার বাবা খেলাধুলা বন্ধ করে দেয়। সে আবার অতিরিক্তত খেলা পাগল!
রাহিদ তখন বাবার মারের ভয়ে না খেলে প্রতিদিন পড়ার টেবিল এর সাথে সময় কাটতো তার। প্রতিদিন পড়তে পড়তে চোখ যায় জানালার অদূরে সেই খেলার মাঠে যেখানে তার বন্ধু রা খেলছে।
কিন্তু শতবার চেষ্টা করলেও সে যেতে পারতো না! এভাবেই চলছিল ২ মাস।দু মাস পর রাহীদের মায়ের অনুরোধের পর রাহীদকে খেলতে দিতে রাজি হয় তার বাবা। সারাদিন পড়ার পর বিকেলে স্বল্পসময় খেলা। অতপর রাহিদকে আবার ফিরে যেতে হতো পড়ার টেবিলে!
এভাবেই কাটতে থাকে রাহিদের দিন গুলো। ১৬ বছর পর রাহিদ ঢাকা শহরে আসলো। হুম রাহিদ এখন একটি বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
ধানমন্ডীতে রাহিদের ১৩ তলা অভিজাত বাড়ী আর ৩ টি বিলাসবহুল গাড়ী নিয়ে চলে। রাহিদের দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে ধানমন্ডিতে থাকেন! লোকমুখে শুনা যায় রাহিদের মা ও বাবা নবিনগরে দু মুঠো চালের আশায় প্রতিটি ঘরে কড়ানারে!
আদৌ এখনো পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছরে ও একবার নবিনগর তাদের গ্রামে যায়নি! সে জানেও না তাকে মানুষ করা সেই বৃদ্ধ বাবা মা বেঁচে আছে কিনা?
নবিনগরে রাহিদের বাবা ও মা তারা বেঁচে থাকার জন্য জীবনযুদ্ধ চালিলে যাচ্ছে।আর এদিকে রাহিদের জীবন চলছে বিলাশবহুলতায়।
আরো পড়ুন-
মোদিকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নকশাল নেতা গ্রেফতার
ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক
এটি/আওয়ার ইসলাম