আওয়ার ইসলাম: সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামটির সবাই বংশ পরম্পরায় রীতি মেনে চলছেন। গ্রামে প্রচুর গরু পালন হয়। কিন্তু গ্রামের মধ্যে সেই গরু কেউ জবাই করেন না। একই সঙ্গে গ্রামের মানুষ গাভির দুধ বিক্রি করেন না। এমনকি কেউ গ্রামে গরুর দুধের মিষ্টি ও দুধ চা পর্যন্ত তৈরি করেন না। ঘটনাটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি।
যশোর শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে ভৈরব নদের তীরঘেষা গ্রাম কচুয়া ইউনিয়নের ভগবতীতলা। গ্রামের মুসলিম ও হিন্দু দুই সম্প্রদায়ই এই প্রথাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন বছরের পর বছরে ধরে। তবে শুধু কোরবানির ঈদের গরু জবাই করেন মুসলমানরা।
এদিকে, গরু জবাই ও দুধ বিক্রি নিয়ে গ্রামে নানা মিথ রয়েছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চমকপ্রদ তথ্য। শহর থেকে নড়াইল রোড ধরে চার কিলোমিটার পর দাইতলা। সেখান থেকে ডানে ইটের সোলিং রাস্তা ধরে প্রায় দুই কিলোমিটার পার হওয়ার পর গ্রামটির শুরু। গ্রামের জনসংখ্যা ২ হাজারের মতো। এরমধ্যে ৫০০ এর বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের। বাকি সবাই মুসলমান।
কেন গরু জবাই, দুধ বিক্রি করা হয় না জানতে চাওয়া হয় ভগবতীতলা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে। একজন প্রবীণ অধিবাসী লিয়াকত আলী। যার বয়স ষাটের ওপরে।
ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক
তিনি বলেন, অনেক অনেক বছর আগে এক ব্যক্তি আশপাশের গ্রামে গরুর দুধের সন্ধান করেছিলেন। কিন্তু কোথাও না পেয়ে আমাদের গ্রামে আসেন। এখানে এসে দুধ পেয়েছিলেন। তখন আমাদের গ্রামের নাম ছিল রুপাই মানিক গ্রাম। দুধ পাওয়ার পর ওই ব্যক্তি গ্রামের নাম বদলে রাখেন ভাগ্যবতীতলা। আর ঘোষণা দেন এই গ্রামের মানুষ দুধ বিক্রি করতে পারবে না। তবে কেউ চাইলে দেয়া যাবে। গ্রামে গরু জবাই করা যাবে না। তখন থেকে গ্রামের মানুষ কোরবানি ছাড়া অন্য সময় গরু জবাই করে না। দুধও বিক্রি করে না। গ্রামে একজন বাকপ্রতিবন্ধী নারী ছিলেন। তিনি একবার গরুর ঘি বিক্রি করেছিলেন। এজন্য তার গায়ে ঘা হয়ে মৃত্যু হয়।
লিয়াকত আলীর ভাষ্য, একবার মৌলভী মোহাম্মদ নামের একজন ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘আগের যুগ নেই, আসেন গরু জবাই করি। কিছুই হবে না। তিনি গরু জবাই করেছিলেন। পরে তিনি রোগে ভুগে মারা যান।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা আবুল হোসেন (৬০) বলেন, বছর বিশেক আগে গ্রামের মাঠে আর্মি (সেনাবাহিনী) এসেছিল প্রশিক্ষণের কাজে। গ্রামের ঘটনা শুনে একজন মেজর বলেছিলেন ‘আমরা গরু জবাই করে খাব। কিচ্ছু হবে না। তিনি আমাদের গ্রাম থেকে একটি গরু কেনে জবাই করেছিলেন। পরে শুনেছি, ওই মেজর প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
ভ্যানচালক আবদু রশিদ (৬০) বলেন, অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। একবার মেয়েকে একটা গাভি গরু দিয়েছিলাম। মেয়ে গরুর দুধ বিক্রি করেছিল। এজন্য গরু শুকিয়ে রুগ্ন হয়ে পড়েছিল। পরে নিষেধ করেছি দুধ বিক্রি করতে। দুধ বিক্রি বন্ধ করার পর গরু আবার সুস্থ হয়েছে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব মর্জিনা বেগম বলেন, শাশুড়ির কাছ থেকে শুনেছি, গরু জবাই ও দুধ বিক্রি করা যাবে না। এ নির্দেশ আমারও মেনে চলছি। গাভি গরুর চেয়ে এড়ে গরু বেশি পালন করি।
হাফিজুর রহমান নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, গরু জবাই ও দুধ বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও খাওয়া বন্ধ নেই। শুধু গ্রামের মৌজায় কোরবানি ছাড়া গরু জবাই হয় না।
ভগবতীতলা বাজারের মিষ্টি বিক্রেতা ফজর আলী বলেন, দুধের কোনো মিষ্টি আমরা বাজারে তৈরি করি না। পাশের গ্রাম রূপদিয়া থেকে এনে বিক্রি করি। গ্রামে দুধের মিষ্টি তৈরি করতে গেলে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য আর ঝুঁকি নেই না। শুধু দুধের মিষ্টি নয়, দুধ চা কেউ বিক্রি করে না এই গ্রামে। জাগো নিউজ।