মাহমুদুল হাসান
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রতিটি মানুষের জীবন যাপনের একটি থিম থাকে, মনের কিছু আকাঙ্ক্ষা থাকে। সেই থিম বা মনের আকাঙ্ক্ষাকে নিজের মত সুন্দর পরিকল্পনাতে রূপ দেয়াকেই স্বপ্ন বলে।
আর সেই স্বপ্ন একেকজনের একেক রকমের হতে পারে, যেমন কেউ হতে চায় ডাক্তার আবার কেউ ইঞ্জিনিয়ার। কেউ হতে চায় শিক্ষক, আবার কেউ কেউ অনেক সম্পদের মালিকও হতে চায়৷
সমাজের এক শ্রেণির লোক তারা নিজেদের অনেক প্রভাবশালী হিসেবে গড়ে তোলার পথ বেঁচে নেয়। ভাবে আমার বিশাল শিক্ষার সনদ থাকবে, সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ হবো আমি। আর এটাই স্বাভাবিক।
জীবনে এ ধরনের লোকদের স্বপ্নপূরণের গল্প অনেক শুনেছেন/পড়েছেন। আজ জানুন এদের চেয়ে ভিন্ন এক স্বপ্নবান মানুষের স্বপ্নপূরণের স্মৃতিগুচ্ছ। যাকে নিয়ে এ লেখা তিনিও একজন স্বপ্নবান মানুষ ছিলেন। কিন্ত তার স্বপ্নের ধরণ ছিল ভিন্ন ও অভিনব।
১৯৫৫ সালে নান্দাইন থানার গাংগাইল ইউনিয়নের বিয়ারা গ্রামে জন্ম নেন স্বপ্নবান আজিজুল হক। কিশোর বয়সেই তার কোমল হৃদয়ে নাড়া দিত এলাকার জামে মসজিদটির জরাজীর্ণ চিত্র।
তিনি ভাবতেন, কিভাবে উন্নত করা যাবে মসজিদের। কোন পদ্ধতিতে পালটানো যাবে মসজিদের চিত্র৷ কী পন্থা বেছে নিলে সম্ভব হবে গ্রামের বিত্তশালীদের উন্নত বাড়িগুলোর চেয়ে গ্রামবাসীকে উপহার দিতে পারবেন সৌন্দর্য্যময় একটি মসজিদ।
মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়ায় তার পক্ষে নিজের অর্থে মসজিদ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। দিনমজুরের কাজ করে দীনের এ মহা কাজ আঞ্জাম দেয়া ছিল দুঃসাধ্য। তাই তিনি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য বেছে নেন প্রবাসী হওয়ার ইচ্ছা। সেটাও আমেরিকার মতো দেশ- যেখানে যেতে পারলে খুব দ্রুতই পূরণ করতে পারবেন নিজের শৈশবের স্বপ্ন।
[ব্যবসার যাবতীয় কাজ সহজ করতে এলো বিসফটি। এখনই রেজিস্ট্রেশন করুন বিসফটি।]
তারপর অনেক চেষ্টায় আমেরিকা যেতে ব্যর্থ হলেও তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। একদিন সন্ধান পান ডিভি লটারির। যা কিনলে ভাগ্যে মিলতেও পারে আমেরিকা। তাই তিনি সেই তরুণ বয়স থেকেই শুরু করেন লটারি কেনা। স্বপ্ন দেখতে থাকেন আমেরিকা যাওয়ার।
এভাবে স্বপ্ন বুকে লালন করে চলছিলেন আজিজুল হক। পাশাপাশি প্রতি বছর কিনে যাচ্ছিলেন ডিভি লটারি। বার বার ব্যর্থ হলেও ক্লান্ত হয়নি তার আত্মা। এক পর্যায়ে তার পরিবার হয়৷ জন্ম নেয় তার পরিবারে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। সেই সন্তানও তার বাবার স্বপ্নের দিকে ছুটে। বাবা ব্যর্থ হলেও সে ব্যর্থ হয়নি।
স্বপ্নবান সেই আজিজুক হকের ছেলে মোজাম্মেল হক ২০০৬ সালে বংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বাবার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে সেও ডিভি লটারি কিনেন। আর সেই লটারিতে মরা গাছে ফুল ফোটার মতো খুলে যায় আজিজুল হকের ভাগ্য।
ছেলের ডিভি লটারি কেটে আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ পায়। মোজাম্মেল চলে যায় আমেরিকায়। মোজাম্মলের সিটিজেনশিপ পাওয়ার পর তার বাবা আজিজুল হককেও নিয়ে যায়। পূরণ হয় তার দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন।
এর পর থেকেই শুরু করেন তার গ্রামের মসজিদসহ পার্শবর্তী গ্রামগুলোর মসজিদ মাদরাসা নির্মাণ এবং অন্যান্য সামাজিক কাজ। এলাকার দরিদ্রদের উন্নয়নেও অবদান রাখতে থাকেন।
পাশাপাশি শুরু করেন নিজের দেশের পতাকা আমেরিকার বিভিন্নস্থান স্থানে প্রদর্শনের কাজ।
ভালো কোন জায়গায় ঘুরতে গেলেই সাথে নিয় যান নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশের পতাকা। তুলে ধরেন সবার মাঝে। নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেন সফল স্বপ্ন পুরুষ এবং সফল বাঙালি হিসেবে৷
আমেরিকার ১৮৩ তলা সুউচ্চ ইম্পিরিয়াল টাওয়ার এবং স্ট্যাচু অব লিবার্টি দ্বীপে ভ্রমণকালে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন তিনি, যাতে প্রবাসীরা বাংঙালিরা উৎফুল্ল হয়।
সফল স্বপ্ন পুরুষ এই আজিজুল হক বর্তমানে আমেরিকার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস শহরে বসবাস করছেন। সেখান থেকেই অনুদান পাঠিয়ে তার গ্রামের মসজিদসহ আরও পাঁচটি মসজিদ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। সেই সাথে করে যাচ্ছেন মানব সেবার মতো মহৎ কাজও।
সেই সফল স্বপ্ন পুরুষ আজিজুল হক দীনের খেদমত এবং দেশের জন্য কাজ করতে চান, পাশাপাশি আমেরিকাতেও ইসলাম প্রচার কাজ করতে চান আমৃত্যু।
আর নয় ঘাড় ব্যথা; এলো হিজামা কাপিং থেরাপি
যোগাযোগ : ০১৮৫৮১৪১৮৪৬
-আরআর