আতাউর রহমান খসরু
চিফ রিপোর্টার
গত ৩০ জুলাই ইন্ডিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সরকার রাজ্যের নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ করেছে। এতে বাদ পড়েছে রাজ্যের চল্লিশ লাখ নাগরিকের নাম। রাজ্যের ৩ কোটি উনত্রিশ লাখ নাগরিকের মধ্য থেকে যাদের নাম তালিকায় ওঠেনি অধিকাংশ বাঙালি ও মুসলিম। আরও আড়াই লাখ ডি ভোটার রয়েছে এ তালিকার বাইরে।
তালিকা প্রকাশের পর আসামের সাধারণ মুসলমানের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করার জন্য সরকার রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে জোরদার করেছে।
রেজিস্টার জেনারেল অব ইন্ডিয়া দাবি করছে, তাদের প্রকাশিত তালিকা এখনও চূড়ান্ত নয়। তালিকায় যাদের নাম এখনও আসে নি তারা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপিল করার সুযোগ পাবেন। উপযুক্ত প্রমাণ উপস্থিত করতে পারলে তাদের নাম নাগরিকপঞ্জিতে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
তবে মানবাধিকার কর্মীদের ধারণা আসামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অনেকেই প্রমাণ উপস্থিত করতে পারবে না। ফলে তারা আইনি অসদাচরণের শিকার হয়ে রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত হবে। এতে লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে এবং পুরো অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে।
ব্রিটিশ উচ্চবিলাসের মূল্য দিচ্ছে আসামের মুসলিমগণ?
কাশ্মির ও আরাকানের মতো আজকের আসাম সংকটও ব্রিটিশ উপনিবেশের উত্তরাধিকার। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ বিলাসের মূল্য দিচ্ছে আজকের আসামের মুসলিম নাগরিকগণ। ভারতের দুর্গম পাহাড়ি বনাঞ্চল আসামকে ফুটব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় তারা।
আসামের দুর্গম ভূমিকে কৃষি উপযোগী করে তুলতে (তৎকালীন) পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক মুসলিম জনগোষ্ঠি ভয় ও প্রলোভনে আসামে দেশান্তরিত করে তারা। ব্রিটিশ সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিলো এ অঞ্চলে একটি বিস্তৃত কৃষি ও চা-শিল্প অঞ্চল গড়ে তোলা।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. তার আত্মজীবনী জীবনের খেলাঘরে এর সঙ্গে আরেকটি কারণ যুক্ত করেছেন। তাহলো, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ময়মনসিং ও সিলেট অঞ্চলের অনেক স্বাধীনতাকামী ব্রিটিশ সরকারের রোষানল থেকে বাঁচতে আসামে দুর্গম বনে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে তারা সেখানেই স্থায়ী হন।
সেই সূত্রে কথিত ‘আসাম নাগরিক আন্দোলনে’র প্রধান যুক্তি আসামের বাঙালি মুসলিমরা বহিরাগত। তবে তারা ভুলে গেছে মুসলিম কৃষকরাই আসাম আবাদযোগ্য ও বাসযোগ্য করে তুলেছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলে আসামে মুসলিম বাঙালিদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আবার বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিম আসামে আশ্রয় গ্রহণ করে। যাদের প্রায় সবাই যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে আসে।
কিন্তু ভারত সরকারের দাবি একাত্তর সালের পর বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিম আসামে থেকে যায়। আর তাদের চিহ্নিত করতেই করা হচ্ছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি।
কথিত ‘নাগরিক আন্দোলন’
প্রায় শত বছর ধরে আসামের শিল্প-সাহিত্য, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে অবদান রেখে আসছে বাঙালি মুসলিমগণ। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের ত্যাগ, শ্রম ও ভালোবাসায় সমৃদ্ধ আজকের আসামে তাদের বহিষ্কারের দাবি উঠেছে।
মুসলিম বাঙালিদের বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছে কথিত ‘নাগরিক আন্দোলন’। আসামের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
অসমিয়া জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী আন্দোলনকারীদের দাবি মুসলিম বাঙালিদের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে তাদের জাতিসত্ত্বার পরিচয়। তারা ফিরে পেতে চায় তাদের ভূমির অধিকার এবং রক্ষা করতে চায় সাংস্কৃতিক পরিচয়।
গত শতকের আশির দশকে আসামে শুরু হয় ‘বিদেশি হঠাও’ আন্দোলন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এ আন্দোলন চরম রূপ নেয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ কথিত নাগরিক আন্দোলনকারীদের হাতে দুই হাজারের বেশি মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়।
ইতিহাসে যা ‘নিলাই গণহত্যা’ নামে পরিচিত। দুঃখের বিষয় হলো এ গণহত্যার দায়ে আজ পর্যন্ত একজন ব্যক্তিরও শাস্তি হয় নি। বরং গণহত্যার সাথে জড়িত নেতাদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা হয়েছে।
বাঙালি মুসলমানের দুর্দিনের শুরু
আসাম গণহত্যার দুই বছর পর ১৯৮৫ সালের আগস্টে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে ভারত সরকার ও নাগরিক আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে সরকার অঙ্গীকার করে যে, তারা অবশ্য আইনানুগভাবে ১৯৭১ সালে ভারতে প্রবেশকারী বিদেশিদের চিহ্নিত এবং বহিষ্কার করবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী আসাম রাজ্য সরকার একাধিকবার বিদেশিদের চিহ্নিত করেছে। তবে তাদের সংখ্যা কখনো হাজারের বেশি ছিলো না।
২০০৫ সালে দিল্লি কোর্ট আসাম সরকারকে বিদেশিদের চিহ্নিত করার আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ জারি করে এবং কাজের জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেয়। আর তখন থেকেই বাঙালি মুসলমানের দুর্দিন শুরু হয়।
বিজেপির জনসংখ্যা তত্ত্ব ও মুসলিম বিদ্বেষ
আসামে বাঙালি মুসলিমদের ওপর ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির ক্ষোভটা একটু বেশিই। তাদের ধারণা বাঙালি মুসলিম ভোটারদের কারণে ক্ষমতা মসনদ থেকে বারবার বঞ্চিত হয়েছে তারা। এমনকি বিজেপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন বহিরাগত বাঙালি ভোট রাজ্যের ফলাফলকে প্রভাবিত করছে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সেই ক্ষোভ ও অভিযোগ থেকে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আসামে দুটি প্রপাগাণ্ডা চালানো হচ্ছে।
এক. মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হিন্দুদের চেয়ে বেশি। ফলে আসামের নিয়ন্ত্রণ মুসলমানের হাতে চলে যাচ্ছে।
দুই. মুসলিমরা যথাযথ ভারতীয় নয়। তাদের দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে। তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
আসামের নাগরিক আন্দোলনের শ্লোগান ‘বিদেশি হটাও’ হলেও এ আন্দোলনের নেতারা বারবার হিন্দু ও মুসলিম অভিবাসীদের মাঝে বিভেদ রেখা টেনে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, হিন্দু অভিবাসীগণ; বরং মুসলিম নন এমন যে কোনো ব্যক্তি ভারতের নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ভারতের শাসকদলও পরিস্কার বলে দিয়েছেন এ পদক্ষেপ শুধু বাঙালি মুসলিমদের জন্যই। হিন্দু বাঙালিগণ ভারতে অভিনন্দিত হবেন। কেবল বাংলাদেশ নয় নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান প্রতিবেশি যে কোনো রাষ্ট্রের হিন্দুরা চাইলে ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন।
[যারা ব্যবসা ও ব্যবসার হিসাব নিয়ে জটিলতায় রয়েছেন তাদের জন্য এলো বিসফটি। ব্যবসাকে সহজ ও হাতের মুঠোয় নিন বিসফটির সাহায্যে- রেজিস্ট্রেশন করুন বিসফটিতে।]
২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদি একাধিক নির্বাচনী প্রচারণায় আসামের বাঙালি মুসলিমদের দেশছাড়া করার অঙ্গীকার করেছেন। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও আসামের বাঙালি মুসলিমদের অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের বের করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মূলত বিজেপিই আসামের ‘বিদেশি হটাও’ আন্দোলনকে মুসলিম হটাও আন্দোলনে পরিণত করেছে। তারাই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ৪০ লাখ মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবে কি মুসলিমরা?
আসামের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য এনআরসি কর্তৃপক্ষ সরকারি নথি দাবি করেছে। যেমন, ভূমির মালিকানা দলিল, জন্মনিবন্ধন সনদ, হাইস্কুলের রেকর্ড অথবা ভোটার তালিকায় নাম থাকা যা প্রমাণ করবে সে বা তার পূর্বপুরুষগণ ১৯৭১ সালের পূর্বে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
প্রশ্ন উঠেছে, এসব সরকারি নথি সংরক্ষণের জন্য যে পরিমাণ সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ প্রয়োজন তা কি প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠির আছে? কোনো সন্দেহ নেই নিরক্ষর, ভূমিহীন ভূমিদাস ও দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করা জনগোষ্ঠির জন্য গ্রহণযোগ্য নথি উপস্থিত করা কঠিন হবে।
এছাড়াও বর্তমান প্রশাসনের মুসলিম বিদ্বেষী মনোভব এবং অতীত প্রশাসনের দুর্নীতি ও দুর্বলতার প্রশ্ন তো রয়েছেই।
আসামের বহু পরিবারই জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি বোঝে না এবং সন্তানের স্কুলে পাঠানোর সুযোগ হয় না তাদের। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, যে দেশের অধিকাংশ বাবা-মা সন্তানের জন্ম তারিখ মনে রাখার প্রয়োজন মনে করে না তারা কিভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ উপস্থিত করবে?
সে আরও বলেছে, তিনি নিজেরও এমন কোনো নথি নেই যা দিয়ে প্রমাণ করা যাবে তিনি বা তার পিতা-মাতা একাত্তর সালে ভারতের নাগরিক ছিলেন।
নাগরিকত্ব প্রমাণে সবচেয়ে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে নারীরা। তাদের অধিকাংশের জননিবন্ধন সনদ নেই, অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে সরকারি সার্টিফিকেটও নেই তাদের; এমনকি ভোটার তালিকায় পিতার পরিবর্তে স্বামীর নাম রয়েছে যাকে অগ্রহণযোগ্য বলছে এনআরসি কর্তৃপক্ষ।
সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত
গত ৩০ জুলাই প্রকাশিত হয়। সরকার ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপিল সুযোগ আছে বলে ঘোষণা করে। ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিদিন ১ লাখ আপিলের মুখোমুখি হবে সরকার। অথচ রাজ্য সরকারের এ পরিমাণ কেস সমাধানের সামর্থ্য ফরেনার্স ট্রাইবুনালের নেই।
যেসব নথি হাজির করতে বলা হয়েছে তাও কি এক মাসের মধ্যে উপস্থিত করে ট্রাইবুনালে দাখিল করা সম্ভব? প্রশাসনিক জটিলতা ও সময়ের স্বল্পতার জন্য অনেকেই আদালতে আপিল করারই সুযোগ পাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাগরিকপঞ্জি তৈরির জন্য গঠিত ১০০ বিশেষ ট্রাইবুনালের দুই তৃতীয়াংশই বিজেপি সরকারের আমলে গঠিত। তারা কতোটা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করবে তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
অবশ্য যারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবে না তাদের পরিণতি কি হবে তা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে বলে নি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দেশান্তরই তাদের পরিণতি ধরে নেয়া হয়েছে।
অবশ্য আসাম রাজ্য সরকার গত নয় বছরে ছয়টি ডিটেনশন সেন্টার খুলেছে। যেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারে নি এমন ব্যক্তি রাখা হয়েছে। সে হিসেবে আসামের ভাগ্যাহত মুসলিমদের প্রাথমিক ঠিকানা হতে পারে ডিটেনশন সেন্টার।
মানবাধিকার কর্মীদের ধারণা আসামের মুসলিমদের পরিণতি আরাকানের মুসলিমদের মতো হতে পারে। কারণ, চলমান প্রক্রিয়া আসামের বাঙালি মুসলিমদের রোহিঙ্গাদের মতো রাজ্যহীন নাগরিকে পরিণত করবে। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে ১৯৮৩ সালের গণহত্যার পুনরাবৃত্তিরও আশঙ্কা করছে স্থানীয় মুসলিমরা।
সঙ্কট মোকাবেলায় মুসলিমদের প্রস্তুতি
আসামের নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে ধর্মের নাম বারবার জড়িয়ে গেলেও বিষয়টিকে ধর্মীয় ইস্যু হিসেবে দেখতে নারাজ আসামের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম নেতা মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল। তার মতে বিষয়টি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়ে। এখানে ধর্মের নাম জড়ানো ঠিক হবে না এবং যারা জড়ানোর চেষ্টা করছেন তারাও ঠিক করছেন না।
এক টিভি সাক্ষাৎকারে আজমল বলেন, এ সংকট মোকাবেলায় তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। যেসব মুসলিমদের নাম তালিকায় ওঠে নি তাদের আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য আইনজীবী ও শিক্ষিতদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরি করেছেন তিনি।
তারা অশিক্ষিত ও প্রান্তিক মানুষকে নথি প্রস্তুত ও আপিল করতে সহায়তা করবেন। এ স্বেচ্ছাসেবী দলে অনেক হিন্দু মানবাধিকার কর্মীও রয়েছেন বলে তিনি জানান।
কী ভাবছে বাংলাদেশ?
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পূর্বে দেশটির সরকার যেমন বারবার তাদের অবৈধ বাংলাদেশি বলে দাবি করে আসছিলো, ঠিক তেমনটিই দাবি করা হচ্ছে আসামের মুসলিমদের বিরুদ্ধে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ তাদের সরাসরি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোরও হুমকি দিয়েছেন।
সুতরাং খুব সহজেই বোঝা যায়, আসামের রাষ্ট্রহীন নাগরিকদের দায় কিছুতেই এড়াতে পারবে না বাংলাদেশ। সেচ্ছ্বায় বা অনিচ্ছ্বায় আসাম সংকটের শিকার হবে বাংলাদেশ। এ সংকট মোকাবেলায় কী ভাবছে বাংলাদেশ?
নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পূর্বে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী বলেছেন, বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানানো পর্যন্ত বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। তবে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে ১৯৭২ সালের পর ভারতে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক নেই। সুতরাং বিষয়টি তাদের নিজস্ব।
এটাও সত্য বাংলাদেশ তার উদ্বেগের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিকবার ভারতকে জানিয়েছে।
বাংলাদেশে নিযু্ক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাও বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এতে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্থ করবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত ভারত নিবে না।
তিনি আরও বলেন, বাদ পড়াদের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি। পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
আরেকটি গণহত্যা ঠেকাতে পারবে কি মুসলিমবিশ্ব?
আসামে আরেকটি গণহত্যা ও নৈরাজ্যের আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। তাদের ধারণা আসামের বিক্ষুব্ধ জাতীয়তাবাদীরা মুসলিম বাঙালিদের উপর আকস্মিক হামলা করে বসতে পারে।
আর তা হবে ১৯৮৩ সালের গণহত্যার চেয়ে ভয়াবহ। কেন্দ্র ও রাজ্যে মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় থাকায় এ শঙ্কাটি আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষত নরেন্দ্র মোদির মতো ব্যক্তি -যার বিরুদ্ধে সরাসরি মুসলিম গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে- তিনি যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় রাষ্ট্রহীন মুসলিম বাঙালির ভাগ্যের করুণ পরিণতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করতে পারেন যে কেউ।
আসামের বাঙালি মুসলিম গণহত্যা রোধ করা কি কিছুতেই সম্ভব হবে না? দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্বাস আলী খান্না মনে করেন, ভারতের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীরা সরব হলে এ রক্তক্ষয়ী সংঘাত রোধ করা সম্ভব।
এজন্য তিনি মুসলিমবিশ্বকে সরব ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান। বিশেষত বাংলাদেশ যেহেতু এ সংকটে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে তাই তারই উচিৎ এখন কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় এ বিশ্বশক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
তথ্যসূত্র : দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম
-আরআর
[যারা ব্যবসা ও ব্যবসার হিসাব নিয়ে জটিলতায় রয়েছেন তাদের জন্য এলো বিসফটি। ব্যবসাকে সহজ ও হাতের মুঠোয় নিন বিসফটির সাহায্যে- রেজিস্ট্রেশন করুন বিসফটিতে।]