আবদুল্লাহ তামিম: পাকিস্তানেরে ১১তম জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ভোটের দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। ইমরান খানকে ক্ষমতায় আনতে নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলগুলো।
পাকিস্তানের এ নির্বাচনে ইসলামি কোনো দল ভালো করতে পারেনি কেনো? এ বিষয়টি এখন প্রশ্নই রয়ে গেছে অনেকের কাছে।
ইত্তেহাদে মজলিসে আমাল তার মধ্যে অন্যতম। মূলত জমিয়তে উলাময়ে ইসলাম আর জামায়াতে ইসলামি এ দুইটি দল নিয়েই ইত্তেহাদে মজলিসে আমাল গঠন করা হয়।
১৬ বছর আগের পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ইসলামি দলগুলোর অবস্থান ছিলো চোখে পড়ার মত।
কয়েকটি ধর্মীয় দল মিলে অষ্টম শতাব্দীতে নির্বাচনের জোটবদ্ধ হয়ে একটি প্রদেশে সরকার গঠন করে। কেন্দ্রের আসনগুলোর মধ্যে ৬০টি আসন পেয়েছিলো।
কিন্তু এমনটি আর দ্বিতীয়বার আসেনি। তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনের আগে মওলানা ফজলুর রহমানের প্রচেষ্টায় জামিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ আরো কয়েকটি দল একতাবদ্ধ হয়েছিলো।
জামায়াতে ই ইসলামি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সারা দেশে তাদের সমর্থিত লোক পরিসংখ্যানে আনুমানিক প্রায় ২৬ লাখ।
জোটের প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান ও উপ-কমিটির প্রধান সিরাজুল হক এবার নিজেদের আসনেও জয়ী হতে পারেননি।
সাধারণভাবে জাতীয় নির্বাচনে ১২টি, খাইবার পাখতুনখোয়াতে ১০টি, বেলুচিস্তানে ৯টি, সিন্ধুতে এক এবং পাঞ্জাব প্রদেশের একটিতে জয়ী হয়।
অন্যদিকে, জোটের বাইরে দুটি নতুন ধর্মীয় দল মুখোমুখি হয়। তারা এমএমএ থেকে আরও বেশি ভোট পেয়েছে।
এর মধ্যে তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তান (পিটিঅাই ) ২২ লাখ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে। পাঞ্জাব প্রদেশে ভোটের সংখ্যা প্রায় ১৮লাখ। সিন্ধু প্রদেশ থেকে তার দল ৪ লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছে।
কিন্তু মূল কথা হলো তারা কেনো এ নির্বাচনের ইসলামি দলগুলো ভালো ফলাফল আনতে পারল না। এ বিষয়ে বিবিসির সাথে কথা বলেন জামায়াতে ইসলামির প্রধান সিরাজুল হক। তবে সব মতকে ছাপিয়ে কারচুপিই অন্যতম কারণ তাদের মতে।
সিরাজুল হক বলেন, আমরা আমাদের ভোটের ব্যপারে নিশ্চিত ছিলাম আমাদের যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা অর্জন হয়েছে আমরা প্রাদেশিকভাবেও বিজয় অর্জন করতে সক্ষম ছিলাম।
কিন্তু এ পরিমাণ কারচুপি হয়েছে, যা আমাদের ধারণার বাইরে ছিলো। আর এ কারণে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমাদের ধারণাই ঠিক হলো। একটি দল ছাড়া সব দলেরই ফলাফল আশানোরূপ হয়নি।
সে কারণেই মওলানা ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে তারা সংবাদ সম্মেলনে একতা প্রকাশ করেন।
মুত্তাহিদা মজলিশ-এ-আমাল (এমএমএ) জোটের নেতা ও মুখপাত্র মাওলানা ফজলুর রহমান বলেছিলেন, আমরা পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করবো। আমরা বিক্ষোভ করবো। কারচুপির এ নির্বাচন আমরা মানি না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী নেতারা বলেন, ২৫ জুলাইয়ের ওই নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত ১১৫টি আসন পেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইমরান এবং তাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক নেতা বলেন, পুনরায় নির্বাচনের জন্য বিক্ষোভে নামবেন তারা। বিরোধীদের এই জোটে নেতৃত্ব দেয় পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)।
এই নির্বাচনে মূলত লড়াই হয়েছে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর মধ্যে।
২৭২টি আসনের মধ্যে ৬৪টি আসন পেয়েছে পিএমএল-এন। আর ৪৩ আসন পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
১১৭ আসন পাওয়ায় একক সরকার গঠনে সক্ষম হননি ইমরান খান। এ কারণে জোট সরকার গঠনের দিকে যাচ্ছেন তিনি।
ইত্তেহাদে মজলিসে আমাল আর জামাতে ইসলামি এখন এ বিষয়টাই স্পষ্ট করতে চায় যে তাদের আশা ছিলো পাকিস্তানে ইসলামি দলগুলোর জয় হবে। যতেষ্ট পরিমাণ সমর্থনও ছিলো তাদের। ভোট কারচুপি আর পূর্ব পরিকল্পনা, সেনাদের সঙ্গে আঁতাতই তাদের জয়ের পেছনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দিকে কিছু ইসলামি দলকে জঙ্গী বলে প্রচারণা চালাতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠেছে। ইসলামি দলগুলোর ভরাডুবির এও বড় কারণ।
এমএলএমএর উপ-সচিব নাসিম আহমেদ বিবিসিকে বলেন, তাদের দলকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নির্বাচন পাড় করতে হয়েছে। তারা খোলাখুলি নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারেনি।
তারপরও তাদের পক্ষে জনসমর্থন ছিলো ব্যপক। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারাও নির্বাচরে ভালো ফলাফল আনতে পারতো বলে আশা ছিলো।
বিবিসি উর্দু থেকে অনুবাদ