সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বৃক্ষরোপণ কেন জরুরি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম
আওয়ার ইসলাম

 ইট-পাথরের এ জন-জীবনে প্রকৃতির  স্নিগ্ধ নিঃশ্বাস নেই বললেই চলে। চারদিকে জলবায়ুর পরিবর্তেনে দুর্বিসহ হয়ে ওঠছে জীবন।

পৃথিবীর এ গোলার্ধে প্রকৃতির সবুজ সতেজ প্রাণ মানুষের বেঁচে থাকতে অনেক অনেক দরকার। আজ গাছ-গাছালি কমে যাওয়ায় ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে সমাজের।

বিশেষ করে শহরের যে জায়গাটায় গাছ নেই শুধু গণবসতি সেখানের বাতাসও বলে দেবে কষ্ট হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে। আর যেখানে প্রকৃতির বরপুত্ররা মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়া যায়, সতেজ নিঃশ্বাস।

আজ সামাজিকভাবে প্রকৃতির এ প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে হবে সমাজের মানুষের কাছে। বিশেষ করে খতিব সাহেবগণ এ বিষয়ে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে।

পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা সম্পর্কে বিশিষ্ট আরবি সাহিত্যিক ও ইসলামি চিন্তাবিদ  ড. শামসুল হক সিদ্দিক বলেন, গাছ মানুষের জীবন ধারণ সহজ করতে আল্লাহর বিশেষ এক দান। গাছ-গাছালি বাতাসে উড়ে আসা দুষিত বায়ুকে গিলে ফেলে। আবার সূর্যের তাপকে সহনীয় পর্যায় নিয়ে আসে।

গাছগাছালি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। শুধু মানুষই নয়, গাছপালা ছাড়া কোনো প্রাণীই জীবন ধারণ করতে পারবে না এ পৃথিবীতে।

বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রধানত দায়ী বৃক্ষহীনতা। দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যা। গাছপালার স্বল্পতার কারণে ভূপৃষ্ঠে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে।

মহানবী সা. বৃক্ষের শোভামণ্ডিত সুশোভিত পরিবেশ ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন বৃক্ষপ্রেমী। জীবনে বহুসংখ্যক গাছ তিনি নিজ হাতে রোপণ করেছেন। অসংখ্য হাদিসে তিনি বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করেছেন তাঁর অনুসারীদের। বৃক্ষরোপণকারী মরে যাওয়ার পরও এর সওয়াব অনবরত পেতে থাকবে।

এ জন্য ইসলামে বৃক্ষের পরিচর্যার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়; বরং এর যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে পুষ্প-পল্লবে বিকশিত হওয়ার সব ব্যবস্থা করতে হবে।

আপনার যত্নে যদি একটি বৃক্ষ ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়, পথিক এর ছায়ায় বসে, পশু-পাখি বিশ্রামের সুযোগ পায়, ফুল-ফল খেয়ে উপকৃত হয় এরা সবাই আপনার জন্য দোয়া করবে।

একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলাম কাউকে গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দেয় না। এক কথায় গাছের ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো কর্মকাণ্ডই ইসলাম সমর্থন করে না।

সামাজিক সচেতনতায় পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর বিষয়ে খতিবদের ভূমিকা কী হওয়া দরকার এ প্রশ্নের উত্তরে ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদের খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই মসজিদ মাদরাসা সবসময়ই মানুষের কল্যাণে কাজ করে যায়।

কথা যখন দেশ সম্পর্কে তখন বলবো যে আজ  জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষ কতটা অসহায় বোধ করছে। ৩৮  ডিগ্রি মাত্রায় অসহনীয় গরমে জীবন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

আজ উন্নতি দেশগুলো বলে যে আমরাই নির্ধারণ করি যে কত মাত্রায় কার্বন-ডাই অক্সাইড নি:স্বরণ করবো। এই জায়গায় আমাদের উচিত নিজেকে দেশকে সমাজকে বাঁচানোর জন্য আমাদের গাছ লাগানো।

আজ এ তাপমাত্রা আমাদের হাতের কামাই। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন কু আনফুসাকুম ওয়া আহলিকুম নারা। এটা শুধু জাহান্নামের আগুন নয়। বরং দুনিয়ার আগুনও হতে পারে।

ইব্রাহিম আ. নিজের দেশের জন্য যেমন দোয়া করেছেন- ‘রব্বিজ আল হাজা বালাদান আ-মিনা। হে আল্লাহ এ শহর কে এ দেশকে আপনি নিরাপদ করেন। ঠিক তেমনই আমাদের দেশের জন্য আমাদের দোয়া করতে হবে, চেষ্ট করতে হবে।

গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে। বনায়নের ফলে গরম থেকে আমরা রক্ষা পাবো। আর সদকায়ে জারিয়া তো থাকছেই। যতদিন এ গাছ থাকবে এর সাওয়াব পেতে থাকবো আমরা।

পরিবেশের ব্যাপারে রাসূল সা. কতটা রক্ষণশীল ছিলেন এটি একটি হাদিস থেকেই বুঝা যায়। যদি কেয়ামত চলে আসে আর তোমার হাতে একটি গাছ থাকে তাহলে সেটি রোপণ করে দাও। কতটা গুরুত্ব দিলে রাসুল সা. এমন কথা বলতে পারেন।

তাছাড়া গাছগাছালির উপকারের কোনো শেষ নেই। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। বৃক্ষরোপণকে ইসলামে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যে গাছ লাগাবে এবং তা পরিচর্যা করবে, সে অনবরত সাওয়াব পেতে থাকবে।

ঢাকা সাইন্সল্যাব জামে মসজিদের খতিব, জামিয়া ইসলামিয়া রওজাতুল উলুম বাউনিয়াবাদ ঢাকা’র মুহতামিম মুফতি শামছুদ্দোহা আশরাফীর সঙ্গে।

গাছ লাগানোর প্রতি সমাজের মানুষকে প্রেরণা দিতে খতিবদের ভূমিকা কী  সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, উম্মাহর দিকনির্দেশনা করায় খতিবদের দায়িত্ব। গাছ লাগানো ইবাদত। রাসুল সা. নিজে গাছ লাগিয়েছেন সাহাবায়ে কেরামকে লাগাতে বলেছেন।

তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীকে সাজানোর জন্য সবুজায়নকে পছন্দ করেছেন। এটা আল্লাহর বড় নেয়ামত।

খতিবদের উচিত গাছ লাগানোর প্রতি সমাজকে সচেতন করা উৎসাহিত করা। এ ক্ষেত্রে তথ্যভিত্তিক আলোচনা দরকার। কী কী ক্ষতি হচ্ছে গাছ রোপণ কমে যাওয়ায়। আর কুরআন হাদিসে যে উৎসাহমূলক বাক্য আছে, সাওয়াবের বিষয়ে কথা আছে সেগুলো তুলে ধরা। তাহলেই মানুষের মাঝে এ বিষয়ে গুরুত্ব বাড়বে।

হাদিসে এসেছে, যখন কোনো মুসলিম দাছ লাগায়, অথবা কোনো ফসল বোনে, আর মানুষ-পাখি বা অন্য কোনো প্রাণী তা থেকে খায়, এটা রোপণকারীর জন্য সদকা হিসেবে গন্য হবে। (বুখারি-২৩২০, মুসলিম-১৫৫৩)

আরেক বর্ণনায় এসেছে কিয়ামত পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন গাছটি বেঁচে থাকবে বা তা থেকেউপকার গ্রহণ করা হবে) সে গাছ তার জন্য সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে। মুসলিম-১৫৫২

মুসলিম যখন কোনো গাছ রোপণ করে, তো এর যে ফল খাওয়া হবে এটা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে। এ থেকে যা চুরি যাবে তাও সদকা হিসেবে গণ্য হবে। হিংস্র প্রাণীও যদি তা থেকে খায় তাও সদকা হবে।

বৃক্ষরোপণ যেভাবে ছড়ায় সাদকায়ে জারিয়ার ডালপালা

মাদরাসা শির্ক্ষাথীদের বৃক্ষ রোপণে উৎসাহিত করুন

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ