শারমিন তাসমিনা: সেই ২০০৬ সালে এইচ এস সি পাশ করেছি। পড়ালেখা যেমনই করি না কেনো, তীব্র আশা ছিলো এ প্লাস পাবো। সবচেয়ে হতাশাজনক রেজাল্ট করলাম আমি। ৪.৯০। শুধু একটা কথাই মাথায় ঘুরছিলো, যারা আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তাঁদের সামনে দাঁড়াবো কিভাবে? মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো বার বার। চিন্তায় ঘুম হয়না।
আব্বা আম্মা খুব সাপোর্ট দিলেন। এটা তেমন কিছুই না। সামনে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। মন শক্ত করে কোচিং করতে লাগলাম। এরমধ্যে আব্বার ক্যন্সার ধরা পড়লো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি সবদিক দিয়ে হেরে গেছি। আমার আর কোন উপায় নেই। এবার আমার বেঁচে থাকার আর কারণ খুঁজে পাইনা। তাও বেঁচে রইলাম।
একপর্যায়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। কোচিং রেখে বাড়িতে চলে গেলাম। আব্বার শরীর খুব খারাপ হচ্ছিলো। আমি, আম্মা, ভাইয়া পালা করে আব্বার সাথে রাত জাগতে শুরু করলাম।
এর মধ্যে একদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আসলাম। ওখানে রিজিক লিখা ছিলো, ভর্তি হলাম। মাসখানেক পরে ঢাবি তে পরীক্ষা দিলাম, কিন্তু পাশ করারও সম্ভাবনা নেই।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও পড়া হলোনা সব মিলিয়ে। আব্বা কিছুটা ভালোর দিকে যখন, ক্লাস করতে গেলাম ভার্সিটি। প্রায় একমাস পর গিয়ে পড়ালেখার আগামাথা কিছুই বুঝিনা। এর মধ্যে কয়েকবার বাড়ি আসলাম।
আব্বার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিলো। পরীক্ষার ঠিক সাতদিন আগে আব্বা আমাদেরকে রেখে চলে গেলেন। জীবন যেনো থেমেই গেলো আজ।
বাবা নেই, একা মেয়ের আর একদূর গিয়ে পড়ালেখা করার কি আছে? গ্রামে নানান শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় লেগে গেলো।
ভাইয়া এবার খুব শক্ত অবস্থান নিলেন।এক অপরিসীম শুণ্যতা নিয়ে আমি পরীক্ষা দিতে ফিরে গেলাম। প্রথম পরীক্ষার দিন চোখ মুছি আর লিখি।
এভাবে ছোটবড় নানা যুদ্ধ শেষে আমি ডিপার্টমেন্টে ও ফ্যকাল্টিতে ফার্স্ট হয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক সমেত মায়ের বুকে ফিরে আসলাম। সাথে আল্লাহ উপহার দিলেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে মুল্যবাণ সম্পদ, হিদায়াত। আমার দ্বীনের পথে আসা, আলহামদুলিল্লাহ।
সেদিন মরে গেলে এর কিছুই পাওয়া হতোনা।
অনেকেই চলে যায় নিজেকে বঞ্চিত করে,আর কাউকে না। প্লিজ যেও না তোমরা। ওপারে হাজারো আলোর মিছিলে একদিন শামিল হবে হয়তো তুমিও। এপারের কিছুটা অন্ধকার সয়ে যাও, কয়টা দিন। প্লিজ। লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া ।
আরও পড়ুন : মসজিদে নববীতে যেখানে জমে পাঠকের ভিড়