আওয়ার ইসলাম : আগামী ২৪ জুন তুরস্কে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১৯ মাস আগে নির্বাচন হবে এবার। গত এপ্রিলে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক ও সামরিক সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে তুরস্কের একে পার্টির সরকারকে। এমন পরিস্থিতিতে কেন আগাম নির্বাচন দিলো সরকার সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
এই নির্বাচনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে তুরস্কের মুদ্রা বাজার, দেশীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সম্পর্ক। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তার প্রধান রাজনৈতিক মিত্র ডানপন্থী নেতা দেভলেত বাচেলির সাথে মিলে তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন। নির্ধারিত নিয়মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর। বাচেলির ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির সাথে জোট বেধে লড়াই করবে একে পার্টি। এবার একই সাথে অনুষ্ঠিত হবে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন।
প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা লাভের পর এই প্রথম প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তুরস্কে। গত বছর এক গণভোটে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা লাভের পক্ষে রায় দেয় দেশটির জনগন। এর ফলে প্রেসিডেন্ট সরাসরি ভাইস প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, জজসহ উচ্চ পর্যায়ের অনেক পদে লোক নিয়োগ দিতে পারবেন। নতুন নির্বাচনে যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি এ সুবিধা ভোগ করবেন।
নির্বাচনের ঘোষণায় এরদোগান বলেছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তুরস্কের জন্য নির্বাহী প্রেসিডেন্সি খুবই জরুরী। তিনি বলেন, ‘যদিও প্রেসিডেন্ট ও সরকার দারুণ সমন্বয়ের সাথে কাজ করছে তবু পুরনো পদ্ধতির জটিলতা আমাদের কিছুটা ভোগান্তিতে ফেলে’।
তিনি আরো বলেন, ‘সিরিয়াসহ অন্যান্য স্থানের পরিবর্তিত পরিস্থিতি নতুন নির্বাহী ক্ষমতা চালু করা কঠিন। তবে এটি চালু করার দেশের ভবিষ্যতের জন্য জরুরী, যাতে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারি।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগাম নির্বাচন দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে জয় নিশ্চিত করা। এরদোগান-বাচেলির জোট প্রেসিডেন্ট ও পার্লামন্টে উভয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেতে চায় এবারের নির্বাচনে। তাই ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে তারা, এরই একটি কৌশলে হলে ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ না করে আগাম নির্বাচন দেয়া।
তুর্কি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও একে পার্টির সাবেক নেতা আহমেদ দাউদওগলুর সাবেক উপদেষ্টা এতিয়েন মাহচুপিয়ান বলেন, ‘আগাম নির্বাচনের প্রধান কারণ অর্থনৈতিক উদ্বেগ ও সিরিয়া যুদ্ধ। এরদোগানের বিরোধীরা যাতে সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে ভোটারদের কাছে খুব বেশি প্রচারণা চালাতে না পারে সে জন্য দ্রুত নির্বাচন দেয়া হয়েছে।
এই বিশ্লেষক আরো বলেন, ‘জোটের শরিক এমএইচপি এরদোগানের নির্বাহী ক্ষমতা লাভকে সমর্থন করছে। তারাও মনে করছে নির্বাচন ২০১৯ সালে হলে তাদের জেতা কঠিন হয়ে যাবে। তাই ভালো ফলাফলে সম্ভাবন থাকতেই তারা নির্বাচনে জেতে চাইছে’।
আরেক বিশ্লেষক তাহা আকিয়োল মনে করেন, ডানপন্থী আইওয়াইআই পার্টির উত্থান নির্বাচন এগিয়ে আনতে বাধ্য করেছে একে পার্টিকে। একে পার্টি ও এমএইচপির ভোটারদের দলে টানতে ব্যাপক কাজ করছে আইওয়াইআই দলটি।
এই বিশ্লেষকও মনে করছেন, ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সত্ত্বেও সুদের হার, ডলারের বিপরীতে লিরার মান ইত্যাদি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে একে পার্টির জন্য। আর এই ঝুঁকি এড়াতেই তারা আগাম নির্বাচন দিচ্ছে।
বিশ্লেষক ও কলামিস্ট হিলাল কাপলান মনে করেন, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন একটি প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিতে প্রবেশ করবে তুরস্ক। স্থিতিশীল ও শক্তিশালী প্রশাসন ব্যবস্থা চালু হবে দেশটিতে। যার ফলে তুরস্ক এখন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে সেগুলো সহজ হয়ে যাবে। কুর্দিদের পিকেকে ও ওয়াইপিজিকে দমনসহ আঞ্চলিক রাজনীতিতে তুরস্কের অবস্থান অনেক জোরালো হবে।
২০১৫ সালের সর্বশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচনে একে পার্টি ৫৫০ আসনেরর মধ্যে ৩১৭ আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠত লাভ করে। আর পপুলার ভোট তারা পেয়েছিলো প্রায় ৪৯.৫ শতাংশ। আর ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রজব তাইয়েব এরদোগান নির্বাচিত হয়েছিলেন ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে। এবারের নির্বাচনেও একে পার্টির জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। আরটিএন।
আরও পড়ুন : ‘এরদোগান অঘোষিতভাবে মুসলিমজাতির সেনাপতির স্থান দখল করে নিয়েছেন’