শাইখ ড. আবদুল মুহসিন আল-কাসিম
ইমাম ও খতীব, মসজিদে নববী
আল্লাহর কাছে সবচে’ উত্তম ও পুণ্যের কাজ হল ‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ (আল্লাহর পথে আহ্বান করা)। আর দাঈ’র (আল্লাহর পথে আহ্বানকারী) কথাই তাঁর কাছে সর্বোৎকৃষ্ট। তাই তো তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘আর সে ব্যক্তি অপেক্ষা কার কথা অধিকতর উত্তম হতে পারে, যে আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করে এবং নিজেও সৎকর্ম করে আর বলে, আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত!’ (সূরা- হা-মীম সাজদাহ,৩৩)
এ-ই তো ছিল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও তাঁদের অনুসারীদের পথ ও পন্থা। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘(হে নবী) আপনি বলে দিন, এটাই আমার পথ; ডাকি আল্লাহর পথে, উপলব্ধির সঙ্গে, আমি এবং যারা আমাকে অনুসরণ করে। সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর; আর নই আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা- ইউসুফ,১০৮)
আপনার দাওয়াতে কেউ যদি হেদায়েতপ্রাপ্ত হয় তাহলে এতে আপনার জন্য পুণ্যের একটি অংশ রয়েছে। রাসুল সা. বলেছেন, যে কল্যাণ কর্মের পথ দেখায় তার জন্য উক্ত কর্ম সম্পাদনকারীর ন্যায় সওয়াব রয়েছে। (সহীহ মুসলিম) এই ‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ সেসব খুঁটির অন্যতম যেগুলোর উপর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত। আর এটা নাজাত ও মুক্তিরও একটা পথ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন (হাদীসে কুদসীতে) বলেন, ‘চারটি হক যদি মানুষ আদায় না করে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ২. সৎকর্ম করা ৩. পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেওয়া এবং ৪. এতে ধৈর্য ধরা।’
আর এগুলো আল্লাহ তা’আলা এই পূর্ণ সূরায়ও বর্ণনা করেছেন, ‘শপথ মহাকালের, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়। (সূরা- আসর,১-৩)
আর তাই আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা, কোমলতা ও সদুপদেশের মাধ্যমে। আর দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে পুনরুক্তি-দোষ বর্জন করার চেষ্টা করুন। যদি আপনি কাউকে নামাজের প্রতি অলসতা করতে দেখেন, তাহলে তাকে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিন। এটাও একটা দাওয়াত।
পিতা-মাতার প্রতি সীমাহীন অবাধ্য সন্তানকে উপদেশ দিন। এটা তার জন্য একটা দিকনির্দেশনা হবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীকে সদুপদেশ দিন। এটা তার জন্য একটা নসীহত হবে। এগুলো সবই দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত।
দাওয়াহ ইলাল্লাহ শুধু মিম্বারে সদুপদেশ ও মাহফিলে নসীহত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর বিভিন্ন স্তর ও পর্যায় রয়েছে। কেউ যদি একাকী নির্জনে বাস করে, এর থেকে নিবৃত্ত করার জন্য তাকে তিরস্কার করাও একটা দাওয়াত। কল্যাণের পথে সহযোগিতা করা ফযীলতপূর্ণ কাজ। তাই এটাও দাওয়াত।
দাওয়াতের পদ্ধতিসমূহ সহজ করাও দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এভাবে সমাজে বহু ‘মতভিন্ন’ দল থাকা সত্ত্বেও মানুষ বলাবলি, লেখালেখি ও সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে দাঈ ইলাল্লাহয় (আল্লাহর পথে আহ্বানকারী) পরিণত হতে পারে।
মূল লেখক: ইমাম ও খতীব, মসজিদে নববী
অনুবাদ: সাঈদ হোসাইন
আরও পড়ুন : ঝগড়া বিবাদ নয়, তাবলিগের মূল মেহনতে ফিরতে আলেমদের পরামর্শ