সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তারাবির নামাজ ২০ রাকা‘আত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শাইখুল হাদিস মুফতি মনসূরুল হক
প্রধান মুফতি, জামিয়া রাহমানিয়া ঢাকা

হযরত ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম (রহঃ)এর উস্তাদ আবু বকর ইবনে শাইবা (রহঃ) এর কিতাব আল মুসান্নাফ পৃঃ ২/১৬৬, হাদিস নং ৭৬৯১, এছাড়া হাদিসের প্রসিদ্ধ কিতাব বাইহাকি পৃঃ ২/৬৯৮-৬৯৯, হাদিস নং ৪৬১৫, ৪৬১৭, তাবারানি পৃঃ ১১/২৬১, হাদিস নং ৭৭৩৩, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিসের রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল দ্বারা ২০ রাকা‘আত তারাবি নামাজ প্রমাণিত।”

(আন-নুকাত আলা মুকাদ্দামাতি ইবনিস সালাহ-১/৩৯০, আন-নুকাত আলা কিতাবি ইবনিস সালাহ-১/৪৯৪)
দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রাযি.) তার খেলাফত আমলে মসজিদে নববীর মধ্যে তারাবি নামাজের অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জামা‘আতকে একত্র করে হযরত উবাই বিন কাআব (রাযি.) এর ইমামতীতে ২০ রাকা‘আত তারাবীহ নামাযের হুকুম দিয়েছিলেন।

সকল সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) তাঁর সমর্থন করেছিলেন। তারাাবর নামাজ যদি নবি আলাইহিস সালাম থেকে ২০ রাকা‘আত প্রমাণিত না হতো তাহলে সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) অবশ্যই আপত্তি তুলতেন-(বাইহাকি পৃঃ ২/৪৯৭, হাদিস নং ৪৬১৭,৪৬২০, ৪৬২১।

মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক পৃঃ ৪/২৬১, হাদিস নং ৭৭৩২, বুখারি পৃঃ ১/৪৭৪, হাদিস নং ২০১০, মাজামাউ ফাতাওয়া ইবনি তাইমিয়া-২৩/১১২-১১৩ বাদায়েউস সানায়ে-১/৬৪৪)
তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান গনী (রাযি.)

চতুর্থ খলিফা হযরত আলি (রাযি.) সহ সাহাবায়ে কিরামের (রাযি.) ঐক্যমতে, উম্মাতে মুসলিমার ১৪০০ শত বছর পর্যন্ত ধারাবাহিক আমল তারাবি নামাজ বিশ রাকা‘আত চলে আসছে।

যা আজ পর্যন্ত বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে চালু আছে-(বাইহাকী কুবরা পৃঃ ২/৪৯৬, হাদীস নং ৪৬১৭, পৃঃ ২/৪৯৭, হাদীস নং ৪৬২০, ৪৬২১, শরহুল মুহাজ্জাব পৃঃ ৩/৩৬৩-৩৬৪)

ইমাম আ’জম আবু হানীফা (রহঃ), ইমাম মালেক (রহঃ), ইমাম শাফেয়ী (রহঃ), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) যারা প্রত্যেকে স্বীয় যামানায় সব চেয়ে বড় কুরআন ও হাদীস বিশারদ ও ফকীহ ছিলেন তাদের সকলের মতে তারাবীহ নামায ২০ রাকা‘আত, ৮ রাকা‘আত নয়। (আলমাবসূত পৃঃ ২/১৯৬, ই‘লাউস সুনান পৃঃ ৭/৬৯/৭১, আত্তামহীদ পৃঃ ৩/৫১৮, আলমুদাউওয়ানাতুল কুবরা পৃঃ ১/২৮৭, শরহুস্ সুন্নাহ পৃঃ ২/৫১১, মুগনী পৃঃ ২/৬০৪)

আট রাকা‘আত তারাবির নামাজ পড়া রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল ও সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)-এর ইজমা পরিপন্থি এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলের বিপরীত, অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুলাফায়ে রাশেদীনের অনুসরণের জন্য তাকীদ করে গেছেন। (আবু দাউদ হাদীস নং ৪৬০৭, তিরমিজি হাদীস নং ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৪২-৪৩)

আট রাকা‘আত নামাযের হাদিসটি ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিমসহ অন্যান্য মুহাদ্দেসীনে কিরামের মতে একান্তভাবে তাহাজ্জুদের জন্য প্রযোজ্য।

হজরতের সব বয়ান ও মালফুজাতসহ ইসলামী বই মোবাইলে পড়তে ইনস্টল করুন ইসলামী যিন্দেগী। 

কোন অবস্থায় তা তারাবীহ নামাযের জন্য প্রযোজ্য নয়, এ জন্য তাঁরা এ হাদীসটি তাদের কিতাবে তাহাজ্জুদের অধ্যায় এনেছেন, তারাবীহ অধ্যায়ে তাবাবীহ নামাযের রাকা‘আতের সংখ্যা প্রমাণের জন্য আনেননি। তাছাড়া উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত হাদীসটি এমন এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর যার ধারণা ছিল নবী ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে অন্য মাসের তুলনায় তাহাজ্জুদ নামায অনেক বেশি পড়তেন, তার প্রশ্নের জবাবে বলেছেন যে, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানে ও রমাযানের বাইরে অন্যান্য মাসে আট রাকাআতের বেশী তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন না।”

এখানে তিনি এমন নামাযের কথা আলোচনা করেছেন যা রমাযান শরীফে এবং রমাযান ছাড়া অন্য মাসেও পড়া যায়। আর তারাবীহ নামায রমাযান ছাড়া অন্য মাসে পড়া যায় না। কাজেই এ হাদীস দ্বারা কস্মিনকালেও তিনি তারাবীহ নামায ৮ রাকা‘আত বুঝাননি। বরং তাহাজ্জুদের নামায ৮ রাকা‘আত বুঝিয়েছেন। যা রমাযান ও রমাযানের বাইরেও পড়া যায়।
অত্যন্ত দুঃখজনক যে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কতক লোক যারা হাদীসের মর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ তারা এ হাদীসের দ্বারা তারাবীহ নামায ৮ রাকা‘আত প্রমাণ করে, যা নিতান্তই বোকামী। (বুখারী পৃঃ হাদীস নং ১১৪৭, বুখারি হাদিস নং ২০১৩)

তারাবির নামাজ মাত্র ৮ রাকা‘আত মনে করে পড়লে তা একাধারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল খুলাফায়ে রাশেদীন এর আমল এবং সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.) এর ইজমা বা ঐক্যমতের পরিপন্থি হওয়ায় জঘন্য বিদ‘আত এবং মনগড়া ইবাদত হবে। যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস অনুযায়ী গোমরাহী এবং জাহান্নামের আমল।

এর থেকে বেচেঁ থাকা সকল মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব।(বুখারি হাদিস নং ২৬৯৭, মুসলিম হাদিস নং ১৭১৮, আবু দাউদ হাদিস নং ৪৬০৬, ইবনে মাজাহ হাদিস নং ১৪)

তারাবি নামাজে বিতর সহ ৪ রাকা‘আত পর পর ৫ টি বিরতি। (বাইহাকি হাদিস নং ৪৬২১, হিদায়া পৃঃ১/১৫০, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া পৃঃ ১/৬৫৪)

তারাবি অর্থ বিশ্রাম করা, তার বহুবচন তারাবি। শব্দটি বহু বচন হওয়াটা দলীল যে এ নামাযে দু’এর অধিক বিরতি বিশ্রাম হওয়া জরুরী। তারাবীহ ৮ রাকা‘আত হলে তা কখনো সম্ভব হবে না।
তারাবীহ সহ সকল প্রকার নামাযে তাজবীদের সাথে তিলাওয়াত করা জরুরী। তাজবীদ বিহীন অস্পষ্ট অতি দ্রুত তিলাওয়াত শরী‘আতে নিষেধ। (সূরায়ে মযযাম্মিল ৪ তাফসীরে মাজহারী পৃঃ৯/১০, তালীফাতে রশীদিয়া পৃঃ২৬৯)

এটিও পড়ুন: রোজার ফজিলত ও জরুরি মাসাইল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ