সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


দেওবন্দে উচ্চ শিক্ষার প্রক্রিয়া নিয়ে যা বলেলন দুই আলেম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: এশিয়া মহাদেশে উম্মুল মাদরিস বা মাদরাসাসমূহের গোড়াঘর বলে পরিচিত ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ এলাকায় অবস্থিত ‘আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ’। সংক্ষেপে যা দেওবন্দ মাদরাসা নামে পরিচিত।

১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মাদরাসার অনুকরণে পাকিস্তান বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে  গড়ে ওঠে হাজার  হাজার মাদরসা। বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা এ মাদরাসাগুলোকে কওমি মাদরসা বলে জানা হয়।

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে উচ্চ শিক্ষার জন্য গিয়ে থাকেন। তবে সরকারিভাবে স্টুডেন্ড ভিসা না থাকায় তারা নানা সংকটে পড়েন।

দেওবন্দ গমণকারীদের সরকারি ভিসা ও নানা বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশের দুজন শীর্ষ অালেমের সঙ্গে।

মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ আল ফরিদি। মাদারীপুরের শিবচরের জামিয়াতুস সুন্নাহর মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস।

আমাদের দেশে মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর থাকা সত্বেও  দেওবন্দ পড়তে যাওয়া কতোটা জরুরি?

শিক্ষা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। দেশে বা বিদেশে শিক্ষা গ্রহণের জন্য যে কোন জায়গায় যেতে পারে একজন শিক্ষার্থী। আমাদের দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা যায় মূলত বরকতের জন্য।

যেহেতু দেওবন্দ মাদরাসা কওমি মাদরাসার মূল কেন্দ্র। তাই সবার বিশেষত মেধাবীদের আশা থাকে সেখানে পড়তে যাওয়ার। একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে নিজের মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারার গৌরব সবারই চাহিদা থাকে। তবে তা বৈধ উপায়ে হওয়া জরুরি।

কওমি পড়ুয়ার তো বিদেশে পড়ার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা পান না?

বিদেশে শিক্ষা লাভে ইচ্ছুকদের ভিসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। আমি মনে করি সরকারের এ ব্যাপারে নজর দেয়া দরকার।

কখনো কি দেওবন্দ পড়তে যাওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলেমদের আলোচনা হয়েছে?

আলোচনা হয়েছে। তবে তা ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক পর্যায়ে হয়েছে। আমি মনে করি সেটা যথেষ্ট নয়। বড় কোন উদ্যোগ দরকার বিষয়টি সুরাহা করার জন্য।

দেওবন্দের বিষয়ে আরো আগে কেন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নি?

আগেও বিষয়টি নিয়ে অনেকে ভেবেছেন। তখন এতোটা সংকট ছিলো না। এখন সংকট তৈরি হয়েছে। আশা করি সমাধানও হবে।

সংকট সমাধান ও ভবিষ্যতে দেওবন্দ পড়তে যাওয়ার বিষয়টি নির্বিঘ্ন করতে আপনার পরামর্শ কী?

আমার পরামর্শ হলো, এখন বেফাকের (বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড) উচিত সরকারি পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা। প্রথমে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কাছে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে আলোচনা করা যায়।

শিক্ষামন্ত্রণালয় বিষয়টি সরকারিভাবে উত্থাপন করবে। সঠিক প্রক্রিয়ায় কওমি শিক্ষার্থীদের ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করতে উলামাদের জোরালো ভূমিকা দরকার।

অপর দিকে দেওবন্দের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক একটি সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া দরকার।

ক্ষেত্রে বেফাক বা হাইআতুল উলইয়া প্রতিনিধিত্ব করলে কাজগুলো অনেক সহজে সমাধা হবে বলে মনে করি।

আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। রাজধানীর জামিয়া ইকরার শায়খুল হাদিস ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহর ইমাম। যিনি এক সময়ে দেওবন্দের রেকর্ড গড়া ছাত্র ছিলেন। দেওবন্দের দায়িত্বশীল ও মাদানি পরিবারে সঙ্গে রয়েছে গভীর সম্পর্ক।

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ভারতের দেওবন্দে পড়ালেখা করতে যায়।এটাকে কীভাবে দেখেন?

দেবওবন্দে পড়তে যাওয়ার বিষয়টি ভালো। যাওয়ার দরকারও মনে করি। তবে তা বৈধ উপায়ে হওয়া দরকার। স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া ট্যুরিষ্ট বা মেডিকেল ভিসায়ও না যাওয়া উচিত।

কেননা,  এতে শিক্ষার্থী যেমন ক্ষতির মুখে পড়তে  পারে তেমনি প্রতিষ্ঠানের ওপরও চাপ থাকে। বর্তমান ভারত সরকার তো মাদরাসা বান্ধব নয়। তাই সতর্কতাই কাম্য।

ইনস্টল করতে ক্লিক করুন

দেওবন্দে পড়ার পথ সুগম করতে আপনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখন তা কোন পর্যায়ে আছে?

ভারতে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় থাকতে আমি বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে  ছিলো। কিন্তু ভারতে সরকার পরিবর্তন ও বাংলাদেশের আলেমেদের তেমন জোরালো দাবি না থাকায় বিষয়টি থেমে যায়। এতো বড় একটি কাজ তো একার কথায়  হয় না।

গত বছর আপনি দেওবন্দ সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়েছিলেন...

তাদের সঙ্গে প্রাথমিক অালোচনা  হয়েছিলো। তবে চূড়ান্ত কিছু হয় নি।

আপনার তো মাদানি পরিবারে সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষত মাওলানা মাহমুদ মাদানি। তো তাদের সঙ্গে কি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলেন?

ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়িদ মাওলানা আসআস মাদানি রহ. বিষয়টি নিয়ে সর্ব প্রথম আলোচনা করেছিলাম। তিনি উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের থেকে তখন জোরালো আবেদন না থাকায় তেমন কিছু হয় নি।

তখন অবশ্য ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছিলো, কার অধীনে স্টুডেন্ট ভিসা দেয়া হবে। অাপনারা তো কোন ইউনিভার্সিটির অধীনে নন। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্টুডেন্ড ভিসা দেয়া হয়। মাওলানা মাহমুদ মাদানিও বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন।

আপনি কি মনে করেন এখানে দেওবন্দেরও কিছু করার আছে?

দেওবন্দ তো অনেক করেছে। তারা যতো দিন সম্ভব হয়েছে আমাদের দেশের ছেলের পড়ালেখার সুযোগ দিয়েছে। নানা ভাবে সহযোগিতা করেছে। তারা তো ভিন্ন দেশের। সে দেশের নির্দিষ্ট আইন মেনেই তাদের চলতে হয়।

আন্তর্জাতিকক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের ওপর নানামুখী চাপও থাকে। দেওেবন্দের উলামায়ে কেরাম, উস্তাদগণ বাংলাদেশি ছাত্রদের প্রতি যথেষ্ট সহনশীল।

স্থায়ী সমাধানে করণীয় কি?

এখন যা করতে হবে তা হলো, সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা চাই। এ ক্ষেত্রে ‍বেফাককেই এগিয়ে আসতে হবে। এখানে ব্যক্তি উদ্যোগের তেমন সুফল আসবে না। আমি চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পাশে মজবুত সহযোগিতা পাইনি।

হাইঅাতুল উলইয়ার তত্বাবধানেও উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সরকারের কাছে দাবি দাওয়া পেশ করবেন।

দেওবন্দের সঙ্গেও তারা যোগযোগ রাখবেন। দু দেশের পররাষ্ট্রমন্তণালয়ে আলোচনা করবেন। স্টুডেন্ট ভিসা দেয়া হোক বা অন্য কোন উপায়ে হোক দেওবন্দে যাতে আমাদের ছেলেরা নির্বিঘ্নে পড়ালেখা করতে পারে সে ব্যাপারে স্থায়ী কোন সমাধান খুঁজে বের করা। তাহলেই ভালো কিছুর আশা করা যায়।

দেওবন্দে পড়ার ন্যায্য দাবীতে মাঠে নামছেন আলেমরা

বাংলাদেশীদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে দেওবন্দে পড়াশোনার সুযোগ দেয়া উচিত!

-আরআর

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ