সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


সঙ্কটে তাবলিগ: দুই আলেমের বিপরীতমুখী মতামত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তাবলিগ জামাত খালেস দীনি জামাত হিসেবে বিশ্বে প্রসিদ্ধ। এতে যুক্ত হয়ে মানুষ আত্মশুদ্ধি লাভ করেন সহজে। দীনের এ মেহনতে সঙ্কট মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তাই ধর্মপ্রাণ সব মানুষের প্রত্যাশা তাবলিগ জামাতে চলমান সমস্যা দ্রুত নিরসন হোক।

চলমান এ সঙ্কট দীর্ঘ দিনের ধরে সৃষ্টি হলেও তা নিসরন করা যায়নি। বরং দিন দিন আরও বিস্তৃত হয়েছে। সামান্য ‘রুজু’তে আটকে থাকা বিষয়টি সৃষ্টি করেছে বড় ধরনের ফাটল। বর্তমানে দুই পক্ষের দাবি ও বক্তব্য কী সে বিষয়ে দুই পক্ষের দুইজনের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদক কাউসার লাবীব

উল্লেখ্য, এ দুজনই তাবলিগের চলমান এ সমস্যা নিয়ে দিল্লি সফর করেছেন। এদেরই একজন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) যুগ্ম মহাসচিব ও জামিয়া রাহমানিয়া মুহাম্মাদপুরের প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক। 

আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের প্রধান সমস্যা দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজকে মানা বা তাদের নির্দেশ পালন করা।

আমি মনে করি সঙ্কটময় এই সময়ে বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরাম, বুজুর্গানে দীন এবং তাবলিগের মুরব্বিদের নির্দেশে দাওয়াতের এ কাজ চললে সমস্যা থাকবে না।

তাছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অনেক মুরব্বি, আলেম-ওলামা নিজেদের তাবলিগের অন্যতম ব্যক্তিত্বে তৈরি করেছেন, যাদের সামনে তাবলিগের কাজের পুরো নকশা, পরিকল্পনা ও বিষয়াদি শতভাগ বিদ্যমান আছে। সুতারাং দিল্লির নিজামুদ্দীন ব্যতিত আমাদের দেশের তাবলিগকে আমাদের মুরব্বি ওলামায়ে কেরাম সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

হঠাৎ তাবলিগের প্রধান মারকাজ নিজামুদ্দীনকে না মানার পরামর্শ কেন দিচ্ছেন? এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাবলিগের কেন্দ্রীয় মারকাজ দিল্লির নিজামুদ্দীনের মুরব্বিদের মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এ বিভক্তি নিরসন না হওয়া পর্যন্ত নিজামুদ্দীনের কোনো নির্দেশ মানা ঠিক হবে না।তাছাড়া নিজামুদ্দীনের বাইরে অবস্থানরত অনেক মুরব্বিকেও তো নিজামুদ্দীনকে মানা দাবিদাররা অনুসরণ করছে না।

তাছাড়া, নিজামুদ্দীন মারকাজের প্রধানতম ব্যক্তি মাওলানা সাদ কান্ধলভী কুরআন সুন্নাহর দৃষ্টিতে নানা সময়ে চরম আপত্তিকর মতামত দিয়েছেন। তার মতামত প্রত্যাহার এবং ভুলত্রুটির বিষয়ে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ একধিকবার তাকে সতর্ক করেছে কিন্তু তিনি তার মতামত থেকে মোটেও ফিরে আসেননি।

দেওবন্দ তার ব্যাপারে বর্তমানে মোটেও আস্থাশীল নয়। বরং আগামী দিনেও বারবার তিনি এই আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। অথচ এমন আপত্তিকর বিষয়গুলো মানলে বা বিশ্বাস করলে মানুষকে গোমরাহির দিকে নেয়া হবে।

গত বিশ্ব ইজতেমার আগে ভারতে যাওয়া ৫সদস্যের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হয়- ‘দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ব্যাপারে শুধু একটি লিখিত মতামত দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। আর আপনারাও দেওবন্দের মতামতের ভিত্তিতেই কাজ করছেন বলে দাবি করেন। তাহলে আপনারা কেন সরাসরি মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে ইজতেমায় অংশ নিতে বাধা দিলেন এবং তার অনুসারীদের  কাজে প্রতিবাদ প্রতিরোধ বা বাধা দিচ্ছেন?

এছাড়া ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মাওলানা সাদ কান্ধলভী তো ইজতেমা করছেন । কিন্তু সেখানে তো দেওবন্দের ওলামায়ে কেরাম তাকে কোনো বাধা দিচ্ছেন না।

কাকরাইল মারকাজকে মাওলানা সাদের চিঠি

এসবের উত্তরে তিনি বলেন, দেওবন্দ শুধু মতামতই দেয়নি। বরং দেওবন্দ মাদরাসায়  বর্তমানে তাবলিগের কার্যক্রম বন্ধ আছে। যা মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বক্তব্য এবং নিজামুদ্দীন মারকাজের পারস্পরিক আলেমদের মতপার্থক্যের কারণেই হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভারতের সামগ্রিক পরিবেশ পরিস্থিতি আর বাংলাদেশের সামগ্রিক পরেবশ ও  আলেমদের আধিপত্তের বিষয়টি এক নয়। দেওবন্দ তাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের আলেমরাও তাদের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।

চলমান সঙ্কট নিরসনে মাওলানা সাদের সর্বশেষ অবস্থা জানতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাঠানো প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য,সাভার আর রহমান মসজিদের খতিব ও মারকাযুল উলুম আশ-শারইয়্যার প্রিন্সিপাল মাওলানা জিয়া বিন কাসেম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের অস্থিরতার মূল কারণ তাবলিগের প্রধান মারকাজ দিল্লির নিজামুদ্দীনকে না মানা ও তার আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর সঙ্গে বিদ্রোহ করা।

নেজামুদ্দীনের অনুসারী এ আলেম আরো বলেন, নবীওয়ালা কাজে মতানৈক্য সৃষ্টি করে আজ উম্মতকে দুইমেরুতে দাঁড় করানো হয়েছে। আমি মনে করি এর সমাধান এখন মাওলানা যুবায়ের আহমদ ও আহলে শুরার কাছে। তারা যদি এই মুহূর্তে ঘোষণা দেন ‘আমরা নিজামুদ্দীনকে মেনে নিলাম। তাহলে একঘন্টার মধ্যে এ সমস্যার ৯৯ভাগ সমাধান হয়ে যাবে।’

মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে তো বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরাম এতোদিন ধরে মেনেই আসছিলেন। এমনকি আজ পর্যন্ত মানার ক্ষেত্রে কোনো মতানৈক্য ছিল না। তবে তিনি যেসব বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো থেকে রুজু (মতামত প্রত্যাহার) না করলে তাকে কীভাবে মানবে?

আলেমদের মর্যাদা বিষয়ে মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিশেষ বয়ান

মাওলানা জিয়া বিন কাসেম বলেন, ‘মাওলানা সাদ কান্ধলভী এ পর্যন্ত ৬বার রুজু করেছেন। ৪ বার তাহরিরি (লিখিত), ২বার তাকরিরি (মৌখিক)। এরপরও কি বলবেন রুজু হয়নি?

তাছাড়া দারুল উলুম দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দিস শাইখ নেয়ামতুল্লাহ আজমি বলেছেন, মাওলানা সাদের রুজু গ্রহণ হয়েছে। আর সাইয়েদ আরশাদ মাদানী বলেছেন, ফতোয়া বা আপত্তি কোনো বিষয় নয়। মাওলানা সাদ কান্ধলভী আলমি শুরা মানলে এক মিনিটে এ আগুন নিভে যাবে।

মাওলানা জিয়া বিন কাসেমের কাছে এখনো মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিষয়ে দেওবন্দের অনাস্থা বিদ্যমানের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দ বলতে আপনি কী বুঝাচ্ছেন? সেখানে তো আমার জানা মতে শুধু দুই/তিনজন মাওলানা সাদ বিরুধী। দেওবন্দ মানে কিন্তু ওই দুই তিনজন নয়। তাদের ছাড়াও অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছে সেখানে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে পুরো বিষয়টি এখন দেওবন্দকে জানানো হোক। আর দেওবন্দে এ বিষয়ে একটি বোর্ড গঠন করা হোক। তাহলে দেখা যাবে সেখান থেকে মাওলানা সাদের পক্ষে রায় আসে নাকি বিপক্ষে।

দিল্লির নিজামুদ্দীন বা মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে না মেনে বাংলাদেশের আলেম ওলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক যদি বাংলাদেশের তাবলিগ চলে তাহলে সমস্যা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিষয়ে যে আপত্তি আগে ছিল তা এখন আর নেই। আর দেওবন্দ কি কখনো বলেছে যে মাওলানা সাদের মতামত মানা শরিয়তে জায়েজ নেই?

আমাদের দেশের ওলামায়ে কেরাম আগ বাড়িয়ে এসব কথা বলছেন। আমি তো মনে করি আমাদের ওলামায়ে কেরামের এসব প্রচার করাটা একটু বাড়াবাড়ি।

আর বাংলাদেশের আলেমদের পরামর্শ অনুযায়ী তাবলিগ চলার যে কথাটি বললেন, তা কখনো হওয়ার নয়। তাবলিগের নেতৃত্ব সবসময় তাবলিগের আলেমরাই দিয়েছেন। ওলামা কেরাম তাদের কাজের পরামর্শক বা মহব্বতকারী ছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মারকাযে উত্তেজনা: বহিস্কার ১

এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ