হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: সাম্প্রতিক দিল্লির নিযামুদ্দিন তাবলিগি মারকাযে মাওলানা সাদ কান্ধলভি হায়াতুস সাহাবার তালিমের মজলিসে উলামাদের সোহবত গ্রহণ, তাদের সম্মান মর্যাদা ও তাদের থেকে দীনের ইলম হাসিল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচেনা পেশ করেন। সে বয়ানের চুম্বকাংশ আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
তিনি বলেন, গতকাল বুখারি শরিফের কিতাবুলআম্বিয়াতে নূহ আ. এর আলোচনায় পড়লাম, আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে মু'তাদিল বা ন্যয়পরায়ণ উম্মত হিসাবে পাঠিয়েছেন। তাই কোন ব্যক্তির ভুল হলে তার ভুল অবশ্যইভুল। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তার ভালো ও সঠিক কথা গুলোকেও জোরপূর্বকভাবে ভুল প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টায় নিজেকে লিপ্ত রাখব ৷
তালিমে উপস্থিত সাথীদের উদ্দেশ্য করে মাওলানা সাদ কান্ধলভি বলেন, ইলম অর্জনের আসল জায়গা হল উলামায়ে কেরামের মজলিস ৷ কেননা, উলামায়ে কেরাম থেকে ইলম হাসিল করলে সেই ইলমের সাথে তরবিয়াত-আত্মশুদ্ধিও থাকে৷
আর ইলম, উলামায়ে কেরাম ও আহলে তাকওয়া ছাড়া হাসিল করলে কিছু মা'লুমাত বা জ্ঞান তো অবশ্যই হাসিল হবে, কিন্তু সেই জ্ঞানের সাথে তরবিয়াত তথা আত্মশুদ্ধি অর্জন হবে না ৷
এ জন্য সর্বক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামগণের মজলিসের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা চাই ৷
কেননা, প্রত্যেক জিনিস লেনদেন করার জায়গা নির্দিষ্ট, সবজির দোকানে ওষুধ পাওয়া যাবে না, আর ওষুধের দোকানে গোশত পাওয়া যাবে না ৷ আর গোশ্তের দোকানে সবজি পাওয়া যাবে না ৷
এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে, দুনিয়ার সামানা ক্রয়ের জন্য প্রত্যেকটির জায়গা আলাদা আলাদা নির্ধারিত রয়েছে। অথচ, ইলমের জন্য আসল ও নির্ধারিত জায়গা উলামা হযরাত ছাড়া অন্য কোথাও ইলম তালাশ করা হবে!
এটা তো একটা সাধারণ বিষয় যে, দুনিয়াবী জিনিস যদি নির্ধারিত শপ ছাড়া না পাওয়া যায়, তাহলে ইলমের মত এত দামী একটা জিনিস উলামা এবং ইলমের মারকাজ মাদারিস ছাড়া কিভাবে পাওয়া যাবে ও অর্জন করা যাবে?
এ জন্য ইলম অর্জন করো সাহাবায়ে করাম ও আমাদের আকাবিরদের তরিকার উপর ৷ নিজের পরিবেশ থেকে বের হয়ে ইলমের পরিবেশে প্রবেশ করে ইলম অর্জন করাই হলো আসল ইলম ও মুজাহাদা, নিজ ঘরে বসে বসে ইলম অর্জন করাটা আসল ইলম ও মুজাহাদা নয় ৷
হজরত মাওলানা সাদ কান্ধলভি আরো বলেন, যদি সমস্ত মাখলুকসহ ফিরিশতাগণের দুআয়ে মাগফিরাত ও রহমতে শামিল হতে চাও তাহলে নিজের ঘর ছেড়ে ইলমি পরিবেশে আসো ৷ এবং দুইটা নিয়ত করে বের হও। প্রথমত ইলম হাসিল করা৷ দ্বিতীয়ত, ইলমের সাথে সাথে উম্মতের হিদায়াতের ফিকিরও হাসিল করা ৷
কেননা, উলামা হযরাত হলেন তালিব বা আহ্বানকারী। আর উম্মত হল মাতলূব বা যাকে আহ্বান করা হয় ৷ জাহালাত মূর্খতা মিটানোর একটাই রাস্তা সেটা হলো প্রত্যেক আলেম যেন মুআল্লিম বনে যায় ৷ তুমি যতটুকু ইলম জান ততটুকু ইলমের জন্য হলেও মুআল্লিম বনে যাও ৷ তবেই সমাজ থেকে মূর্খতা দূর হবে ৷ সাহাবাযুগে নিজে ইলম হাসিল করে সেই ইলমের জন্য নিজে মুআল্লিম হওয়াটাই ছিল অন্যতম কাজ ৷
শুধু বয়ান শুনলেই হবে না। বয়ান শোনা এক জিনিস আর দ্বীনের ইলম ফারায়িজ, ওয়াজিবাত, সুনান ফিকহ অর্জন করা আরেক জিনিস। এই যুগে তো বড় বড় ইজতিমায় বয়ান শোনার জন্য মানুষের অভাব নেই কিন্তু ইলম হাসিল করার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার মত মানুষের অনেক অভাব রয়েছে ৷
আর উলামায়ে কেরামের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আওয়ামদের সাথে মেলামেশা করে তাদেরকে দীনের তা'লীম দেওয়া ৷ এবং এর জন্য সহজ একটা রাস্তা হল সময় হলে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া। সব সময় সব কাজ এক সাথে করা যায় না । আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে আওয়ামদের সাথে যতটুকু মেলামেশা করে তা'লীম দেয়া যাবে ততটুকু অন্য কোন অবস্থায় দেওয়া যাবে না ৷
এ জন্য যারা ইলমের তলব নিয়ে উলামায়ে কেরামের কাছে আসবে তাদেরকে তো ইলম শিখাতেই হবে আর যারা আসবে না সময় সুযোগ করে তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকেও শিখাতে হবে ৷ উলামাদের থেকে আওয়াম দূরে থাকার মানেই হল আওয়ামদের মাঝে মতানৈক্য ও মূর্খতা সৃষ্টি হওয়া ৷
এ জন্যই আমি আওয়ামদেরকে বলব, তোমরা উলামাদের সোহবতে যাও এবং এমনভাবে যাও যেমন কোন পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি পান করার জন্য দৌড়ে পানির কাছে যায় ৷ হজরত উমর বিন খত্তাব রা. বলতেন, যদি উলামাদের মজলিস, আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া, আর ইনফিরাদি আমলে একাগ্রতা না হত তাহলে আমি দুনিয়াতে থাকাটা পছন্দ করতাম না ৷
তিনি তিনটি কথা বলেছেন, উলামাদের মজলিসে বসা এবং দীনের বিষয় গুলো এমন ভাবে একটা একটা করে শিখা যেমন সবাই খানার প্লেটে বসে ভাল ভাল খাবার গুলো আলাদা করে খায় ৷ দ্বিতীয়ত, আল্লাহর রাস্তায় সময় ব্যয় করা ৷ তৃতীয়, নাওয়াফেল ইবাদতে মনোনিবেষ করা ৷
মানে তালিম, ইবাদত, দাওয়াত এই তিন কাজ যদি না হত তাহলে হজরত উমর বিন খত্তাব রা. দুনিয়াতে বেঁচে থাকাটা পছন্দ করতেন না ৷
হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল স.-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আমাদের মধ্যে কারা সর্বোত্তম সাথী? তিনি বলেন, যাদের সাথে চলা ফেরা করলে কথা-বার্তা বললে, যাদের মজলিসে গেলে, যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্বরণ হয়, আখেরাতের কথা মনে হয় তারাই হলেন সর্বোত্তম সাথী, তাদের সোহবতকে আবশ্যক করে নাও ৷ আর মুহাদ্দিসগণ এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন তারা হলেন, উলামায়ে কেরাম ৷
আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি ইলম হাসিলকরা, উলামাদের মজলিসে যাওয়া ও তাদের সোহবত গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরো পড়ুন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মারকাযে উত্তেজনা: প্রশাসনের বৈঠক বহিস্কার ১