সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কুরঅানের ঘটনা অবলম্বনে নাটক বা কার্টুন তৈরি কি শরিয়তসম্মত?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম: কুরআনুল কারিমে বর্ণিত ‍বিভিন্ন ঘটনা যেমন- ইউসুফ-যুলাইখা, বদর যুদ্ধ, মক্কাবিজয়, ফেরাউনের পানিতে ডুবে মরাসহ ইসলামের অন্যন্যা ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ সাথে সাথে মর্যদাপূর্ণও বটেও। বিশেষত: কুরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলো আরোও বেশি গুরুত্ব রাখে।

এসব ঘটনার নাটক করা , দেখা , দেখানো কোনভাবেই জায়েয হবেনা। কেননা, তা কুরআন অবমাননার শামিল। যার কিছু দিক নিম্নে বর্ণনা করা হলো। যেমন-

১. কুরআনে কারীম যে আযমত ও সম্মানের বাহক তার দাবি তো হলো তাতে বর্ণিত সকল বিষয়বস্তুকে পূর্ণ আদব ও সম্মানের সাথে তার ভাষায় পড়া, শুনা ও শুনানো। এর ‍বিপরিতে নাটকনির্মাতাদের জন্য পবিত্র কুরআনে বর্ণিত কোনো ঘটনাকে নাটকে রূপ দিয়ে তার ভাবার্থ বুঝানোর চেষ্টা করা কুরআনে নিষিদ্ধ আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরতকারী “ লাহউ ওয়া লাইব” এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এরূপ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

২. কোনো নাটকই ছবি মুক্ত হয়না। আর কোনো প্রাণীর ছবি বানানো, দেখা, দেখানো সবই হারাম। আর কুরআনের বিষয়বস্তুকে ছবির মাধ্যমে পেশ করা কুরআন অবমাননা ও বটে ।

৩. এসব নাটকের পূর্ণতা নারীদের ছাড়া হয়না। নারী ‍দিয়ে নাটকগুলো সাজানো হয়। আর নারীদের ছবি দেখা স্পষ্ট হারাম। বলাবাহুল্য, এমন একটি নাজায়েয বিষয়কে কুরআনের বিষয়বস্তু উপস্থাপনার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা নিতান্তই কুরআনের তাচ্ছিল্যের শামিল।

৪. যেকোনো সত্য ঘটনার নাটকই তাতে কিছু কিছু কাল্পনিক বিষয় প্রবেশ করানো ছাড়া সম্ভব হয়না। সুতরাং কাল্পনিক কিছু বিষয়কে সংযোজন করে পুরো নাটকটাই কুরআনে বর্ণিত বলে প্রচারণা চালানো যার ফলে কুরআন ও কুরআন নয় এমন বিষয় এক হয়ে যায়। উপরন্তু এটি কুরাআনের অর্থগত বিকৃতিরও শামিল। তাই তা হারাম।

৫. কুরআনের উল্লিখিত ঘটনার অনেক ক্ষেত্রে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার একাধিক অর্থ ও ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে। অকাট্যাভাবে এর কোনো একটি অর্থকে কুরআনের আসল অর্থ বলে মত ব্যক্ত করার সুযোগ নেই। অথচ নাটকের ক্ষেত্রে সুনিশ্চিতভাবে একটি ব্যাখ্যা ও অর্থকেই নির্দিষ্ট করে নেয়া হয়। যার দ্বারা বুঝা যায়, এই আয়াতের একটিমাত্রই অর্থ । এটি একটি নাজায়েয হওয়ার কারণ।

৬. এসব নাটকের উদ্দেশ্য তা’লীম, তাবলীগ কিংবা উপদেশ গ্রহণ নয়; বরং খেল-তামাশা ও আনন্দ উপভোগ করা। যার স্পষ্ট প্রমাণ হলো এসব ঘটনা ওয়াজ-নসিহতে শুনানো হলে, তেমন কউ শুনেনা। তবে নাটকের মাধ্যমে দেখালে আগ্রহভরে দেখে ও শুনে। সুতরাং কুরআনকে খেল-তামাশা বানানোর মত বিষয় কিভাবে জায়েয হতে পারে।

অতএব, প্রশ্নোক্ত বিষয়গুলোর নাটক করা, দেখা বা কম্পিউটার/মোবাইলে সংরক্ষণ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই তা থেকে বিরত থাকা অবশ্য কর্তব্য।

كما قال تعالى.

{ ذَلِكُمْ بِأَنَّكُمُ اتَّخَذْتُمْ آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا وَغَرَّتْكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فَالْيَوْمَ لَا يُخْرَجُونَ مِنْهَا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ (} [الجاثية: 35]

{وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ (6} [لقمان: 6]

وأخرج الإمام البخاري فى صحيحه (5/ 2220)

قال سمعت عبد الله قال : سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( إن أشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة المصورون )

وفى الفتاوى الهندية (2/ 270)

رجل يجلس على مكان مرتفع ويسألون منه مسائل بطريق الاستهزاء ثم يضربونه بالوسائد وهم يضحكون يكفرون جميعا وكذا لو لم يجلس على المكان المرتفع رجل رجع عن مجلس العلم فقال له رجل آخر ازكنشت آمدى يكفر وكذا لو قال مرابا مجلس علم جكار أو قال من يقدر على أداء ما يقولون يكفر

ويراجع أيضا: فتاوى محموديه:29/326، أشرف الفتاوى:3/476، جواهر الفقه.

সূত্র: জামিয়া রাহমানিয়া ফতোয়া থেকে সংগ্রহিত

আরো পড়ুন- কাকরাইল মারকাজ ছাড়তে হচ্ছে মাওলানা জুবায়ের ও ওয়াসিফকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ