শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

ইরান আর আরব কে বেশি শক্তিধর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম: আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও ইরান প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মধ্যপ্রাচ্যে একে-অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতে লিপ্ত। বৈশ্বিক তেল বাণিজ্যেও দুই দেশ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। বাণিজ্য ও সামরিক শক্তিমত্তার দিক থেকে এই দুই দেশের মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছে আল-জাজিরা।

অর্থনীতি
ইরান: ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইরানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪ শতাংশ। পূর্বের বছরের চেয়ে যা বেশি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রাক্কলন করেছে যে, প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো দেশটির তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া। তেহরানের আর্থিক খাতের বিশ্লেষক নাভিদ কোলহার এই প্রাক্কলনের সঙ্গে একমত। তিনি আরও যোগ করেন, হাইড্রোকার্বন বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়াই হলো অর্থনীতির তেজিভাবের রহস্য। তেলের বাইরে অন্যান্য খাত থেকে মোট প্রবৃদ্ধির ১ শতাংশও এসেছে কিনা সন্দেহ। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হলো ইরানের রপ্তানি, বিশেষ করে এশিয়ার বাজারে।

কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও অর্থনৈতিক জটিলতা ইরানে বিরাজ রয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামোয় দুর্বলতা এখনও আছে। ২০১৬ সালে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৯.৫ শতাংশে আনা হয়েছিল। তেল সম্পদ নির্ভর অর্থনীতিতে যেমনটা হয়ে থাকে, এই প্রবৃদ্ধি থেকে সাধারণ ইরানি নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা বলা যাবে না। টানা দুই বছর দেশটির বেকারত্বের হার ১১.৪ শতাংশের ঘরে উঠানামা করছে।

সৌদি আরব: ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, সৌদি আরবের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। দেশটির কর্তৃপক্ষ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনা ও তেল নির্ভরতা কাটিয়ে উঠার উদ্যোগ নিলেও তা এখনো ফল বয়ে আনেনি। বিশ্বের তেলের মজুতের ২২ শতাংশ রয়েছে সৌদি আরবে। দেশটি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে উৎপাদন কমিয়ে দাম বাড়াতে চাপ দিয়েছে। তবে সৌদি আরবের তেলের বাইরের খাতগুলো এখনও হিমশিম খাচ্ছে। ব্লুমবার্গের মতে, এই খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ০.৬ শতাংশ।

রাষ্ট্র পরিচালিত তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি আরামকোর ৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য এখনও চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটি। এ থেকে ১০০০০ কোটি ডলার নগদ অর্থ হাতে আসবে দেশটির। দেশের তেল নির্ভরতা কমাতে এক উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের অংশ এটি। এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে লোহিত সাগরের পাশে ৫০০০০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি শহর নির্মাণ। আশা করা হচ্ছে যে, এই বিক্রি থেকে দীর্ঘমেয়াদে সৌদি আরবের তেল নির্ভরতা কমে আসবে।

সামরিক ব্যয়
গত পাঁচ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়েছে। বিশ্বে মোট নথিবদ্ধ অস্ত্র আমদানির ৩২ শতাংশই হয় এই অঞ্চলে। সৌদি আরবের সামরিক ব্যয়ের বাজেট বেশ বড়।

ইরানের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ নিরূপণ করা কঠিন। তবে রেডিও ফারদার বলছে, দেশটির বার্ষিক সামরিক ব্যয় ৭০০ কোটি ডলার। বিপরীতে সৌদি আরবের প্রতি বছর সামরিক খাতে ৫৬০০ কোটি ডলার খরচ করে। এই ব্যয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সেপনের সঙ্গে করা সৌদির নতুন চুক্তি অন্তর্ভুক্ত নয়। ওই দুই চুক্তিতে সৌদি আরব ৩০০ কোটি ডলার খরচ করেছে।

এসআইপিআরআই’র ২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে চারটি প্রতিরক্ষা সিস্টেম আমদানি করেছে ইরান। এই আমদানি দেশটির ওপর আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন ছিল না।

উপসাগরীয় অঞ্চলে সমরাস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া যুক্তরাজ্যের মোট অস্ত্র রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশই যায় সৌদি আরবে। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধে ব্যবহার করছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের অস্ত্র আমদানির সিংহভাগই হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে।

তেল উৎপাদন
সৌদি আরব: ওপেকের উপাত্ত অনুযায়ী, তেল সমৃদ্ধ দেশটি বিশ্বের প্রধান খনিজ রপ্তানিকারক দেশ। তেল ও গ্যাস রপ্তানি থেকে দেশের জিডিপি’র প্রায় অর্ধেক পূরণ হয়। খনিজ ছাড়াও সৌদি আরব প্রাকৃতিক গ্যাস, স্বর্ণ ও কপার রপ্তানি করে থাকে।

প্রতিদিন দেশটি ১ কোটি ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। ঘরোয়াভাবে দেশটি খরচ করে ৩০ লাখ ব্যারেল। বাকি তেল রপ্তানি করা হয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল রপ্তানিকারক দেশ হওয়া সত্ত্বেও, তেলের দাম বাড়াতে সৌদি আরব ও অন্যান্য ওপেক-ভুক্ত দেশ তেলের উৎপাদন কমিয়েছে।

তেলের দাম কমার কারণ হলো মার্কিন তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া। দেশটি এখন চাহিদার চেয়েও বেশি তেল উত্তোলন করছে। প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্র ৯০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। এ কারণেই রিয়াদ অর্থনীতির পরিধি বিস্তৃত করা ও বৈচিত্র্যময় করার দিকে উঠেপড়ে লেগেছে।

ইরান: ইরানের তেল রপ্তানির ওপর কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে দেশটি নানামুখী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। এরপরও দেশের মোট রপ্তানির ৮০ ভাগই তেল শিল্পের অবদান। বর্তমানে ইরান প্রতিদিন ৪০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। এর মধ্যে ১৮ লাখ ঘরোয়া চাহিদা।

২০১৫ সালে দেশটির ওপর পারমাণবিক চুক্তির আওতায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ফের ইরানমুখী হয়েছেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি নাগাদ, ইরানের তেল রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ।

দেশটি প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে। এপ্রিল ছাড়া ২০১৭ সালের পুরোটা জুড়ে এই অবস্থা বিরাজ ছিল।

তেলের বাইরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের যৌথ মালিকানা রয়েছে ইরান ও কাতারের। এটি অবস্থিত দক্ষিণ পার্স ও নর্থ ডোমে। পারস্য উপসাগরের ৩৭০০ বর্গকিলোমিটার হলো ইরানের। ইরানের ন্যাশনাল ইরানিয়ান ওয়েল কোম্পানির মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস বাজারে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে ফ্রান্সের টোটাল।

প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ পার্স উন্নয়নে সহায়তা করছে। প্রতিদিন ইরান ৮৮ কোটি কিউবিক মিটার গ্যাস উত্তোলন করে। ২০২১ সাল নাগাদ দেশটির গ্যাস উৎপাদন দৈনিক ১২০ কোটি কিউবিক মিটারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন- সৌদি আরবে ১৩ তুর্কি নাগরিক গ্রেফতার


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ