শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান ঢাকাস্থ চাঁদপুর ফোরামের সেতুবন্ধন সভা অনুষ্ঠিত অর্থবহ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়: প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ বিস্ময়কর হাফেজ শিশুর সঙ্গে শায়খ আহমাদুল্লাহ মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর জানাযা ও দাফন সম্পন্ন ১৬ টি বছর জুলুম-ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিল মাদরাসার ছাত্ররা: ড. শামছুল আলম  ‘সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় সংস্কার কমিশন’ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসানের ইন্তেকালে খেলাফত মজলিসের শোকপ্রকাশ

কেমন ছিলেন মুফতি সাঈদ আহমাদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হামিম আরিফ: ফেনীর বিশিষ্ট আলেমে দীন মুফতি সাঈদ আহমদ আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা মুফতি ও স্কলার। যিনি মানুষকে শরিয়তের সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার পথহারা মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন।

মুফতি সাঈদ আহমদের জন্ম ১৯ চৈত্র, ১৩৫৪ বাংলা, শুক্রবার জুমার নামাজের আগে ছনুয়া গ্রামের। বাবার নাম হাজী এহসানুল্লাহ সওদাগর ও মায়ের নাম আসিয়া।

শিক্ষা জীবনের শুরুতে দু’বছর স্কুলে পড়ার পর তাকে রহিমপুর মাদরাসায় ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি জামাতে হাস্তুম পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

এরপর তাকে মিরশ্বরাই জামালপুর মাদরাসায় ভর্তি করান। সেখানে তিনি দুওম পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। তিনি জমাতে সিউমের (একাদশ শ্রেণি) বছর এত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া (বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড) এর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

তিনি বোর্ডে ১ম স্থান অধিকার করায় পটিয়া মাদরাসা ভর্তি হতে গেলে কর্তৃপক্ষ তার ভর্তি পরীক্ষা নেননি। পটিয়া মাদরাসায় তিনি দু’বছর অধ্যয়ন করেন। প্রথম বছর ফনুনাতে আলিয়া পড়েন। ফনুনাতের কিতাব ‘কাজী হামদাল্লাহ’ পড়েছেন খতীবে আযম আল্লামা সিদ্দীক আহমদ রহ. এর কাছে।

তিনি কয়েকদিন পড়ানোর পর মুফতি সাহেবের যোগ্যতা অনুমান করতে পেরে বললেন, আমাকে আর পড়াতে হবে না। আগামীকাল থেকে তুমি কিতাব দেখে এসে অর্থসহ বলবে আর আমরা শুনব। ফনুনাতের বছরও প্রত্যেক পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন।

এভাবেই মুফতি সাঈদ আহমাদ পড়াশোনা শেষ করে দীনের এক আলোকিত খাদেম বনে যান।

শিক্ষকতা

শিক্ষা জীবনের শুরুতেই তিনি নানুপুর মাদরাসায় খেমমতের সুযোগ পান। তিনি নিজে ইফতা না পড়লেও নানুপুর মাদরাসায় ইফতা বিভাগ খোলা হয় এবং তাকেই মুফতি পদে নিয়োগ দেয়া হয়।

তিনি এতে আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত তা টেকেনি। তাই আল্লাহও উপর ভরসা করে দায়িত্ব নেন এবং সফলভাবে পরিচালনা করতেও সক্ষম হন।

দায়িত্ব পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ধীরে ধীরে তার মাধ্যমে ফতওয়া বিভাগের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিজ্ঞ অভিজ্ঞ মুফতিয়াতে কেরাম মুফতি সাহেবের কাছে তাদের ফতওয়া সত্যায়নের জন্য প্রেরণ করা আরম্ভ করলেন।

তিনি পাকিস্তানে কখনও যাননি। তা সত্বেও পাকিস্তানের মুফতি বোর্ডে তাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। পাকিস্তানের জামিয়া বিন্নুরীর তৎকালীন প্রধান মুফতি কয়েকটি মাসআলা ও রেসালা সত্যায়নের জন্য এবং মন্তব্য লেখার জন্য মুফতি সাহেবের নিকট প্রেরণ করেছেন। তাঁর পক্ষ থেকে বিস্তারিত মন্তব্য লিখে পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার মুফতিয়ানে কেরাম তা পছন্দ করেছেন। এবং করাচীর জামিয়া বিন্নুরী থেকে প্রকাশিত ‘জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া’ নামক বিরাট ফতওয়া গ্রন্থে তাঁর কয়েকটি উত্তর স্থান পেয়েছে।

১৯৯১ ও ৯২ ইংরেজিতে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের ‘মাহমুদ’ হলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মুফতি সেমিনার কমিটির পক্ষ থেকে মুফতি সাহেবের নিকট বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল। তাঁর পক্ষ থেকে উত্তর দেয়ার পর তাঁরা খুশি হয়ে উক্ত সেমিনারে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।

মুফতি সাঈদ আহমাদকে ঢাকাস্থ বাংলাদেশ মুফতি বোর্ডের শুরু থেকেই সদস্য বানানো হয়েছে এবং ওই বোর্ডের দশ সদস্যবিশিষ্ট বিষেশ কমিটিরও সদস্য করা হয়েছে।

জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার পক্ষ থেকে ‘আল বহুসুল ইসলামী’ নামক দশ সদস্য বিশিষ্ট গঠিত ফতওয়া বোর্ডের জন্ম লগ্ন থেকেই তাকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।

ব্যক্তি জীবনে কেমন ছিলেন তিনি

মুফতি সাঈদ আহমাদ অনেকে গুণেই গুণান্বিত ছিলেন। এসবের মধ্যে একটি হল, সুন্নাতে রাসুল সা. এর অনুসরণ। তাঁর প্রতিটি কাজে রাসুল সা. এর সুন্নতের অনুসরণ পরিলক্ষিত হয়।

একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন, রাসুল সা. তাঁকে একটি জুব্বা পরিয়ে দিচ্ছেন। শায়খ সুলতান আহমদ নানুপুরী রহ. সে স্বপ্নের তাবির বা ব্যাখ্যা করলেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাকে রাসুল সা. এর সুন্নতের অনুকরণ করার তৌফিক দিবেন।

তাঁর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, সময়ানুবর্তীতা। তিনি কখনও কোনো কাজ করবেন এ ব্যাপারে পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা থাকে। পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী তিনি সব কাজ সময় মত সম্পাদন করে থাকেন।

তার আরেকটি বিশেষ গুণ হল, সুষ্ঠু এন্তেজাম। তার সুষ্ঠু এন্তেজামের ফলে নানুপুর মাদরাসাটি পুষ্পের ন্যায় ফুটে উঠেছিল। লালপোল মাদরাসায় কদম রাখলেও মাদরাসার সুষ্ঠু এন্তেজাম দেখে অন্তরে শীতলতা অনুভব হয়।

মুফতি সাঈদ আহমাদের একালাটি ছিল বিদআত কুসংস্কারে নিমজ্জিত। তাদের হেদায়াতের জন্য ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ফিকিরমন্দ।

তিনি ভেবেছিলেন, বিতর্কিত মাসআলাগুলো বুঝাতে চেষ্টা করলে তারা তা শুনবে না। এজন্য বিতর্কিত বিষয় আলোচনা না করে মানুষকে বুঝায়ে নামাযের দিকে ডাকতেন এবং বেশি বেশি রাসুল সা. এর সুন্নতের কথা আলোচনা করতেন।

ধীরে ধীরে তাদের ভুল ভাঙ্গল, তাদের ধ্যান ধারণা পাল্টে গেল। এখন তারা মুফতি রহ. কে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। এমন কি যারা তাকে কাফের বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি তারা আজ তার সাথে দেরীতে দেখা হলে অস্থির হয়ে পড়েন।

তথ্যসূত্র: মুফতি নাজমুল হাসসান এর ব্লগপোসট

ফেনীর বিশিষ্ট আলেম মুফতি সাঈদ আহমাদের ইন্তেকাল

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ