মুহাম্মাদুল্লাহ জামি
আওয়ার ইসলাম
কোটা সংস্কারের দাবিতে সপ্তাহ জুড়ে উত্তাল ছিল রাজধানীসহ পুরো দেশ। কোনো বাধার তোয়াক্কা না করে চলতে থাকে ছাত্রদের আন্দোলন ও অবরোধ। সবকিছু বিবেচনা করে ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।
তবে যেভাবে দাবি আদায়ে ছাত্ররা আন্দোলন করছিল সেদিকে নজর না দিয়ে একরকম অভিমান করেই প্রধানমন্ত্রী কোটা পদ্ধতিকে একেবারে বাতিলের ঘোষণা দেন। তার সঙ্গে বলেন প্রতিবন্ধী, উপজাতি ও মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য তিনি ভিন্ন ব্যবস্থা চাকরি দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর আন্দোলন স্থগিত করা হয় এবং আনন্দ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। তবে বিষয়টির ভালোমন্দ নিয়ে এখনো চলছে আলোচনা সমালোচনা।
প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত ও বর্তমান অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আওয়ার ইসলাম কথা বলেছেন ইসলামি ছাত্র সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে।
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফ আওয়ার ইসলামকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নির্দেশনাটা সুনির্দিষ্ট নয়। অনেকে একে রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মনে করছেন।
এর কারণ নতুন একটি আইন সংবিধানে যুক্ত করতে হলে বা পূর্বের কোনো আইন মুছতে হলে সংসদে আলোচনা করে বিল পাশ করতে হয়। আর তিনি এটা কখন করবেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছুই বলেননি। তাছাড়া আমরা ছাত্ররা কোটা সংস্কার চেয়েছি, বাতিল নয়। এর পরিমার্জন ও সংস্কারই হবে যথাপোযুক্ত সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের (একাংশ) সভাপতি রহমত আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি অস্পষ্ট। তাছাড়া আমরা মনে করি কোটা পদ্ধতি পুরোটা বাতিল করা ঠিক হবে না। আমরা সংস্কার চাই ।
পুরোপুরি বাতিল হোক এটা ছাত্রদের আন্দোলনের উদ্দেশ্যও ছিল না। সুতরাং আমরা কোটা বাতিল নয় বরং কোটা সংস্কারের যথাযথ দাবি করছি।
আশা করি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি পুনরায় ভাববেন এবং সেভাবে পদক্ষেপ নিবেন।
ছাত্র জমিয়তের (একাংশ) সভাপতি তোফায়েল গাজালী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণা আন্দোলন দমানোর কৌশল মাত্র। আর হঠাৎ করে পুরো কোটা বাতিল করে দেওয়ার মাঝে আমরা নতুনভাবে সন্দিহান হয়ে পড়ছি, আসলে সরকার এর মাধ্যমে কী চায়?
তবে সরকারের যদি সদিচ্ছা হয় তাহলে তিনি গেজেট পাশ করে নতুনভাবে আইন তৈরিতে মনোযোগ দেবেন বলে আশা করছি।
ইসলামী ছাত্র খেলাফতের সেক্রেটারী মুহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, আমরা সংস্কার চাই ।কোটা পদ্ধতি বাতিল চাই না। কিছু কোটা রাখা উচিত।
কোটা সংস্কারের আন্দোলন ও আলোচনা আপাতত স্থগিত হলেও পুনরায় উঠতে পারে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সন্তানদের জন্য কোটার দাবি করতে পারেন। তাই বিষয়টি আরও বিবেচনা করা দরকার বলে মনে করি।
খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারী মুহাম্মদ ইসহাক মাহমুদ বলেন, যাদের যে পরিমাণ কোটা দেওয়া প্রয়োজন আমরা সে পরিমাণ কোটা দেওয়ার পক্ষে। আমরা কোটা বাতিলের পক্ষে নই ।
যদি পুরো কোটা বাতিল করে দেওয়া হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং আমরা কোটা সংস্কার চাই।
জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া এর সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, আমরা পুরো কোটা পদ্ধতি বাতিল চাই না। মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটা না রাখলে তাদের সঙ্গে গাদ্দারি করা হবে।
সুতরাং তাদের তাদের জন্য ১০% কোটা রাখা দরকার। উপজাতি এবং নারীদের জন্যও কোটা রাখা প্রয়োজন আছে।
পাশাপাশি যারা কোটা বাতিলের আন্দোলন করেছে তাদের নিরাপত্তার দাবি করছি। কারণ বিভিন্ন হল থেকে ইতোমধ্যেই তাদের বের করে দেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তাছাড়া, আন্দোলনে যারা অসুস্থ হয়েছে তাদের পরিপূর্ণ খরচ রাষ্ট্র বহন করুক এবং যাদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে, তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হোক।
পবিত্র শবে মেরাজ: ঘটনা, বিশ্লেষণ ও করণীয়