তারেকুল ইসলাম
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে একদম আনাড়ির মতো বক্তব্য দিয়েছেন মোশাররফ করিম। তার মতো একজন সেলিব্রেটিকে অবশ্যই তার জনসমাজের ধর্মাচার, জীবনাচার ও কালচারকে বিবেচনায় রেখে কথা বলা উচিত ছিল।
তবে তার মূল উদ্দেশ্য যতটা না ধর্ষণের কারণ চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধ করার ব্যাপারে, তার চেয়ে বেশি ছিল নারীর পোশাকের স্বাধীনতা ও নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়টিকে ফোকাস করা। অথচ পুরো অনুষ্ঠানে পোশাকের শালীনতার বিষয়ে তিনি একটি শব্দও ব্যয় করেন নাই!
মোশাররফ করিমের এই কথাটা ঠিক যে, ধর্ষণের সাথে নারীর পোশাকের তেমন উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক নেই- যেহেতু হিজাব বা বোরকা পরা মেয়ে কিংবা ৭ বছরের কন্যাশিশুও যখন ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকে। অথচ ধর্ষণের জন্য দেশে সুশাসনের অভাব, ন্যায়বিচারের অভাব কিংবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতিকে দায়ী করা তার অবশ্যই উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি।
এখন পর্যন্ত আমরা কয়জন ধর্ষকের বিচার হতে দেখেছি? কয়জন ধর্ষিতা নারী ন্যায়বিচার পেয়েছেন? এসব বিষয় মোশাররফ করিম তার বক্তব্যে আনেননি। কারণ তার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।
অনুষ্ঠানে তিনি মূলত ধর্ষণ প্রসঙ্গ এনেছেন মুলা ঝুলানো বা অজুহাত হিসেবে। নারীর পোশাকের স্বাধীনতা ও নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতাকে জায়েজ করার জন্য। পাশ্চাত্যের উগ্র নারীবাদী ভাবনাকে এদেশে প্রচার করার জন্যই তিনি ধর্ষণসম্পর্কিত ঐ যুক্তিটিকে ইউজ করেছেন মাত্র।
ধর্ষণ কেন হয় এবং এর প্রতিরোধের বিষয়টিকে আমি আরো প্র্যাকটিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাবতে চাই। কারণ ধর্ষণের জন্য নারীর খোলামেলা পোশাকই একমাত্র দায়ী- এমন একতরফা বক্তব্য মূল ফোকাস থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রাখবে। হতে পারে এটা অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা। তবে একমাত্র কারণ নয়। আমার মতে, প্রধান কারণ হলো- যথাসময়ে বা উপযুক্ত বয়সে যুবকদের বিয়ে না হওয়া।
সাধারণত এখন পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই অবিবাহিত যুবক। বেকারত্ব ও আর্থিক দুর্বলতার কারণে এদেশে যথাসময়ে যুবকদের বিয়ে করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
সেজন্য রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বিয়েব্যবস্থাকে সহজ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় খরচে কিংবা সামাজিক উদ্যোগে গণবিয়ের আয়োজন করা যেতে পারে। এতে করে বিয়ের খরচও কম হবে। পিকনিক ও ভ্রমণে যেভাবে জনপ্রতি কম খরচে একসাথে সবাই মিলে যেতে পারে, গণবিয়ের বিষয়টিও ঠিক সেরকম।
বিভিন্ন দেশে গণবিয়ের আয়োজনের অসংখ্য নজির রয়েছে। তাই গণবিয়ের আয়োজন করে যুবকদের যথাসময়ে ও উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাথমিকভাবে সামাজিকভাবেই গণবিয়ের আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সমাজে বিয়ে যত বেশি হবে, ততবেশি যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের প্রকোপও কমে আসবে। আর মিডিয়া, চলচ্চিত্র ও নাটকে যেভাবে এখন অভিনেত্রীরা উত্তেজক পোশাকে খোলামেলা অভিনয় করছেন, এর একটা নেতিবাচক প্রভাব কিশোর ও যুবকশ্রেণীর মন-মানসিকতায় পড়ে।
তাদেরকে যৌনউন্মাদে পরিণত করতে মোশাররফ করিমদের সহকর্মী নারী অভিনেত্রীদের দায়ও তাই কম নয়। এই যৌনউন্মাদনার যুগে যুবক-যুবতীদের বিয়ে আরো তাড়াতাড়ি হওয়া উচিত। তবেই ধর্ষণের প্রকোপ কমে আসবে।
নারীবাদীরা এবং মোশাররফ করিমরা নারীর পোশাকের স্বাধীনতা চান। ব্যক্তিস্বাধীনতাও চান। তো কীরকম সেই স্বাধীনতা? সেটা হলো, নারী তার ইচ্ছামতো পোশাক পরবে। খোলামেলা ও উত্তেজক পোশাক পরে তারা রাস্তায় বেরোবে।
এরপর টিএসসিতে কিংবা পহেলা বৈশাখের উৎসবে ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির শিকার হলে বলবে, পুরুষের মন-মানসিকতা খারাপ। নজর খারাপ। তখন সব দোষ পুরুষের ঘাড়ে দিবে তথাকথিত নারীবাদীরা।
সমাজে বিয়ে যত বেশি হবে, ততবেশি যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের প্রকোপও কমে আসবে। আর মিডিয়া, চলচ্চিত্র ও নাটকে যেভাবে এখন অভিনেত্রীরা উত্তেজক পোশাকে খোলামেলা অভিনয় করছেন, এর একটা নেতিবাচক প্রভাব কিশোর ও যুবকশ্রেণীর মন-মানসিকতায় পড়ে
দোষ উভয়েরই বলবো। যে অন্যায় করবে, সেও যেমন দোষী। আবার অন্যায়ের পথ সুগম করে দিয়ে যে নিজেই আক্রান্ত হলো, দোষ কিন্তু তারও। কুরআনে আল্লাহ পুরুষকেও সাবধান করেছেন এবং নারীদেরও। পুরুষকে তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে এবং চোখের পর্দা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী শালীন পোশাকনীতি ও পর্দার বিধান মানলে নারীরা অবশ্যই আরো নিরাপদ হবেন। আর যে-দেশে নাগরিকদের নিরাপত্তা নেই। সুবিচার বা ন্যায়বিচার নেই।
আইনের শাসন নেই। সেদেশে নারীদের খোলামেলা ও একাকী চলাফেরা করা ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই। অথচ এসব বিষয় মোশাররফ করিম আনতে পারতেন, কিন্তু তা করেননি। ‘কারণ তার উদ্দেশ্য ছিল- পাশ্চাত্যের নারীবাদী ভাবনা দর্শকদের খাওয়ানো।’
মোশাররফ করিম ও তার পেছনের মানুষদের কাছে ৪ টি প্রশ্ন