৬৮হাজার গ্রামে ৬৮ হাজার মক্তব প্রতিষ্ঠার লক্ষে প্রায় তিন যুগ পূর্বে মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাং
লাদেশ কোরআন শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডটির অধীনে এ পর্যন্ত প্রায় দশহাজার মাদরাসা পরিচালিত করছে। শিশুশিক্ষায় যোগ করেছে ভিন্ন এক মাত্রা।
এ বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী মাদরাসা শিক্ষায় শিশুশিক্ষার মান উন্নয়ন, সিলেবাস সমৃদ্ধ করণ, বর্তমান শিশুশিক্ষার অবস্থা, শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষাবোর্ডের অবদান ইত্যাদি বিষয়ে আওয়ার ইসলামকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ।
সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব। তার সঙ্গে ছিলেন কবি, সাংবাদিক ও নজরুল গবেষক মহিউদ্দিন আকবর এবং বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কবি মুনীরুল ইসলাম। ক্যামেরায় ছিলেন তামিম আহমদ।
বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষাবোর্ডের যাত্রা কেন, কখন, কীভাবে শুরু হয়?
এ বোর্ডের জন্মলগ্নের কথা বলতে গেলে মনে পড়ে মরহুম পীর সাহেব হুজুরের কথা। ১৯৮৯ সালের আমিরুল মুজাহিদীন মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই সুদূর প্রসারী স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষাবোর্ড গঠন করেন।
বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্য ছিল মাওলা পাকের সন্তুষ্টি অর্জন। লক্ষ ছিল, মুসলমানদের সন্তানদের মেকদারে ফরজ বিধানাবলি শিক্ষা দেওয়া। সঙ্গে বিভিন্ন এনজিও এবং কথিত সেবা সংস্থার কালোধাবায় মুসলমানদের সন্তানদের বিপদগামী করার চেষ্টাকে নস্যাৎ করার পরিকল্পনাও ছিল নিহিত।
এ বোর্ড গঠন করার আগে মরহুম শায়েখে চরমোনাই ১৯৮৩ সালে এই কীর্তনখোলার তীরে চরমোনাই কওমি মাদরাসা জামিয়া রশিদিয়া আহছানাবাদ প্রতিষ্ঠা করেন।
তারপর তিনি অনুভব করেন যদি কওমি শিক্ষাধারাকে কাঙ্ক্ষিত মানে উঠাতে হয় তাহলে শিশুশিক্ষাকে আগে মানসম্পন্ন করতে হবে। না হয় এ ধারায় কাঙ্ক্ষিত ছাত্র ও শিক্ষা পাওয়া কঠিন।
তাই তিনি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামে একটি করে মক্তব প্রতিষ্ঠার লক্ষে এ বোর্ড গঠন করেন।
দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে আপনাদের বোর্ড কুরআনের খেদমত করে আসছে। সাধারণ মানুষ, আলেম ওলামায়ে কেরাম ও অন্যান্য মহল থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? কতটি মাদরাসা আপনাদের বোর্ডের অধীনে রয়েছে?
আমরা হাফেজ, কারি, মাওলানা ও জেনারেল শিক্ষিতদের নিজস্ব আয়োজনে মোয়াল্লিম ট্রেনিং দেওয়ার পর তাদের মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। বাংলাদেশে আমাদের বোর্ডের অধীনে প্রায় ১০ হাজার মাদরাসা রয়েছে।
তবে বিভিন্ন জটিলতার কারণে সবগুলো মাদরাসাকে আমরা রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে পারিনি। সারাদেশে আমাদের বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনকৃত মাদরাসা রয়েছে ১৫শ এর অধিক।
আপনাদের অধীনে প্রায় ১০ হাজার মাদরাসা রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১৫শ এর অধিক মাদরাসা রেজিস্ট্রেশনকৃত। এই মাদরাসাগুলো কি আপনাদের নিজস্ব সিলেবাসে পরিচালিত?
হ্যাঁ, আমাদের নিজস্ব সিলেবাস রয়েছে। তবে তা বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত।কেননা আমাদের বোর্ড প্রাথমিকভাবে যখন গঠন করা হয়েছে তখন টার্গেট ছিল দেশের মক্তবগুলোকে মানসম্পন্ন করা।
তাই প্রাথমিকভাবে আমাদের মক্তবের সিলেবাসকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকর করা হয়েছে। যেমন স্কুল থেকে পঞ্চমশ্রেণি পাস করে আসা ছাত্রদের জন্য আমরা ‘খাস বিভাগ’ নামে একটি ক্লাস রেখেছি।
যে ক্লাসের সিলেবাসকে আমরা এমনভাবে সাজিয়েছি যেন একটি ছাত্র এক বছরে পুরো কুরআনুল কারিম সহিহ শুদ্ধভাবে পড়তে পারার পাশাপাশি পঞ্চাশটি দোয়া, চল্লিশটি হাদিসসহ ইসলামের প্রাথমিক প্রায় নিয়মকানুন শিখতে পারে।
তবে পর্যায়ক্রমে আমরা আমাদের সিলেবাসকে ওপরের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। মক্তব থেকে এখন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের রয়েছে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস। শিগগির আমরা পুরুষ মাদরাসায় কাফিয়া ও মহিলা মাদরাসায় কুদুরি জামাতের পরীক্ষা চালু করবো।
পর্যায়ক্রমে মেশকাত পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। আমরা আমাদের বোর্ডকে একটি জাতীয় বোর্ডের রূপ দিতে চাই।
আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, মক্তব থেকে শুরু হওয়া আমাদের মাদরাসাগুলোর এখন প্রায় ২৮টি মাদরাসা দাওরা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
মক্তব শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য কারি বেলায়েত রহ., মাওলানা রহমাতুল্লাহ প্রমুখগণ যে সিলেবাস প্রণয়ন করেছেন, আপনাদের সিলেবাসের সঙ্গে তার কোনো মৌলিক পার্থক্য বা আপনাদের সিলেবাসের আলাদা কোনো বিশেষত্ব আছে কি?
তাদের সিলেবাসের সঙ্গে আমাদের কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। তবে বিশেষত্ব রয়েছে অবশ্যই। আমাদের বিশেষত্ব হলো, এ সিলেবাসে কোনো ছাত্র মক্তবে পড়লে তাকে যথেষ্ট পর্যায়ে গাইড করা হয় পরবর্তী শিক্ষাজীবন যেন সে কওমি মাদরাসার প্রাঙ্গনেই কাটিয়ে দেয়।
এক্ষেত্রে অনেক সিলেবাসের ছাত্রদের আমরা দেখেছি, মক্তবে পড়ার পর স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়।এটি আমাদের ছাত্রদের হয় না বললেই চলে। এছাড়া হাতের লেখা ঝকঝকেসহ অনেক বিশেষত্ব রয়েছে আমাদের।
আপনারা কি আপনাদের বোর্ডকে জাতীয় বোর্ড হিসেবে দাঁড় করাতে চান?
হ্যাঁ, তাতো অবশ্যই। বোর্ডের কারিকুলাম ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমরা যেকোনো বোর্ড এগিয়ে।আমাদের বোর্ড অত্যন্ত শক্তিশালী।
এর বড় কারণ হলো, আমাদের প্রত্যেকটা মাদরাসা আমাদের হাতেগড়া। মাদরাসার পরিচালনা কমিটি শতভাগ আমাদের অনুগত। সবগুলো মাদরাসার জায়গা বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষাবোর্ডের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। অর্থাৎ মাদরাসাগুলো আমাদের নিজস্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।
আমাদের জানামতে আপনারা বেফাকের সঙ্গে আছেন। বেফাকের সঙ্গে আপনারা বোর্ড ভিত্তিক পরিচালিত হচ্ছেন নাকি মাদরাসা ভিত্তিক?
আমরা বেফাকের সঙ্গে এতোদিন মাদরাসা ভিত্তিকই পরিচালিত হয়ে আসছি। আমাদের মাদরাসাগুলো যখন পঞ্চমশ্রেণি পেড়িয়ে কিতাব বিভাগে পদার্পণ করে, তখন আমরা তাদের বলি তাদের এলাকা থেকে বেফাকভুক্ত হয়ে যেতে।
এমনকি হাইয়াতুল উলিয়া গঠনের সময়ও আমরা বেফাকের সঙ্গে ছিলাম। অথচ অনেক আঞ্চলিক বোর্ডও হাইয়াতুল উলিয়ায় আলাদাভাবে যুক্ত হয়েছে। আমাদেরটা কিন্তু আঞ্চলিক বোর্ড নয়। আমাদের মাদরাসা প্রায় সারা দেশে রয়েছে।
আমরা কি বেফাকের সঙ্গে মাদরাসা ভিত্তিকই পরিচালিত হতে চান নাকি বোর্ড ভিত্তিক পরিচালিত হওয়ার পরিকল্পনা আছে?
আমরা আমাদের বোর্ডকে একটি আদর্শ বোর্ড হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। পাশাপাশি বেফাকের সঙ্গে আমরা বোর্ড ভিত্তিকই পরিচালিত হতে চাই। তবে বিভিন্ন কারণে বোর্ড হিসেবে বেফাকে আমাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা বিলম্ব হচ্ছে।
তার মানে এখন আপনারা চাচ্ছেন বেফাক আপনাদের অন্যান্য বোর্ডের মতো আলাদা একটি বোর্ড হিসেবে গ্রহণ করুক?
হ্যাঁ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া বেফাকের কাউন্সিলের আগে তখনকার বেফাকের সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী ও মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল।
তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষাবোর্ডকে আলাদা একটি বোর্ড হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং তাদের সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী আমাদের পদ দেওয়া হবে। কিন্তু কাউন্সিলের সময় আমরা দেখেছি এর ব্যতিক্রম।
তবে এক্ষেত্রে আমাদেরও একটি দূর্বলতা রয়েছে। আমরা তাদের এ আশ্বাসের লিখিত কোনো কাগজ তৈরি করিনি এবং আমাদের পক্ষ থেকেও লিখিত কোনো প্রস্তাব দিইনি। কিন্তু আমরা এ কাউন্সিলের পরপরই বেফাকের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দিই।
আমরা সবসময় বেফাকের সঙ্গে থাকতে চাই। আলেমদের সঙ্গে থাকতে চাই। আর আমাদের মরহুম পীর সাহেব হুজুরও এটিই চাইতেন।
বেফাকের সংবিধান অনুযায়ী নিয়ম হলো, ‘তাদের সঙ্গে কোনো বোর্ড যদি যুক্ত হয়, তাহলে উক্ত বোর্ডের চেয়ারম্যান হবে বেফাকের ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হবেন যুগ্ম-মহাসচিব।
আপনারা কি আশা করেন, বেফাক আপনাদের বোর্ড হিসেবে গ্রহণ করে তাদের আইন অনুযায়ী পদগুলো আপনাদের দিবেন?
আমরা আশা করি, বেফাক অবশ্যই আমাদের বোর্ড হিসেবে গ্রহণ করে তাদের আইন অনুযায়ী আমাদের সঙ্গে মুয়ামালা করবেন। কেননা আমাদের তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বেফাক আমাদের বোর্ড হিসেবে মূল্যায়ন করে তাদের বিচক্ষণতার পরিচয় দিবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
আপনাদের সিলেবাসে নারী শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে কেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
আমাদের বোর্ড নারীদের জন্য আলাদা, বয়স্কদের জন্য আলাদা ও বাচ্চাদের জন্য আলাদা সিলেবাস ও সিস্টেম প্রণয়ন করেছে। প্রত্যেকটি সিলেবাস ও সিস্টেম অত্যন্ত মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী।
আপনাদের কি শিক্ষক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষিকা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে?
হ্যাঁ। আমাদের সম্পূর্ণ আলাদাভাবে আমাদের শিক্ষিকা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা এবিষয়টিতে বেশ গুরুত্বও দিয়ে থাকি।
আমরা দেখি মা বাবা ছেলেমেয়ে গর্ভে থাকা অবস্থাই নিয়ত করে থাকে কলিজার টুকরা সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করাবেন, আলেম বানাবেন। সে প্রত্যয় থেকে তারা তাদের সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করান।
কিন্তু এ ছাত্রগুলো শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাতে পারে না। ঝরে যায় আলেম হওয়ার আগেই। মক্তবে যদি একশ ছাত্র ভর্তি হয়, এর থেকে মাত্র দশজন বা পাঁচজন আলেম হতে পারেন।
আমাদের মাদরাসাগুলো থেকে ঝরে পড়ার এ প্রবণতা বন্ধ করা যায় কীভাবে?
আমি মনেকরি, যদি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ আরো উন্নত করা যায়। ছাত্রদের বিনোদনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ব্যবস্থা করা যায়। তাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য সুন্দর প্লাটফর্ম তৈরি করা যায়। তাহলে ঝরে পড়ার এ প্রবণতা ধীরে ধীরে শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।
মক্তব ও নুরানি মাদরাসাগুলোর পরিবেশ কেমন হওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন?
জেলা, উপজেলা ও শহরে যে মাদরাসাগুলো রয়েছে আস্তে আস্তে সেগুলোর পরিবেশ সুন্দর ও উপযোগী হয়ে উঠছে। তবে গ্রামবাংলায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ চাইলেও মানসম্পন্ন করা যাচ্ছে না।
এর জন্য সেসব এলাকার পরিবেশ ও কালচার অনেকটা দায়ী। তবে তারপরও শহরের মাদরাসাগুলোর পাশাপাশি গ্রামের মাদরাসাগুলোরও পরিবেশ সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া দরকার।
যেমন আমরা এখন যে মাদরাসাগুলোই প্রতিষ্ঠা করছি, পরিবেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকি।
মাদরাসাগুলোতে ব্যায়াম বা শরীর চর্চার ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আমরা আমাদের মাদরাসাগুলোতে আলাদাভাবে ব্যায়ামের ব্যবস্থা না রাখলেও, খেলাধুলা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এগুলোর মাধ্যমে ব্যায়ামের প্রয়োজন অনেকটাই মিটে যায়।
আলাদা ব্যায়ামের শিক্ষক রেখে মাদরাসাগুলোতে কেন ব্যায়ামের ব্যবস্থা করছেন না?
ব্যায়ামের শিক্ষক রেখে ব্যায়ামের ব্যবস্থা করলে সেটাকে বিভিন্ন এনজিও এবং কিছু মিডিয়া ভিন্নভাবে তা ফলাও করে থাকে। যা পরবর্তীতে উক্ত মাদরাসার জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে আস্তে আস্তে আমরা চেষ্টা করছি অন্যান্য শিক্ষাঙ্গনের মতো আনুষ্ঠানিকভাবেই ব্যায়ামের ব্যবস্থা করার। আশা করি আমাদের সরকার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখবেন ও আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন।
কুরআনের শিক্ষা সবচেয়ে দামি শিক্ষা। এ শিক্ষা প্রদানের জন্য দরকার আদর্শ শিক্ষক।একজন শিক্ষককে আদর্শ শিক্ষক হতে হলে তার মধ্যে কী কী গুণ থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন?
একজন সন্তানকে মানুষ করতে যেমন মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও বাবার অনুশাসন মিশ্রিত আদর দরকার। তেমন একজন শিক্ষক নিজেকে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে গঠন করতে হলে তার মাঝে বাবা ও মায়ের গুণ থাকতে হবে।
তবে আমাদের শিক্ষকদের মাঝে এসবের খুবই অভাবে। এর কারণ হলো ছাত্রদের শিক্ষকরা কাউন্সিলিং করে ঠিকই। কিন্তু শিক্ষকদের কাউন্সিলিং করার বিষয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান ও বোর্ডগুলো তেমন যত্নশীল না। তাই শিক্ষকদের এ বিষয়ে কাউন্সিলিং করতে হবে।
এছাড়া একজন শিক্ষক যদি আদর্শ হতে চান। তাহলে তাকে ইসলামের মহান আদর্শ মেনে শিক্ষকজীবন পরিচালনা করতে হবে।
ছাত্রদের বেত্রাঘাত করার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
একজন শিক্ষকের সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ হলো ছাত্রদের বেত্রাঘাত করা। এটি অত্যন্ত জঘন্য একটি কাজ। ছাত্রদের না পিটিয়ে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে পড়া আদায় করে নেওয়া যোগ্য শিক্ষকের পরিচয়।
আমি শুধু বেত্রাঘাতের কথা বলবো না। মাসুম বে-গোনাহ একটি শিশুকে বেত্রাঘাত ছাড়াও যদি চড়-থাপ্পড় বা অন্য কোনোভাবে নির্যাতন করা হয় তাও বড় অন্যায়।
আমি তো মনে করি, ছাত্রদের কাছে তার বোর্ডিং বা বেতনের টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি বা নানান কথা বলে আতঙ্কিত করাটাও ঠিক না। কেননা এর ফলে তার লেখাপড়ার মাঝে বিঘ্নিতা ঘটে।টাকা-পয়সার বিষয়ে সবসময় অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলাই শ্রেয়।
আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন ছাত্র দীর্ঘসময় পড়ালেখা করার পরও দেখা যায় তার অভিভাবকের সঙ্গে আমাদের তেমন কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠে না।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকের মাঝে সম্পর্ক গড়ে তুলতে কী পরামর্শ থাকবে আপনার?
আমরা আমাদের মাদরাসাগুলোর ক্ষেত্রে বছরেরর শুরু ও শেষে দুইটি অভিভাবক সম্মেলন করে থাকি। এছাড়া প্রত্যেক বন্ধের সময় ছাত্রদের উপস্থিতি, পরীক্ষার রেজাল্ট ও সার্বিক আচরণের ওপর একটি রিপোর্ট তৈরি করে তা অভিভাবকদের প্রদান করে থাকি এবং বলি ছুটি শেষে ছাত্রকে মাদরাসায় দিয়ে যাওয়ার দিন রিপোর্টের ওপর তাদের প্রদত্ত মতামত জানাতে।
এছাড়া বছরের মাঝেও বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের মাদরাসায় আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকি। তাদের আপ্যায়নও করে থাকি। তাই আমদের পরিচালিত মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
আশা করি অন্য মাদরাসাগুলো যদি আমাদের মতো অভিভাবক সম্মেলন করে। মাদরাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সু-পরামর্শকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে। তাহলে এ দূরত্ব বেশিদিন থাকবে না।
আরও পড়ুন: ‘ধুলামুক্ত ঢাকা চাই’ ক্যাম্পিং শুরু করছে আওয়ার ইসলাম