হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: সম্প্রতি ইউরোপ সফরকালে দারুল উলুম দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা সাইয়িদ আরশাদ মাদানি লন্ডন তাবলিগি মারকাজের মজমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভি, দেওবন্দের ফতোয়া ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি বক্তব্য প্রদান করেছেন।
বক্তব্যটি তাবলিগের চলমান সঙ্কট নিরসনে দারুন প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন আলেম ওলামা ও তাবলিগের সাথীগণ।
বিশেষ ওই মজমায় দেয়া ভাষণের অডিও ইতোমধ্যেই ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই শেয়ার করছেন যাতে কর্তাব্যক্তিদের নজরে আসে।
মজমার বক্তব্যে মাওলানা সাইয়িদ আরশাদ মাদানি বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে অনেক আলেম ও তাবলিগি ভাই মাওলানা সাদের বিতর্কিত বক্তব্যের ব্যাপারে ফতোয়া চাচ্ছিলেন এবং তার বয়ানগুলো দেওবন্দকে শুনিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ বিবেচনায় দেওবন্দ ফতোয়া দেয়নি।
এক পর্যায়ে যখন মাওনা সাদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এখতেলাফ বা মতানৈক্য ছড়িয়ে পড়লো এবং এর কারণে মাদরাসাগুলোর মাঝে এখতেলাফ দেখা দিলো তখন অপারগ হয়ে দেওবন্দ মাওলানা সাদের ব্যাপারে ফতোয়া প্র্রদান করে।
দেওবন্দের ফতোয়ার পর তার একটি রুজুনামা দেওবেন্দে আসে। রুজুনামার ওপর দেওবন্দ একথা লিখে দেয় যে আগামীতে আপনি এধরনের বয়ান বক্তব্য থেকে বিরত থাকবেন এবং এ ধরনের বক্তব্য দ্বিতীয়বার আর পেশ করবেন না- এ শর্তে দেওবন্দ আপনার রুজুনামা গ্রহণ করছে।
একজন বাহককে এই উত্তরনামা দিয়ে নয়া দিল্লির নিজামুদ্দীনে পাঠানো হয়।
ঠিক ওই দিনই দেওবন্দে সংবাদ আসে, মাওলানা সাদ বাদ ফজরের বয়ানে তার পূর্বের বক্তব্য সমর্থন করে আবারো সেই বিতর্কিত বয়ান পেশ করেছেন। মুহতামিম সাহেব তৎক্ষণাত সেই বাহককে ফোন করে জানতে পারলেন তিনি এখনো নিজামুদ্দীন পৌঁছান নি। তখন তাকে দেওবন্দে ফিরে আসতে বললেন।
আরও পড়ুন: হকিংয়ের মৃত্যু নিয়ে যা বললেন মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী
এর অনেক পর তার অনুসারী বাংলাদেশের ওয়াসিফুল ইলামসহ কয়েকজন দেওবন্দ আসেন। তখন মুহতামিম সাহেব বললেন, মাত্র কয়েক দিন পূর্বে মাওলানা সাদের শ্বশুর তার বয়ানের পক্ষে দলিল পেশ করে এবং তাকে শক্তিশালী করে একটি পুস্তিকা রচনা করেছেন।
তাহলে এখন আমরা জেনে বুঝে কী করে আমাদের আগের সম্মিলিত আবস্থান ও তার ব্যাপারে প্রদত্ত ফতোয়া থেকে ফিরে আসতে পারি? আমাদের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়।
আমি বলেছিলাম, আপনারা মানে ওয়াসিফুল ইসলামের প্রতিনিধি দল মাওলানা সাদকে ডেকে পাঠান। তিনি এসে বলুন যে, হজরত আমার ব্যাপারে আপানাদের কী কী অভিযোগ আছে? আমাকে সরাসরি ধরিয়ে দিন আমি সংশোধন হয়ে যাবো। তাহলেই সমস্ত ঝামেলা শেষ। কিন্তু তিনি আসেন নি।
একটি অনন্য অ্যাপ, ইনস্টল করতে এখানে ক্লিক করুন
আমি প্রতিনিধি দলকে বলেছি, অনেক আগেই স্বয়ং আমি মাওলানা সাদের কাছে গিয়ে বলেছিলাম, যে বাবা আপনার পরদাদা প্রতিষ্ঠিত এই তাবলিগ জামাত। আপনার দাদা তার পুরো জীবন এ কাজেই ব্যয় করে দিয়েছেন।
এরপর বর্তমানে আপনি এ কাজের যিম্মাদারি পালন করছেন। আপনাকে আমিরের মসনদ থেকে কে নামাতে পারে, কে আপানাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে? এমারত তো আপানরই। আপনি যেখানে আছেন তার থেকে নিচে নামবেন না।
তবে কথা হলো যেসব মুরুব্বী মারকাজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন তারা আপানার দাদার সময় থেকে মারকাযে দীনের কাজ করছেন। আপনি নিজেও বলেন যে, তারা আমার উস্তাদ এবং আমার বাবারও উস্তাদ।
তারা অনেক পুরাতন যিম্মাদার। তারাই মারকাজের জামাত ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আপনি তাদের বুকে টেনে নিন। তারা মুরুব্বী হিসেবে যা বলেন তা মেনে নিন।
মাওলানা সাদ একবার হজরত ইবরাহিম দেওলার কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য। তখন মুরুব্বীদের মারকাজে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো আলোচানাই হয় নি। স্বয়ং ইবরাহিম দেওলার কাছেই জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে পারেন আপানারা।
দেখুন আমি এখনো মনে করি, যদি মাওলানা সাদ সাহেব এই আগুন নেভাতে চান তাহলে তিনি এক মিনিটেই নেভাতে পারেন। তার জন্য এতে দুই মিনিটও লাগবে না। অথচ তিনি এ কথা বলেন, যদি আমাকে আমির না মানো তাহলে জাহান্নামে যাবে।
আর অন্য মুরুব্বীগণ বলে আসছেন, তাবলিগ জামাতকে এমারত নয় বরং শুরা ভিত্তিক পরিচালান করুন। তো তিনি যেহেতু নিজেও শুরা কমিটির একজন তাই তিনি যদি বলেন, আসুন শুরা ভিত্তিক কাজ করি তাহলেই মাসলা খতম হয়ে যায়।
৩০০ পৃষ্ঠার বৃহৎ কলেবরে ourislam বিশেষ রমজানুল মোবারক সংখ্যার অগ্রিম অর্ডার নেয়া হচ্ছে। সংখ্যাটির বিক্রয়মূল্য হবে ২৫০ টাকা। অগ্রিম অর্ডারকারীরা ১০% কমে ২২৫ টাকায় সংগ্রহ করতে পারবেন। অর্ডার করতে ফোন করুন। ০ ১৭১৯-০২৬৯৮০, ০১৭১৭-৮৩১৯৩৭ [বিকাশ]
পরিশেষে আমি আবারও বলছি, কেউ মাওলানা সাদকে তাবলিগি জামাত থেকে বের করে দেবে অথবা তিনি যে বড় যিম্মাদার তাকে কেউ অপমান করবে এটা তো হতেই পারে না। এটা তো তারই ঘরের তৈরি জামাত।
এছাড়া যারা বেরিয়ে গেছেন তারা তো সবাই বৃদ্ধ। তারা হয়তো সবাই ৫/বছরের মাঝে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে আল্লাহর কাছে চলে যাবেন। তখন তো আপনিই থাকবেন। আপনার পরে আপানর সন্তান থাকবে।
আমার তো কোনো পক্ষের সাথেই আলাদা সখ্যতা বা শত্রুতা নেই। আমি বছরে দু একবার নিজামুদ্দীন গেলে মাওলানা যুহাইরুল ইসলামের সাথে যেমন সাক্ষাত করি তেমনি মাওলানা সাদের সাথেও সাক্ষাত করি ।
তার ওখানে আমি চা পান করি। মাওলানা সাদ তো আমাকে হাদিয়াও দিয়ে থাকেন। কখনো আতর কখনো বা জমজমের পানি। তার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সুতরাং আমি আহ্বান করবো যেন মাওলানা সাদ দ্রুত বিষয়টি বুঝে সমাধান করে ফেলেন।
আরও পড়ুন: আওরঙ্গবাদ ইজতেমা নিয়ে হিন্দু নারীর উচ্ছসিত অনুভূতি [ভিডিও]