মাওলানা এসএম আরিফুল কাদের
ইখলাস হলো বিশুদ্ধ নিয়ত ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা। ইখলাসের সাথে প্রতিটি কাজের প্রতিদান অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। যা ব্যতীত কোন আমল মা'বুদের নিকট কবুল হয় না।
তাইতো আল্লাহ তা'য়ালা বলেন- তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে। (সূরা বায়্যিনাহ : ৫)
ইখলাসপূর্ণ আমলই আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টির একমাত্র মাধ্যম। রাসুলে আকরাম সা. ইরশাদ করেন-আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক সূরত ও সম্পদের প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি দৃষ্টি করেন। (মিশকাত)
এজন্যই বলা যেতে পারে যে, ইখলাসহীন আমলে শিরক হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-আমি তোমাদের জন্য যেসব বিষয়ের আশংকা করি, তার মধ্যে বিপজ্জনক হলো গোপন শিরক।
সাহাবায়ে কেরাম রা. জিজ্ঞাসা করলেন- গোপন শিরক কি? বিশ্বনবি সা. ইরশাদ করলেন-তা হলো লোক দেখানো ইবাদাত। (ইবনে কাসীর) আর আল্লাহর নিকট এসব ইবাদতের কোন মূল্যই নেই।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, মহান প্রভু বলেন-যদি কোনো ব্যক্তি আমলের মধ্যে কাউকে আমার সাথে শরিক করে, তবে আমি সেই ব্যক্তিকে তার শিরকের উপর সোপর্দ করি। অন্য বর্ণনাতে আছে আমি তার দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যাই। (মিশকাত শরীফ)
ইখলাস না থাকলে আমলের সওয়াব বরবাদ হয়ে যায়। হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসুলে আকরাম সা. ইরশাদ করেন-কিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম যাদের ফয়সালা শোনানো হবে, তন্মধ্যে একজন শহীদ আসবে।
আল্লাহ পাক স্বীয় নিয়ামত স্মরণ করিয়ে বলবেন, ঐ সব নিয়ামতের প্রতিদানে তুমি কি করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য জিহাদ করে শহীদ হয়েছি।
তাকে বলা হবে- তুমি মিথ্যা বলছো। মানবজাতি যেন তোমাকে বীর পুরুষ বা শহীদ বলে ডাকে সে জন্য করেছো। তাতো দুনিয়াতে পূরণ হয়েছে। অতঃপর তাকে শাস্তির আদেশ জানিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তাকে নিম্নমুখি করে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয়ত একদল আলেমগণকে ডেকে নিয়ামতরাজি দেখিয়ে প্রশ্ন করা হবে, ঐ সব নিয়ামতের শুকরিয়ায় তুমি কী আমল করেছো? উত্তরে বলবেন- হে পরওয়ারদিগার!আপনার সন্তুষ্টির জন্যই নিজে কষ্ট করে ইলম শিখে অন্যকে শিখিয়েছি।
বলা হবে, তুমি মিথ্যা বলছো। লোকেরা যেন তোমাকে আলেম বলে ডাকে, সে জন্যই আলেম হয়েছো। তোমার সে উদ্দেশ্য দুনিয়াতে পূরণ হয়েছে। অতঃপর তাকে শাস্তির আদেশ শুনিয়ে আগের মতোই টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয়ত ধনী ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ামতরাজি দেখিয়ে প্রশ্ন করা হবে, ঐ সব নিয়ামতের শুকরিয়ায় তুমি কী আমল করেছো? সে বলবে, ওগো মা'বুদ! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আমার কষ্টার্জিত মাল আপনার রাস্তায় খরচ করেছি।
তাকেও বলা হবে, তুমি মিথ্যা বলছো। তোমাকে যেন লোকেরা দানবীর বলে ডাকে, সেজন্য করেছো। আর তাতো দুনিয়াতেই পূর্ণ হয়েছে। অতঃপর তাকেও শাস্তির আদেশ শুনিয়ে একইভাবে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিশকাত শরীফ)
সবিশেষে বলা যায় যে, প্রত্যেক আমলদারগণের উচিত সকল ইবাদত শুধুমাত্র মহান প্রভুর সন্তুষ্টির জন্যই করা। তাহলে সকল আমল আল্লাহ এবং তাঁর হাবীবের সা. সন্তুষ্টির পাশাপাশি; আল্লাহ পাক কবুল করে পরকালে এর উত্তম বিনিময় প্রদান করবেন।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে সকল কাজ যেন তাঁরই সন্তুষ্টিতে করতে পারি সে তৌফিক দান করুন! আমীন।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পানাহার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা(প্রাইভেট),
করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।
এসএস/