কাউসার লাবীব
“নবী তুমি ফুল বাগানের/রূপ ছড়ানো ফুল
তোমার রূপে ফুলের ওলি/ হয়েছে ব্যাকুল।।
তোমায় পেলে থাকবে না আর/চাওয়ার কিছু বাকি
তোমার প্রেমে পাগল আমি/তুমি বুঝো নাকি ?”
এভাবে লাখো নবীপ্রেমিক তার কলমের আঁচড়ে এঁকেছেন নবী প্রেমের পঙক্তি। এই পঙক্তি লেখার প্রচলন যেমন ছিল নবী যুগে তেমনি বিদ্যমান আছে এখনো।
এখনো সেই আগের মতোই কবিরা তাদের শব্দমালাতে নবীপ্রেমের মালা গাঁথে। মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার মাধুরী দিয়ে সাজায় মদিনাওয়ালার জন্য অকৃত্রিম উদ্যান।
কামলিওয়ালার জন্য গড়ে তোলে প্রণয় মিনার। কাউসারওয়ালার বিয়োগে কাঁদে তাদের হৃদয় ও মন।
বাংলা সাহিত্যে নবী প্রেমের অনেক কবিতা, ছড়া, ছন্দ আর গান রচিত হয়েছে। তবে আমাদের নবী করিম সা. এর পুরো জীবনী ছড়ায় ছড়ায় কেউ গেঁথেছে তা মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এবার নবীপ্রেমের এই দূর্লভ দৃষ্টান্তটি গড়লেন তরুণ কবি আতাউর রহমান আলহাদী।
তরুণ এই কবি মরুর ফুল, উদ্দীপ্ত তরুণ, নিঠুর মক্কাভূমি ও মদীনার পথে নামে চারটি সিরিজ গ্রন্থে নবী করিম সা. এর জন্মের পূর্বের চিত্র থেকে নিয়ে নবীজির ইন্তেকালের পর পর্যন্ত পুরো উপলক্ষগুলো অতুলনীয় এক ছন্দের ছোঁয়ায় তুলে এনেছেন।
আমাদের নবী করিমের জন্মের আগের চিত্রটি তিনি শব্দমালায় গেঁথেছেন এভাবে-
‘মানব জাতির মানবতা/নেই আরবের মাঝে
রক্ত ঝরে জীবন ঝরে/নিত্য সকাল-সাঝে
নগ্ন পূজায় ব্যস্ত সবাই/মদের নেশায় মত্ত
করতো লড়াই আনতে কেড়ে/ঝরণা-কূপের স্বত্ব’
নবীজি সা. এর জন্মচিত্র তিনি গেঁথেছেন এভাবে-
‘এলেন ধরায় বিশ্বনবী/মা আমেনার কোলে
চন্দ্র রবি গ্রহ তারা/সেই খুশিতে দোলে
সপ্তদিনে সরদারেরা/করেন আশির্বাদ
শিশু নবীর নামটি দাদা/রাখেন মুহাম্মাদ’
তিনি মদিনাওয়ালার অভিভাবক হারানোর চিত্রটি গেঁথেছেন এভাবে-
‘মা হারালেন বাপ হারালেন/দাদাও গেলেন চলে
এতিম নবীর শৈশব আজি/শোক-সাগরে দোলে
পিতৃ-মাতা সব হারালেন/যাননি বখে তবু
আরবভূমের নগ্ন হাওয়া/পায়নি তাঁরে কভু
বাল্যবেলা পার হলো তাই/দুঃখভরা মনে
সত্যবাদী জানতো তাঁরে/মক্কার আপনজনে’
কামলিওয়ালার মেরাজের ঘটানার চিত্র তিনি গেঁথেছেন এভাবে-
‘কাবার ধারে শুয়েছিলেন/এক সে রজব রাতে
সেখান থেকে আকসা গেলেন/ঐশী দূতের সাথে
জিবরীল আমিন বলল এসে/আনছি আমি বোরাক
খোদার কাছে যাবেন চড়ে/পেতে রূহের খোরাক’
সবশেষে তিনি কাউসারওয়ালার বিদায়ের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে গাঁথেন-
‘মহান নবী গেলেন চলে/সূর্য যেমন হারায়
দিনের শেষে তিমির যেন/নামল পাড়ায় পাড়ায়
থাকল সবাই বিমূঢ় হয়ে/ঘর-বাড়ি সব ফেলে
কাঁদলো কেহ খোদার ঘরে/অশ্রু চোখের ঢেলে
শোক সাগরে ভাসল সবাই/আরব-আজম বিশ্ব
দীনের মশাল ধরল শেষে/নবীর সেনা-শিষ্য’
এভাবে এই উদীয়মান তরুণ কবি ছন্দে ছন্দে প্রিয়নবীর পুরো জীবনী আলোকপাত করেন।
‘তরুণ এ কবি বেঁচে থাকুক অনেকদিন। আর এভাবে তার পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে দিক নবী প্রেম।’
বইগুলো পড়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আল মুজাহিদী মন্তব্য করেছেন, আমি সবগুলো বইয়ের পাণ্ডুলিপি পড়েছি। লেখক অত্যন্ত আন্তরিকভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শকে অবলোকন করেছে।
ছড়া কাব্যের গ্রন্থটিতে যেমন ইতিহাস উঠে এসেছে তেমন এর সাথে যোগ হয়েছে শিল্পের অনুষঙ্গটিও। স্তবকে স্তবকে শ্রুতিমধুর অবারিত অন্ত্যমিল তার সুপ্ত শিল্পগুণকে ফুটিয়ে তুলেছে।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক সাংবাদিক ও জরুল গবেষক মহিউদ্দিন আকবর লিখেছেন, আমি সম্পূর্ণ বইটি পড়েছি। মুগ্ধ হয়েছি। আমি মনে করি, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাতনির্ভর ছড়া-কাব্যের এ বইটি হতে পারে সন্তানের প্রতি পিতামাতার পক্ষ থেকে একটি শ্রেষ্ঠ উপহার।
চারটি প্রকাশ করেছে রাহনুমা প্রকাশনী। পাওয়া যাবে বাংলাবাজারসহ দেশের অভিজাত লাইব্রেরি বা রকমারিতে অর্ডার করে।