আওয়ার ইসলাম: বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সর্বশেষ বড় ধরনের সংস্কার হয়েছিল ২০১১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট সামনে রেখে। ওই সময় প্রায় ৩২ কোটি টাকার সংস্কারকাজ হয়েছিল দেশের প্রধান এ স্টেডিয়ামে। এর আগে ১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বড় ধরনের সংস্কার হয়েছিল স্টেডিয়ামটি।
২০০০ সালের অভিষেক টেস্ট, ২০১০ সালের সাফ ফুটবল, ২০১৩ সালে আজেন্টিনা নাইজেরিয়া ম্যাচের আগেও টুকটাক কাজ হয়েছে বঙ্গবন্ধুতে। এবার স্টেডিয়ামটিতে আবার বড় ধরনের সংস্কারকাজ করতে যাচ্ছে সরকার। তবে এবার কোনো টুর্নামেন্ট উপলক্ষে নয়, দেশের প্রধান ক্রীড়া ভেন্যু বলেই নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামকে।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কারকাজের ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) তৈরি শুরু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ডিপিপি তৈরি করে পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে, তারপর অনুমোদন দেবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সরকারের বাৎসরিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এডিপি) এ প্রজেক্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরের জুনে সংস্কারকাজ শুরু করতে চাইছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এনএসসি। শেষ হবে আগামী বছরের শেষের দিকে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করতে পারবে বলে আশা করছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে চতুর্থ দফা বড় পরিসরে সংস্কার হবে স্টেডিয়ামটির।
স্টেডিয়ামটি ১৯৫৪ সালে তৈরি হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে প্রথম ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছিল। তখন ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ড বসানো হয়েছিল। কারণ, তখন বাংলাদেশে প্রথম নক-আউট বিশ্বকাপ ক্রিকেট হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জন্য গ্যালারিতে চেয়ার, লিফট, ভিআইপি বক্স নতুনভাবে করা হয়েছিল।
২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এই স্টেডিয়ামে হয়েছিল। সবমিলে সে সময়ে দুবারের সংস্কারের জন্য সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছিল ১০৯ কোটি টাকা। শেষবার সংস্কারে নকশার অনেক পরিবর্তন করা হয়েছিল। স্টেডিয়ামের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে বেজ থেকে শুরু করে, পিলার ও বিমকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছিল।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রবল বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছিল প্রেসবক্স। পরে সেটা নতুন করে তৈরি করা হয়। মাঝে অনেক সময় কেটে গেছে, ৬৪ বছরের বুড়ো স্টেডিয়ামটি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে।
এখন আবারো সংস্কারের জন্য নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। সংস্কারের জন্য প্রায় ৯২ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। চেয়ার বসানোর পর গ্যালারির দর্শক ধারণক্ষমতা কমে গেছে অনেক।
এখন গ্যালারিতে চেয়ার ১৯ হাজারের কিছু বেশি। স্টেডিয়ামটি এখন ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে ফুটবল ও অ্যাথলেটিক। যে খেলাই হোক-সিংহভাগ আসনই থাকে ফাঁকা। তাহলে কেন গ্যালারিতে বসানো হচ্ছে শেড আর উন্নতমানের চেয়ার। স্টেডিয়ামের মূল কাঠামো ঠিক রেখেই করা হচ্ছে এ সংস্কারযজ্ঞ।
যেখানে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে পুরো গ্যালারিতে শেড বসাতে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দিল মোহাম্মদ জানান, ‘পুরো সংস্কারকাজের জন্য ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকার মতো, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০ থেকে ২২ কোটি টাকা লাগবে গ্যালারিতে শেড বসাতে। চেয়ার বসাতে লাগবে ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা। ফ্লাডলাইট পরিবর্তন করতে লাগবে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। আর অ্যাথলেটিক ট্র্যাক স্থাপনের জন্য ১৫ কোটি টাকার মতো।’
গ্যালারি ও ভিআইপির চেয়ার সরিয়ে সেখানে বসানো হবে উন্নতমানের নতুন চেয়ার। এর মধ্যে ভিআইপি গ্যালারিতে বসানো হবে ফোল্ডিং চেয়ার। বদলে ফেলা হবে স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট। তবে ফ্লাডলাইটের টাওয়ার অপরিবর্তিত রেখে শুধু বদলে ফেলা হবে বাতি। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো স্টেডিয়ামে আলো ছড়াবে এলইডি বাতি। এর মাধ্যমে আলো ও সৌন্দর্য দুটিই বাড়বে। পাকিস্তান সরকার এ স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করেছিল ক্রিকেট খেলার জন্য।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম বিশ্বের একমাত্র স্টেডিয়াম যেটিতে দুটি ভিন্ন দেশের উদ্বোধনী টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। দুটি টেস্ট ম্যাচেই প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। প্রথম ১৯৫৪-৫৫ সালে তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তান দল ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলার মাধ্যমে টেস্ট অঙ্গনে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে এই স্টেডিয়ামে ৭টি টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল।
এক সময় স্টেডিয়ামে ৮০ হাজার লোক খেলা দেখত। চেয়ার বসানোতে এখন ধারণ ক্ষমতা প্রায় অর্ধেক। ১৯৯৮ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে ছিল। ওই সময় ব্যাপক সংস্কার করা হয় প্রথম নক-আউট বিশ্বকাপের জন্য। সে সময় ৪র্থ তলায় তৈরি করা হয়েছিল করপোরেট বক্স। যা এখন অযত্নে সব নষ্ট হয়ে গেছে।
কোটি কোটি টাকা খরচ করে তখন পশ্চিম দিকে বসানো হয়েছিল ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ড। ২০০৫ সালে ক্রিকেট বোর্ড মিরপুরে চলে গেলে তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ফুটবলও সেই ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ডটি ব্যবহার করেনি। রাতের অন্ধকারে ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ডটির কী হয়েছিল কেউ জানতেও পারেনি। ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, এই স্টেডিয়ামকে সংস্কারের নামে প্রচুর অর্থ অপচয়ও হচ্ছে।
তাই আর সংস্কার না করে নতুনভাবে তৈরি করলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নয়নাভিরাম স্টেডিয়াম হবে। সরকারেরও উচিত বিষয়টি নিয়ে ভাবা। সংস্কারে আর ব্যয় না করে খেলার উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
/টিএ