শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কোন দেশে শরণার্থী সংখ্যা কত?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ শোয়াইব: বিশ্বে প্রায় দেশেই শরণার্থী রয়েছেন। সেসব দেশে মানবেতর জীবন যাপন করছেন সংঘর্ষ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার শিকার এই শরণার্থীরা।

নিজ দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছেন তারা নিরাপদ জীবনের আশায়।তবে সবর্ত্রই অবহেলার শিকার হচ্ছেন তারা। আসুন জেনে নিউ, কোন দেশে শরণার্থীর সংখ্যা কত?

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে ৬৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বাধ্য হয়েছে নিজেদের দেশ ছেড়ে যেতে। তাদের মধ্যে ২২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ শরণার্থীর জীবন কাটাচ্ছেন। এক কোটি মানুষ রাষ্ট্রহীন অবস্থায় জীবন যাপন করছেন।

অধিকাংশ মানুষ এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে ইউরোপ ‍ও উত্তর আমেরিকায় পাড়ি দিচ্ছে। জাতিসংঘের মতে, ৫৫ শতাংশ শরণার্থী আসছে সিরিয়া, আফগানিস্তান ও দক্ষিণ সুদান থেকে।

সবচেয়ে বেশি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক। আশ্রয় খুঁজতে সবচেয়ে বেশি আবেদন পেয়েছে জার্মান সরকার। এরপর তালিকায় আছে হাঙ্গেরি, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, ইতালি এবং ফ্রান্স।

সিরিয়ায় অর্ধেকের বেশি মানুষ নিজ এলাকা থেকে বিতাড়িত। গত ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালে অধিকাংশ শরণার্থীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে ইউরোপে অভিবাসনের জন্য।

২০১৬ সালে জার্মানিতে শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ জনে। এদের মধ্যে অধিকাংশই এসেছে সিরিয়া থেকে। প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার একশত জন। এবং বাকিরা এসেছে ইরাক, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, ইরান ও তুরস্ক থেকে।

সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২০১৬ সালে মোট ছয় ৫০ হাজার ৬০০ জন শরণার্থী ইথিওপিয়া (৩৯ হাজার ৯০০ জন), মিসর (১৩ হাজার ৮০০ জন), যুক্তরাজ্য (সাত হাজার ৩০০ জন), উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ফ্রান্সে (সাতা হাজার জন) পাড়ি দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগে মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণের অভিবাসী ও শরণার্থী সেদেশে এসেছিল। গত দুই বছরে এর সংখ্যা কমে ৯ শতাংশে পরিণত হয়।

২০০৭ সাল থেকে সেখানে সাত লাখ আট হাজার ৩৫৪ জন বার্মিজ যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। তবে গত দুই বছরে ইরাক, সিরিয়া ও সোমালিয়া থেকে শরণার্থীরা আসছেন সেখানে। প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো থেকেও সেখানে আসছে শরণার্থীরা।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয় উন্নত জীবনের উদ্দেশ্যে কানাডায় পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‍মুসলিম অভিবাসন নিয়ে কঠোর নীতি ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেকে কানাডায় পাড়ি দেন।

শুধু শরণার্থী নয় অভিবাসী হয়েও কানাডায় থাকছেন অনেকে। ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সেখানে তিন লাখ ২০ হাজার ৯৩২ জন অভিবাসী এসেছে। এদের অধিকাংশই আসছে দক্ষিণ এশিয়া, চীন ও ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ফ্রান্সেও ভিড় জমাচ্ছে শরণার্থীরা। ফ্রান্সের ক্যালাইস নামের শরণার্থী শিবির গত বছর উচ্ছেদ করে দেশটির সরকার। সেখানে প্রায় সাত হাজার ৩৯৭ জন শরণার্থী বাস করতেন।

অধিকাংশ শরণার্থীরা ইরাকের কুর্দিরা। অধিকাংশ শরণার্থীরা এসেছেন আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে। শুধু ক্যালাইসে নয় ফ্রান্সে এমন শরণার্থী শিবির আরও রয়েছে।

১৯৯৯ সাল থেকে সেখানে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ভিড় করছে। এদের মধ্যে স্যানগেট ও অন্যান্য জাঙ্গল ক্যাম্প রয়েছে।

২০১৫ থেকে ২০১৬ সালে দশ লাখেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাশীরা ইউরোপে পাড়ি দিয়েছিল। এদের অধিকাংশ গ্রিস ও ইতালিতে আসে। অভিবাসন প্রত্যাশীদের অধিকাংশই সিরীয়, আফগান ও ইরাকিরা।

এদের মধ্যে দুই হাজার মানুষ নৌকাডুবিতে মারা যান। অভিবাসীদের অস্থায়ীভাবে স্থান পায় গ্রিস ও ইতালিতে।

ইউরোপের বলকান অঞ্চল, দক্ষিণ সুদানের যুদ্ধ, সিরিয়া যুদ্ধ, আফগানিস্তানের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, কঙ্গো, সোমালিয়া, তিউনিশিয়া, নাইজেরিয়া ও ইরিত্রিয়ায় দুর্ভিক্ষ ও সাংঘর্ষিক পরিবেশ এ অঞ্চলের মানুষদের বাধ্য করেছে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে।

সাম্প্রতিককালে অভিবাসী ও শরণার্থী সংকট প্রকট রূপ ধারন করেছে। তবে অতীতেও মানুষ বিভিন্ন কারণে শরণার্থী হয়েছিল। আয়ারল্যান্ডে যুদ্ধের সময় অনেক আইরিশ যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ জীবনের আশায় আশ্রয় নেন। কিউবায় যখন ফিদেল কাস্ত্রো সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াই করছিলেন তখন অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাড়ি জমান।

ইউরোপ-আমেরিকা পাড়ি দেওয়া শরণার্থীরা কখনো কখনো নাগরিকত্ব পান। তবে অধিকাংশ সময় তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা হয়। ক্যাম্পে তাঁবু টানিয়ে রাখা হয়।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএসএইচসিআর, আশ্রয় দেয়া দেশের সরকার, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এই শরণার্থীদের বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা করে থাকে।

কিছুদিন আগে অভিযোগ এসেছিল আশ্রয় নেয়া শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার অধিকার থেকে। তাদের ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অনেক দেশের সরকার শরণার্থীদের শিক্ষা গ্রহনের সুযোগও করে দিয়েছেন।

অনেকেই আছেন যারা শরণার্থী হিসেবে অন্য দেশে আশ্রয় নিলেও ভবিষ্যতে সারাবিশ্বে দ্যুতি ছড়িয়েছেন। এমনই একজন হলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি ১৯৩৮ সালে জার্মানি থেকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন।

বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস সারাজীবন রাষ্ট্রহীন অবস্থায় কাটিয়েছিলেন। ১৮৪৮ সালে তিনি প্রুশিয়ার নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করেন এবং ফ্রান্স থেকেও তাঁকে বহিস্কার করা হয়।

এমনই বিখ্যাত মানুষ হলেন সিগমন্ড ফ্রয়েড, সের্গেই ব্রিন, আলবার্ট আইনস্টাইন, জ্যাকি চ্যান, আনা ফ্র্যাংক, বব মার্লে, ভ্লাদিমির লেনিন, এড মিলিব্যান্ড, এডওয়ার্ড স্নোডেন। বিখ্যাত ফরাসি ফুটবলার জিনেদিন জিদানের পরিবার আলজেরিয়া গৃহযুদ্ধের সময় ফ্রান্সে আসেন।

যত শরণার্থী ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিল সে অনুযায়ী প্রত্যাশা তাদের পূরণ হচ্ছে না। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলো কঠোর নীতি গ্রহণ করছে। তাই ভবিষ্যতে শরণার্থীদের ভাগ্যে কী আছে তা নিয়ে সকলেই শঙ্কিত।

সূত্র: ইন্টারনেট ও বিভিন্ন আরবি পত্রিকা

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ