মুহিউদ্দিন আতামান
তুরস্কের কলামিস্ট
সিরিয়ায় মার্কিন বিদেশ-নীতি কখনই টেকসই ছিল না। এখনও তার কোনো স্থিরতা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলা-কৌশলগুলির প্রতি ঘনিষ্ঠভাবে তাকালেই একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে দেশটির অনুসৃত নীতিতে অনেক সমস্যা, বিবাদ এবং বৈপরিত্য রয়েছে।
এখন বড় সমস্যা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার পিকেকে (তুরস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দি সংগঠন) পার্টিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।
একই সময়ে, বিভিন্ন আমেরিকান প্রতিষ্ঠান, আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা এবং অন্যভাবে স্বীকার করে যে পিপলস প্রোটেকশন ইউনিট (ওআইপিজি) পি কে কে এর অধিভুক্ত একটি সংগঠন।
একুশে বইমেলার যে কোনো বই ঘরে বসে কিনুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বলা হচ্ছে ওআইপিজি এবং পিকেকের জন্য মার্কিন সমর্থন নিয়ে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে আলোচনা করা হবে।
যুক্তিবাদী আমেরিকান রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক এবং সামরিক কর্মকর্তারা পরে একসময় অনুভব করবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের মৈত্রিকে ছিন্ন করে দিয়ে বিশেষভাবে দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ন্যাটো মিত্র- তুরস্ককে বিচ্ছিন্ন করার বিনিময়েই ওআইপিজিকে সমর্থন করছে।
১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ন্যাটোর একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি আঙ্কারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতিতে নানাভাবে অবদান রেখে আসছে। তাছাড়া, আল-কায়েদা ও তালেবানের বিরুদ্ধে আমেরিকান যুদ্ধের সমর্থনে তুরস্ক আফগানিস্তানে সামরিক বাহিনীও পাঠায়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের জাতীয় স্বার্থের জন্য ওআইপিজি হুমকির ব্যাপারে তার উদাসীনতাই শুধু অব্যাহত রাখছে না, বরং তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও সরবরাহ করছে। যদিও ওআইপিজির সহযোগি পিকেক চার দশক ধরে তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
জাতিসংঘের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করার পর, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাটোর অস্তিত্ব সম্পর্কেও প্রশ্ন করতে শুরু করেন। জোটের দুই সদস্যের মধ্যে পারষ্পরিক আস্থা-বিশ্বাসকে নির্মূল করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ন্যাটো জোটের অস্ত্বিত্বের যুক্তিকেই মূলত প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
এসব ঘটনার কারণে তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া বেশ সময়সাপেক্ষ বলে মনে হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় তিক্ত বিষয় হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তার একমাত্র আনঅফিসিয়াল সহযোগীকে আক্রমণ না করতে তুরস্ককে অনুরোধ জানাচ্ছে। আর এটি বিবেচনা করছে না যে এর মাধ্যমে তার আনুষ্ঠানিক মিত্র তুরস্কের হুমকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে।
সিরিয়ার সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সক্রিয় সহযোগী রয়েছে। এর মধ্যে তার আনুষ্ঠানিক সহযোগী তুরস্কের বিরুদ্ধে ডিফেক্টো সহযোগী ওআইপিজিকে সমর্থন করছে।
সুতরাং, এর মাধ্যমে দেশটি বস্তুত তার বন্ধুর শত্রুকে সমর্থন করছে। ইউপিজিকে সমর্থন করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্থায়ী মিত্র তুরস্ককে পরিত্যাগ করে ক্ষণস্থায়ী অভিনেতাকে বেছে নিচ্ছে।
এটি যেন এমন একটি বিষয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আঞ্চলিক নীতির কৌশলগত গভীরতা হারিয়ে ফেলেছে।
উপরন্তু, যুক্তরাষ্ট্র বার বার বলছে ওআইপিজির প্রতি তার সমর্থন অস্থায়ী। আইএস তার বেশিরভাগ এলাকা হারালেও যুক্তরাষ্ট্র এই সমর্থন চালিয়েই যাচ্ছে এবং ওআইপিজির জন্য তার সমর্থনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করছে।
ওআইপিজিকে দিয়ে একটি সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমেরিকার অভিপ্রায় এখনও অন্য এক রহস্য হয়ে আছে।
ওআইপিজির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন একটি প্রধান বৈপরিত্য তৈরি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, ওআইপিজি হলো তার একমাত্র মিত্র যে আইএস এর বিরুদ্ধে তার সংগ্রামে সহযোগিতা করছে।
আইএসের তথ্যমন্ত্রী তুরস্কে আটক
এতে প্রথম প্যারাডক্স হলো একটি সংগঠনকে অন্য একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে দেশটি। সবচেয়ে বড় কথা হলো তুরস্ক এবং অনেক আমেরিকান ও ইউরোপীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক পিকেকেকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে বিবেচনা করে।
দ্বিতীয় প্যারাডক্স হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় বাশার আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং ইরানের প্রতি তার সাংঘর্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছে।
অথচ ইরান ও আসাদ সরকার উভয় পক্ষই সিরিয়ায় তুরস্কের বিরুদ্ধে ওআইপিজিকে সাহায্য করছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুর বন্ধুদেরই মূলত সাহায্য করছে।
সর্বোপরি, এটা দেখা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে নীতি বিবাদ বিভেদ এবং বৈপরিত্যের উপর নির্ভর করে আবর্তিত হচ্ছে। ওআইপিজির হুমকি বিবেচনায় আনা হলে স্পষ্ট হবে স্বল্প মেয়াদে তুরস্কের উপর এই নীতিটি প্রভাব ফেললেও দীর্ঘ মেয়াদে তুর্কি জাতীয় নিরাপত্তার উপর এর সরাসরি প্রভাব থাকবে না।
অথচ এ ধরনের একটি নীতির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক ক্ষেত্রে দিন দিন নিজেকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলছে।
তুরস্কের দৈনিক সাবাহ থেকে অনুবাদ মুহাম্মাদ শোয়াইব