এস এম মাহমুদ হাসান
দৈনিক কালের কণ্ঠে একটি রিপোর্ট পড়ে ভীষণ অবাক ও বিরক্ত হলাম। রিপোর্টটির শিরোনাম ‘কাপলদের জন্য ক্লোজ-আপ কাছে আসার ২০০ ফ্রি রিকশা।’ খবরের বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন ভালোবাসা দিবস কেন্দ্র করে ক্লোজ আপ এবার দেশের বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাপলদের আগামী ৯ তারিখ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ফ্রি রিকশা রাইডের ব্যবস্থা করেছে।
এর অংশ হিসেবে দেশের কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি রিকশা রাইডের একটি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।’
ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে, নির্জন রাস্তায় যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের সেই বিষয়ে বেশ তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। মূলত যারা বৈধভাবে কোন সম্পর্কে জড়ানোর সুযোগ পায়না, অর্থাৎ যাদের সম্পর্ক আইনসিদ্ধ নয়, তারাই এইসব রিকশায় হুড তোলে বা বিভিন্ন নির্জন স্থানে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। এই কাজগুলো আসলে ভীষণ অনৈতিক, ভীষণ পরিত্যাজ্য। কোন সন্তান তার বাবা-মাকে বলে এই ধরনের কাজ করতে পারেনা। হয়তো ক্লাসে যাওয়া, কিংবা কোচিং এ যাওয়া অথবা টিউশনিতে যাওয়ার নাম করে তরুন-তরুনী বিশেষ করে টিনেজাররা রিকশায় ঘুরতে বের হয়।
অনেক ক্ষেত্রে রিকশাওয়ালারাও বাড়তি টাকার লোভে প্রেমিক যুগলকে বিশেষ ধরনের সুবিধাও দিয়ে থাকেন। একই রকমের সার্ভিস চালু আছে বিভিন্ন লেকে, বা নদীতে, যেখানে নৌকার ভেতরেও প্রেমিক-প্রেমিকারা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হন। যারা প্রেম করছেন তারা সবাই কি পরবর্তীতে বিয়ে করেন, করতে পারেন? যদি না করেন তাহলে বিয়ের আগে একজন মানুষের সাথে এভাবে অন্তরঙ্গভাবে মেশার মাধ্যমে তিনি পরবর্তীতে তার বিবাহের পার্টনারের সাথে কি প্রতারনা করছেন না? তাছাড়া আমাদের ধর্ম বা সমাজ ব্যবস্থা কি বিয়ের আগে কোন ধরনের শারীরিক সম্পর্ককে বা এই ধরনের মেলামেশাকে বৈধতা দেয়? সরকার বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কি?
নৈতিকতার পৃষ্ঠপোষকতা করা নাকি অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেয়া? ক্লোজ-আপ কোম্পানী বা তাদের মাদার অর্গানেইজেশন ইউনিলিভার সুন্দরী প্রতিযোগিতা করে নারীদেরকে পণ্য বানিয়েছে অনেক আগেই; অন্যদিকে ক্লোজ-আপ গত কয়েক বছর ধরে নিয়েছে ভিন্ন কৌশল। তারা তথাকথিত কাছে আসার নাটকের নামে বেহায়াপনার নিকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছে। তথাকথিত ভালবাসা দিবস আসলে এদের নোংরামী যেন চুড়ান্ত অবস্থায় পৌছায়। বিগত বেশ কয়েকটি ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে টিভিতে ‘কাছে আসার গল্প’ শিরোনামে নাটক প্রচার করা হয়েছে- যার স্পন্সর ছিল ক্লোজ আপ।
এর মধ্যে অনেকগুলোই হিন্দু মুসলিম প্রেম, পরকীয়া প্রেম- এই সব বিষয়ে নির্মিত হয় যা দর্শক মহলে মারাত্মকভাবে সমালোচিত ও নিন্দিত হয়। কিন্তু তাতে ক্লোজ আপ কোম্পানীর কিছু যায় আসেনা- বরং তারা যেন এতে আরো উজ্জীবিত হয়।
ক্লোজ আপের যেহেতু টাকা পয়সার অভাব নেই, তাই এই নাটকগুলো তারা একাধিক চ্যানেলেও একই সময়ে প্রচার করতে পারে। অর্থাৎ চ্যানেলের চাংক কিনে নিয়ে তারা বিজ্ঞাপন হিসেবে নাটকগুলোকে প্রচার করে। ফলে বাস্তবতা হলো, জিনিষ খারাপ কিন্তু প্রচার-প্রচারনা হচ্ছে বেশী। এবার ক্লোজ আপ যেন আরো নীচে নেমেছে। শুধু নাটক নির্মাণ করে বা অভিনেতা অভিনেত্রীদেরকে কাছে এনে তাদের খায়েশ মিটছেনা।
এবার তারা সাধারন ছাত্রছাত্রীদের টার্গেট করেছে। ক্যাম্পাসগুলো যেন প্রেমমেলায় পরিনত হয়, তাই প্রেমকে একটা জায়েজ ও গ্রহনযোগ্য বিষয়ে পরিনত করার চেষ্টা করছে কোম্পনিটি। বাংলাদেশের নাটকে লিটনের ফ্ল্যাট কথাটি এখন বহুল ব্যবহৃত। অর্থাৎ বিবাহ বহির্ভুত একটি দম্পতি অবৈধ সম্পর্ক গড়ার জন্য অন্য আরেকজনের খালি বাসায় যাতায়াত করাটাও এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
যেমন লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার নামক সুন্দরী প্রতিযোগিতার ট্যাগ লাইনে দেয়া হয়েছে ‘দেখিয়ে দাও, অদেখা তোমার।’ অর্থাৎ লাজ শরমের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে শরীর এবং শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোকে দেখিয়ে দেয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। নগ্নভাবে এসব বাজে কাজ করার পরও আমাদের সরকার বা প্রশাসন এই কোম্পানীটির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা, এটা চিন্তা করলেও কষ্ট হয়। যেই দেশে ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী হিসেবে বসবাস করে, যে দেশে দ্রব্যমুলের উর্ধ্বগতিতে সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, সেখানে এত পয়সা খরচ করে একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানী মানুষকে নোংরা কাজে জড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে- তা ভাবা যায়না।
অভিভাবক ও সন্তান-উভয়েরই সতর্ক ও সাবধান হওয়া উচিত এসব ঘৃন্য কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। সন্তানেরা এইসব দিনগুলোতে কি করে, কোথায় যায়- অভিভাবকদের সেই ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো উচিত।
/এটি