যিয়াদ বিন সাঈদ: তাকিব তৌফিক। সমগ্র চেহারায় তারুণ্যের স্পষ্ট আভা লেপ্টে থাকা এক নতুন কিংবা অল্প পুরোনো উপন্যাসিকের নাম। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ তে আসছে তার প্রথম সৃষ্টি ‘এপিলেপটিক হায়দার’।
উপন্যাসের এ ক্রমধারায় ভিন্ন সুরে যোগ করেছেন তিনি আরও একটি চমৎকার উপন্যাস। যা ঘুণপোকায় তিরতির করে খেয়ে ফেলা এ সমাজকে ভাবিয়ে তুলবে। এ সমাজের সবকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নাড়া দিয়ে দেবে। ঘৃণ্যতার ছায়ায় আবৃত এ সমাজের মানুষ যখন শ্রেণিবৈষম্যতা লালন করে হেঁটে চলছে কুপথে, ঠিক তখনই লেখক তাকিব তৌফিক নিয়ে এলেন ‘এপিলেপটিক হায়দার’ নামে সজাগ করবার মত একটি গ্রন্থ।
উপন্যাসের মূল চরিত্র ‘হায়দার’ মূলত এপিলেপসি রোগে আক্রান্ত। কষ্টদায়ক এ রোগটির জন্যেই কেবল সমাজের মানুষ তাকে ভিন্ন চোখে দেখে। অন্য চোখে তাকায়। সে অতিষ্ট হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকতা ফিরে পেতে চাইলেও সে পারেনা। মা, পরিবার, গ্রাম, সবকিছুই তার খুব দূরে।
মা নাহারখাতুন চায়না, তার ছেলেকে নিয়ে লোকে কটু কথা বলুক। হাসুক। তাই সে ছেলেকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সমাজের চোখে ভিন্ন এ হায়দার ঢাকায় এসেও বেশ সুবিধা করতে পারেনা। চাকরি-বাকরি নেই। অসহায় জীবনের দিকে সে ঢুলে পড়তে থাকে ক্রমশ। নিজের অসহায়ত্বকে ভুলে যেতে পারলেও সে ভুলে থাকতে পারেনা তার মা কিংবা পরিবার পরিজনের কথা। কিন্তু অবক্ষয়ে ভরা এ সমাজে তার এখন কী-ইবা করার আছে?
লেখক এখানে স্পষ্টতই একজন মৃগীরোগী হায়দারের আলাদা হয়ে যাওয়া জীবনের গল্প শোনাতে চেয়েছেন। এ রোগ হায়দারকে আক্রান্ত করবার আগে দিব্যি সে ছুটে বেড়াতো তার চিরচেনা গ্রামের পথ কিংবা মাঠে মাঠে। প্রায়শই হেসেখেলে কাটিয়ে দিতো পুরোটা সময়। অথচ একটিমাত্র রোগ।
শুধু এ রোগের জন্যেই তার জীবনের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে অন্য এবং ভিন্ন এক স্রোতে।
আধুনিকতার ছোবলে চেতনাকে নিস্পৃশ করে দেয়া ‘আমরা’ই মূলত এর জন্যে দায়ী। সামাজিক স্টিগমা আমাদের কতটা নিচু এবং কতটা পেছনে ফেলে দিয়েছে তাই লেখক বোঝাতে চেয়েছেন ঝরঝরে গদ্যের নীরব ঝঙ্কারে।
লেখক তাকিব তৌফিক আরও বুঝিয়েছেন মানুষ কীভাবে আত্মশুদ্ধির পথে ফিরে আসতে পারে। কীভাবে বর্ণিল করতে পারে জীবন। এর জন্যে তিনি বর্ণনা করেছেন এক অলৌকিক দুঃস্বপ্নের। যাকে সত্য সুন্দরের পূর্ভাবাসও বলা যেতে পারে।
বইঃ এপিলেপটিক হায়দার। লেখকঃ তাকিব তৌফিক
প্রকাশকঃ নালন্দা। প্রচ্ছদঃ হিমেল হক
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০