আওয়ার ইসলাম: মাছ বলতেই পানিতে বসবাস করা জীব আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে। তাই জলের রাজ্যে মাছের আধিপত্য স্বীকার করে নিতেই হবে। মাছ আকাশে উড়তে পারে! কথাটি শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি।
উড়তে পাড়া মাছকে উরুক্কু বা উড়ন্ত মাছ বলে। এরা পাখিদের মতো আকাশে উড়েও বেড়াতে পারে। শত্রুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাগরের পানির ওপরে চলে যায় ও সাগরের ওপরে ডানা মেলে উড়তে থাকে এ ধরনের বিশেষ প্রজাতির মাছ।
বিপদ দেখলেই এরা পাখা মেলে পানির ওপরের দিকে ওঠে আসে। আর এভাবেই শত্রুর হাত থেকে সে নিজের জীবন বাঁচায়।
উড়ন্ত মাছ পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডল অঞ্চলগুলোর সাগরে বসবাস করে। এ জাতের মাছ বার্বাডোসে বেশি পাওয়ার কারণে দেশটিকে বলা হয় 'উড়ন্ত-মাছের রাজ্য'। সেই উড়ন্ত মাছ এবার আটকা পড়েছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় জেলেদের জালে।
গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলে মন্নান হোসেনের জালে এ মাছ আটকা পড়ে। মন্নান ওই ইউনিয়নের মধ্য চরমোন্তাজ গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় জেলেরা জানায়, বিরল প্রজাতির পাখাওলা মাছ ধরা পরার খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই ইউনিয়নের স্লুইস বাজারে মাছটি একনজর দেখতে ভিড় জমায় কয়েক শ' লোক।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা, ওয়ার্ল্ডফিসের পটুয়াখালীর গবেষণা সহকারী মীর মোহাম্মাদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, সাগরের বুকে যে মাছের খেলা দেখে জেলেদের অবাক হয়ে সময় কাটে, তাদের নাম উড়ন্ত মাছ। বাংলাদেশেও এই উড়ন্ত মাছের দুটি প্রজাতির একটি। পর্যাবেক্ষণ না করে বলা কঠিন এটি কোন প্রজাতির।
তিনি বলেন, এই অদ্ভূত মাছগুলো বক্ষ-পাখনা ঝাপটে ও মেলে দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ৩৫ মাইল বেগে আকাশে উড়তে পারে। আর এরা পানির নিচ থেকে ঝাঁক বেঁধে, পানির উপরে উঠে এসে উড়তে থাকে। পাখির মতো ডানা মেলে সমুদ্রের পানির বেশ কয়েক ফুট উপর দিয়ে এরা উড়ে বেড়ায়।
মাছটির উড়ে বেড়ানোর পদ্ধতিটাও বেশ চমৎকার। প্রথমে তার লেজের প্রচন্ড শক্তি দিয়ে নিজেকে পানির উপরে ছুড়ে দেয়। তার পর পাখনার ঝাপটানি দিয়ে উড়ে যায় বাতাসে। কিন্তু এই মাছগুলো নিছক মনের আনন্দে বাতাসে উড়ে বেড়ায় না।
কেবল শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলেই, জীবন বাঁচানোর জন্য এরা, পানির নিচে উঠে বাতাসে উড়ে বেড়ায়। এরা অমেরুদন্ডী প্রাণী। এদের শরীরে প্রচুর আঁশ থাকে। এই ফ্লাইং ফিসেরা সাধারণত ছোটমাছ খায়।
ফ্লাইং ফিসেরা পানি থেকে প্রায় ২০ ফিট উচু দিয়ে উড়তে পারে। গতি ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত একটানা প্রায় ২০০ মিটার দ–রত্ব পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে তারা। এই মাছটির পক্ষে উড়ে বেড়ানো সম্ভব হয়েছে তার বিশেষ ধরনের পাখির মতো বক্ষস্থল ও ডানার কারণে।
প্রথমে মাছটি সাগরের পৃষ্ঠে লাফ দিয়ে ওঠে। এরপর চোখের পলকে সাগরের পৃষ্ঠে লেজ নাড়িয়ে পাখির মতো উড়তে উড়তে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। নিচে নামার সময় পাখির মতো ধীরে ধীরে ডানা দুটো ভাঁজ করে সাগরের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ও একুয়াকালচার অনুষদের অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবিব কালের কণ্ঠকে বলেন, উড়ুক্কু মাছের দৈর্ঘ্য ৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। পৃথিবীর সব সমুদ্রেই এদের দেখতে পাওয়া যায়। তবে এরা সংখ্যায় খুবই কম। তাই এদের খুব কমই দেখা যায়।
পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডল অঞ্চলগুলোর সাগরে উড়ন্ত মাছের বেশি দেখা মেলে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৪ প্রজাতির উড়ন্ত মাছের খোঁজ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও এই উড়ন্ত মাছের দুটি গণ বা enera-এর তিনটি প্রজাতি রয়েছে।
রাঙ্গাবালীতে যে মাছটি ধরা পড়েছে, তার পাখনা কালো। হয়ত আবহাওয়ার কারনে কালো হতে পারে। সাধারণত এই ধরনের মাছ এর আগে দেখা যায়নি।
সুত্র: কালের কন্ঠ
এসএস/